মোনায়েম সরকার
২৪ এপ্রিল ভোরে ঘুম ভাঙতেই কেন যেন মনে পড়ল খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ডের কথা। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ড থেকে আটজন রাজবন্দীকে কনডেম সেল বা ফাঁসির আসামির নির্জন সেলে স্থানান্তরিত করার সময় রাজনৈতিক বন্দীরা জেলখানায় ডিভিশন না পাওয়ায় প্রতিবাদ করেন। এ ছাড়া ভালো খাবার ঠিকমতো সরবরাহ না করা, কারাবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ না দেওয়া এবং খাপড়া ওয়ার্ডে ১১ জন রাজবন্দীকে জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন জেলবন্দীরা। জেলার ডব্লিউ এফ বিলের নির্দেশে চারদিকে জানালাবিশিষ্ট একটি ঘরে আবদ্ধ করে বাইরে থেকে ৪০ জন বন্দীর ওপর নির্মমভাবে গুলি চালায় কারারক্ষীরা। এর ফলে শহীদ হন সাতজন। বাকি বন্দীরা মারা না গেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। পুলিশ রক্তাপ্লুত বন্দীদের পুনরায় লাঠিপেটা করে। পাকিস্তানে কারাগারের ভেতরে রাজনৈতিক বন্দীদের হত্যার এই প্রথম ঘটনাটি নিয়ে যখন ভাবছিলাম, তখনই টেলিফোনে পেলাম আরেকটি দুঃসংবাদ। আমার এক শুভানুধ্যায়ী ফোনের ওদিক থেকে বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, পঙ্কজদা আর নেই। খবরটি শুনে আমারও মনটা ভারী হয়ে উঠল। পঙ্কজদা, মানে পঙ্কজ ভট্টাচার্য আমারও দীর্ঘদিনের পরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী।
পঙ্কজদার সঙ্গে কত স্মৃতি, কত ঘটনার কথাই মনের পর্দায় একে একে ভেসে উঠছে। তিনি অসুস্থ জানতাম, কিন্তু এভাবে চলে যাবেন, সে জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৬৩ সালে। পঙ্কজদা তখনই ছাত্র ইউনিয়নের বড় নেতা। সেই থেকে পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা এবং একসঙ্গে আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক সমাজ গড়ার সংগ্রামে বহু পথ হেঁটেছি।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন
কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য গত শতকের ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে আমৃত্যু দেশমাতৃকার একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবেই পরিচিতি অর্জন করেছেন।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। ন্যাপে তখন অনেক সংগ্রামী ও প্রবীণ নেতা থাকা সত্ত্বেও পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় দলের মধ্যে সবাই উৎফুল্ল হয়েছিলেন, তা হয়তো নয়। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য তাঁর নিষ্ঠা, সততা ও কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুততম সময়েই দলের মধ্যে নিজের অবস্থান সংহত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
পঙ্কজদার চলে যাওয়া আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে। কানে ভাসছে তাঁর সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, যা একসময় হাজারো মানুষকে উদ্দীপ্ত করত। আমার মতো হাজারো মানুষ হয়তো তাঁর মৃত্যুসংবাদে নীরবে অশ্রু সংবরণ করবেন, যাঁদের তিনি অনুপ্রাণিত করে নিয়ে এসেছিলেন এক সুস্থ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথে। সুস্থ ধারার রাজনীতির
এখন চরম দুঃসময়। ত্যাগের রাজনীতির দৃষ্টান্তগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। এখন রাজনীতিতে এমন মানুষ কমে আসছেন, যাঁদের নিয়ে অহংকার করা যায়।
তিনি একাধিকবার জেলে গেছেন। আত্মগোপনেও থাকতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময় তিনি ১৯ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকটসান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। পঙ্কজদার লেখা ‘আমার সেই সব দিন’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করেছেন। শেষে লিখেছেন, ‘অবশেষে জামিন পেয়ে ছাড়া পেলাম জেল থেকে। মুজিব ভাই মহা খুশি। বললেন, “গোছগাছ করে নে, তোকে আমি গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেব।” তিনি গেটের কাছে এসে হাঁক দিলেন, “জেলার সাহেব কোথায়? তাকে বল আমার ভাই ছোট গেট দিয়ে মাথা নিচু করে জেল থেকে বের হবে না। মুজিব মাথা নিচু করে জেলে ঢোকে না, জেল থেকে বেরও হয় না।” অবাক কাণ্ড! তড়িঘড়ি ছুটে আসলেন ডেপুটি জেলার নির্মল সিংহা (অভিনেত্রী চিত্র সিংহার বড় ভাই)। বললেন, “জমাদার, মেইন গেট খুলে দাও।” জমাদার-সুবেদার-মেট পাহারা মিলে বিশাল গেট খুলে দিলে শুরু হয়ে গেল হইহই রইরই কাণ্ড। আমার জন্য যে আরও আশ্চর্যের ঘটনা অপেক্ষা করছিল, তা বুঝতে পারিনি। খোলা গেটের সামনে মুখে পাইপ নিয়ে দুই হাতে আমার গলায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন মুজিব ভাই। এরপর আমাকে আলিঙ্গন করে কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললেন, “ঐক্যটা ধরে রাখিস।’’’
১৯৬৪ সালে পঙ্কজদার বাবা-মা, ভাইবোনেরা সবাই ভারতে চলে গিয়েছিলেন এখানে থাকতে না পেরে। ‘আমার সেই সব দিন’ বইয়ে একদিনের ঘটনার বর্ণনা আছে এভাবে: চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আমাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার দিন যথারীতি পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছালাম। ঢাকাগামী গ্রিনঅ্যারো ট্রেনটি তখন সেখানে অপেক্ষারত। দ্বিতীয় শ্রেণির কম্পার্টমেন্টে ওঠার আগে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি। হঠাৎ বিপরীত দিকের চাঁদপুরগামী ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে এক অভাবিত দৃশ্যে চোখ আটকে গেল। দেখলাম বাবা-মা-বোনেরা চাঁদপুরগামী ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ওই ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায়। অনুমান করতে পারি, তাঁরা চাঁদপুর থেকে লঞ্চে যাবেন প্রথমে গোয়ালন্দে। সেখান থেকে ট্রেনে দর্শনা হয়ে ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পরে ট্রেনযোগে যাবেন আসানসোলের কাল্লায়, বড় ভাই পরিতোষ ভট্টাচার্যের বাড়িতে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই মর্মস্পর্শী দৃশ্য আমি দেখলাম। অদূরে আমার পাশে দাঁড়ানো নজরুলসংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেন। তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল একটি বাক্য, ‘বাবা-মা-বোনেরা দেশ ছেড়ে দেশান্তরে যাচ্ছেন, আমি যাচ্ছি জেল থেকে জেলান্তরে।’
শেষ দিকে আমি এবং পঙ্কজদা এক রাজনৈতিক দলে ছিলাম না। পঙ্কজদা গণফোরাম হয়ে ঐক্য ন্যাপ গঠন করেছিলেন। তবে যেখানেই মানুষের সমস্যা, সেখানেই তিনি তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে ছুটে গেছেন আমৃত্যু। এই দেশ ও মানবহিতৈষীর প্রতি জানাই অন্তিম শ্রদ্ধা।
লেখক, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
২৪ এপ্রিল ভোরে ঘুম ভাঙতেই কেন যেন মনে পড়ল খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ডের কথা। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ড থেকে আটজন রাজবন্দীকে কনডেম সেল বা ফাঁসির আসামির নির্জন সেলে স্থানান্তরিত করার সময় রাজনৈতিক বন্দীরা জেলখানায় ডিভিশন না পাওয়ায় প্রতিবাদ করেন। এ ছাড়া ভালো খাবার ঠিকমতো সরবরাহ না করা, কারাবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ না দেওয়া এবং খাপড়া ওয়ার্ডে ১১ জন রাজবন্দীকে জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন জেলবন্দীরা। জেলার ডব্লিউ এফ বিলের নির্দেশে চারদিকে জানালাবিশিষ্ট একটি ঘরে আবদ্ধ করে বাইরে থেকে ৪০ জন বন্দীর ওপর নির্মমভাবে গুলি চালায় কারারক্ষীরা। এর ফলে শহীদ হন সাতজন। বাকি বন্দীরা মারা না গেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। পুলিশ রক্তাপ্লুত বন্দীদের পুনরায় লাঠিপেটা করে। পাকিস্তানে কারাগারের ভেতরে রাজনৈতিক বন্দীদের হত্যার এই প্রথম ঘটনাটি নিয়ে যখন ভাবছিলাম, তখনই টেলিফোনে পেলাম আরেকটি দুঃসংবাদ। আমার এক শুভানুধ্যায়ী ফোনের ওদিক থেকে বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, পঙ্কজদা আর নেই। খবরটি শুনে আমারও মনটা ভারী হয়ে উঠল। পঙ্কজদা, মানে পঙ্কজ ভট্টাচার্য আমারও দীর্ঘদিনের পরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী।
পঙ্কজদার সঙ্গে কত স্মৃতি, কত ঘটনার কথাই মনের পর্দায় একে একে ভেসে উঠছে। তিনি অসুস্থ জানতাম, কিন্তু এভাবে চলে যাবেন, সে জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৬৩ সালে। পঙ্কজদা তখনই ছাত্র ইউনিয়নের বড় নেতা। সেই থেকে পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা এবং একসঙ্গে আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক সমাজ গড়ার সংগ্রামে বহু পথ হেঁটেছি।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন
কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য গত শতকের ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে আমৃত্যু দেশমাতৃকার একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবেই পরিচিতি অর্জন করেছেন।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। ন্যাপে তখন অনেক সংগ্রামী ও প্রবীণ নেতা থাকা সত্ত্বেও পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় দলের মধ্যে সবাই উৎফুল্ল হয়েছিলেন, তা হয়তো নয়। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য তাঁর নিষ্ঠা, সততা ও কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুততম সময়েই দলের মধ্যে নিজের অবস্থান সংহত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
পঙ্কজদার চলে যাওয়া আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে। কানে ভাসছে তাঁর সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, যা একসময় হাজারো মানুষকে উদ্দীপ্ত করত। আমার মতো হাজারো মানুষ হয়তো তাঁর মৃত্যুসংবাদে নীরবে অশ্রু সংবরণ করবেন, যাঁদের তিনি অনুপ্রাণিত করে নিয়ে এসেছিলেন এক সুস্থ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথে। সুস্থ ধারার রাজনীতির
এখন চরম দুঃসময়। ত্যাগের রাজনীতির দৃষ্টান্তগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। এখন রাজনীতিতে এমন মানুষ কমে আসছেন, যাঁদের নিয়ে অহংকার করা যায়।
তিনি একাধিকবার জেলে গেছেন। আত্মগোপনেও থাকতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময় তিনি ১৯ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকটসান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। পঙ্কজদার লেখা ‘আমার সেই সব দিন’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করেছেন। শেষে লিখেছেন, ‘অবশেষে জামিন পেয়ে ছাড়া পেলাম জেল থেকে। মুজিব ভাই মহা খুশি। বললেন, “গোছগাছ করে নে, তোকে আমি গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেব।” তিনি গেটের কাছে এসে হাঁক দিলেন, “জেলার সাহেব কোথায়? তাকে বল আমার ভাই ছোট গেট দিয়ে মাথা নিচু করে জেল থেকে বের হবে না। মুজিব মাথা নিচু করে জেলে ঢোকে না, জেল থেকে বেরও হয় না।” অবাক কাণ্ড! তড়িঘড়ি ছুটে আসলেন ডেপুটি জেলার নির্মল সিংহা (অভিনেত্রী চিত্র সিংহার বড় ভাই)। বললেন, “জমাদার, মেইন গেট খুলে দাও।” জমাদার-সুবেদার-মেট পাহারা মিলে বিশাল গেট খুলে দিলে শুরু হয়ে গেল হইহই রইরই কাণ্ড। আমার জন্য যে আরও আশ্চর্যের ঘটনা অপেক্ষা করছিল, তা বুঝতে পারিনি। খোলা গেটের সামনে মুখে পাইপ নিয়ে দুই হাতে আমার গলায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন মুজিব ভাই। এরপর আমাকে আলিঙ্গন করে কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললেন, “ঐক্যটা ধরে রাখিস।’’’
১৯৬৪ সালে পঙ্কজদার বাবা-মা, ভাইবোনেরা সবাই ভারতে চলে গিয়েছিলেন এখানে থাকতে না পেরে। ‘আমার সেই সব দিন’ বইয়ে একদিনের ঘটনার বর্ণনা আছে এভাবে: চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আমাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার দিন যথারীতি পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছালাম। ঢাকাগামী গ্রিনঅ্যারো ট্রেনটি তখন সেখানে অপেক্ষারত। দ্বিতীয় শ্রেণির কম্পার্টমেন্টে ওঠার আগে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি। হঠাৎ বিপরীত দিকের চাঁদপুরগামী ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে এক অভাবিত দৃশ্যে চোখ আটকে গেল। দেখলাম বাবা-মা-বোনেরা চাঁদপুরগামী ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ওই ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায়। অনুমান করতে পারি, তাঁরা চাঁদপুর থেকে লঞ্চে যাবেন প্রথমে গোয়ালন্দে। সেখান থেকে ট্রেনে দর্শনা হয়ে ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পরে ট্রেনযোগে যাবেন আসানসোলের কাল্লায়, বড় ভাই পরিতোষ ভট্টাচার্যের বাড়িতে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই মর্মস্পর্শী দৃশ্য আমি দেখলাম। অদূরে আমার পাশে দাঁড়ানো নজরুলসংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেন। তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল একটি বাক্য, ‘বাবা-মা-বোনেরা দেশ ছেড়ে দেশান্তরে যাচ্ছেন, আমি যাচ্ছি জেল থেকে জেলান্তরে।’
শেষ দিকে আমি এবং পঙ্কজদা এক রাজনৈতিক দলে ছিলাম না। পঙ্কজদা গণফোরাম হয়ে ঐক্য ন্যাপ গঠন করেছিলেন। তবে যেখানেই মানুষের সমস্যা, সেখানেই তিনি তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে ছুটে গেছেন আমৃত্যু। এই দেশ ও মানবহিতৈষীর প্রতি জানাই অন্তিম শ্রদ্ধা।
লেখক, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে