অসময়েও পর্যটকের ঢল

পটুয়াখালী ও কলাপাড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২২, ০৬: ২৭
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১২: ২৭

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজারো ভ্রমণপিপাসু ছুটে এসেছে প্রকৃতির রূপে সাজানো মনোমুগ্ধকর সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায়। ভাদ্রের উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে তালে মেতে উঠেছে তারা। পর্যটকদের পদচারণে উচ্ছ্বসিত ১৮ কিলোমিটারের দীর্ঘ এ সমুদ্রসৈকত।

একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ পর্যটকেরা। এতে প্রাণের স্পন্দন ফিরে এসেছে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার। শুক্র ও শনি দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। সঙ্গে যোগ হয় জন্মাষ্টমীর ছুটি (বৃহস্পতিবার)। তাই তো তিন দিনের ছুটি কাটাতে এসেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ স্বামী-স্ত্রী, কেউ পুরো পরিবার নিয়ে এবং কেউ কেউ একা উপভোগ করতে এসেছেন।

পর্যটকদের কেউ কেউ ঘুরছেন লেম্বুর চর, গঙ্গামতি চর, ফাতরার বন, কাঁকড়ার চর ও রাখাইন পল্লিসহ কুয়াকাটার আকর্ষণীয় স্পটগুলো। কেউ কেউ উপভোগ করছেন সাগরের  নীল জলরাশি ও প্রকৃতি অপরূপ দৃশ্য। আবার কেউ কেউ সেলফি তুলে এবং বেঞ্চে বসে কাটাচ্ছেন সময়।

আগে এ বর্ষার সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থাকত প্রাণহীন এবং স্পন্দনহীন। অলস ও কর্মহীন সময় কাটাতেন কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলসহ ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। লোকসান গুনতে হতো তাঁদের। কিন্তু এ বছরের চিত্র আলাদা।

দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু খুলে দিয়েছে কুয়াকাটার ভাগ্যের চাকা। পাল্টে গেছে সেখানকার চিত্র। এখন আর মৌসুমি পর্যটকের আগমন নয়, পদ্মা সেতু হওয়ায় কুয়াকাটায় বারো মাসই থাকবে পর্যটক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ পদ্মা ওপারের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে এখন আর ফেরি পারাপারের ভোগান্তি নেই, নেই কোনো বিড়ম্বনাও। এখন কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগছে মাত্র ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। তাই তো বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সবাই ছুটে এসেছেন কুয়াকাটায়। 
ঢাকার সাভার থেকে আসা রেহেনা-আসলাম দম্পতি বলেন, আমরা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। কুয়াকাটায় আসার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু খুব একটা ছুটি পাই না, বিধায় আসা হয়নি। তা ছাড়া কুয়াকাটায় আসার ভোগান্তির কথা শুনে এখানে আর আসা হয়নি। পদ্মাসেতু হওয়ায় এ তিন দিনের ছুটিটাকে মিস করিনি। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চলে এলাম।

রাজধানী থেকে আসা চাকরিজীবী রোকসনা পারভীন বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে কুয়াকাটায় আসার ভোগান্তির কথা শুনে কখনো ভাবিনি এখানে আসতে পারব বা আসব। শুধু পদ্মা সেতুর কারণে তিন দিনের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হুট করে চলে এলাম। কুয়াকাটার অপরূপ সৌন্দর্য এবং সাগরের নীল জল ও প্রকৃতি দেখে সত্যিই আমরা মুগ্ধ। আমরা আবার আসব এখানে।’

ময়মনসিংহ থেকে আসা গৃহবধূ জেসমিন আক্তার বলেন, ‘বছর পাঁচেক আগে একবার এসেছিলাম মা-বাবার সঙ্গে। তখন অনেক ভোগান্তি হয়েছে। ১২ / ১৪ ঘণ্টা পর এসে কুয়াকাটায় পৌঁছেছিলাম। এবার পদ্মা সেতুর কারণে মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টায় এলাম।’

ব্যবসায়ী মঞ্জু মাতব্বর বলেন, ‘আমি এখানে ব্যবসা করছি ১২ বছর ধরে। কখনো দেখিনি বর্ষা মৌসুমে কুয়াকাটায় এত পর্যটক। করোনায় যে লোকসান হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে পারব। সবই আল্লাহর ইচ্ছে।’

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় কুয়াকাটার ভাগ্য খুলে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে এবারের বর্ষা মৌসুমে। পর্যটকদের চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে অনেক বিলাসবহুল গাড়ি সার্ভিস চালু হওয়ায় কুয়াকাটায় এখন শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা থাকবে না। বারো মাসেই পর্যটকে ভরা থাকবে কুয়াকাটা।’

টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, পদ্মা সেতু এবং ফেরিবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বর্ষা মৌসুমে কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত