Ajker Patrika

মাথা তুলছে ৫ লাখ তালগাছ

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
মাথা তুলছে ৫ লাখ তালগাছ

দিগন্তবিস্তৃত ধানখেত। মাঝখানে আঁকাবাঁকা পথ। তার দুই পাশে মাথা উঁচু তালগাছ আমাদের গ্রামীণ জীবনের চিরচেনা দৃশ্য। সময়ের বদলে এ নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুধু নয়নাভিরাম দৃশ্য তৈরিই নয়, বজ্রপাত ঠেকাতে তালগাছের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা। কিন্তু বর্তমানে এ গাছের স্বল্পতার কারণে বজ্রপাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ, পশুপাখিসহ অন্যান্য প্রাণী।

বজ্রপাত থেকে জানমাল রক্ষায় একসঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে প্রায় পাঁচ লাখ তালগাছ! দিনাজপুর জেলায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে এই অভিনব ঘটনা ঘটেছে।

গত পাঁচ বছরে দিনাজপুর অঞ্চলে বজ্রপাতে অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেছে। শুধু ২০২১ সালে এই অঞ্চলে এক দিনে ৭ জন বজ্রপাতে নিহত হন। মৃত্যুর হার চোখে পড়ার মতো। দেশে বজ্রপাতের ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে দুই শ বা তার বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৬ সালে সরকার একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। এ দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দিনাজপুরে তালগাছ রোপণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সড়কের দুই পাশ ছাড়াও বসতভিটার আশপাশে এ গাছের বীজ রোপণ করছেন অনেকে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে তালবীজ রোপণ শুরু হয়েছে।

দিনাজপুরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার তালবীজ রোপণ করে। এ ছাড়া গত ১০ বছরে তারা আরও প্রায় তিন লাখ তালবীজ রোপণ করেছে রাস্তা, মাঠ, পতিত জমি ও বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গায়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান তালগাছ রোপণে এগিয়ে এসেছে। বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে গত কয়েক বছরে দুই লাখের বেশি তালবীজ রোপণ করা হয়েছে দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায়। জেলার সদর উপজেলার নশিপুর সিআইজি কৃষক সমবায় সমিতি, চিরিরবন্দরের চিরিরবন্দর ব্লাড ডোনার সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন তালবীজ রোপণের এই উদ্যোগে শামিল ছিল। কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেলেও অধিকাংশ জায়গায় এ গাছগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুরের সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উঁচু গাছেই বেশি বজ্রপাত হয়। উঁচু গাছ থাকলে এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি কমে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে কয়েক বছর ধরে দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে।

তালগাছ শুধু বজ্রপাত রোধে ভূমিকা রাখে না, পাখিদের বাসা তৈরি এবং গ্রামীণ জনপদে বসবাসের ঘর তৈরিতেও এ গাছের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া ফল হিসেবে তাল কাঁচা ও পাকা—দুভাবেই খাওয়া যায়। এর রস পানের প্রচলনও আছে। এই রস থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি তৈরি হয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানিয়েছেন, তালগাছ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতি ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা, ভূমিক্ষয় রোধ ইত্যাদিতে এ গাছের ব্যাপক অবদান রয়েছে। সেই সঙ্গে ইকোলজিক্যাল ফার্মিংয়ে তালগাছের ভূমিকা অপরিসীম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত