কম দামে শেয়ার নেবে সরকার, লোকসান গুনবে বিনিয়োগকারীরা

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ০৪

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) প্রতিটি শেয়ার গতকাল রোববার ২১৮ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। তবে এ শেয়ারটিই সরকারের অনুকূলে প্রায় ১৪৪ টাকা কম দামে ইস্যু করবে কোম্পানিটি। এতে লোকসান গুনতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ১৬৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৭৫ টাকা দরে ২ কোটি ২১ লাখের বেশি শেয়ার ইস্যু করবে বিএসসিসিএল। বর্তমানে বিএসসিসিএলের শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার ৫১০। অনুমোদন সাপেক্ষে আরও শেয়ার ইস্যু সম্পন্ন হলে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৩টি। আর নতুন শেয়ার ইস্যু চূড়ান্ত হলে পুঁজিবাজারে সমন্বয়ের মাধ্যমে শেয়ারপ্রতি দর কমবে প্রায় ২৯ টাকা।

বর্তমানে বিএসসিসিএলের মোট শেয়ারের ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ রয়েছে সরকারের মালিকানায়। বাকি ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বা ৪ কোটি ৩১ লাখ ৩৯ হাজার ২৮২টি শেয়ার রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে। শেয়ারপ্রতি ২৯ টাকা করে দর কমলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২৬ কোটি টাকার বেশি।

এ বিষয়ে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এমরান হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন করে সরকারের হাতে শেয়ার ছাড়া হলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম কমে যাবে। রাইট শেয়ারের মতো যদি তাঁরা কিনতে পারতেন, তাহলে লাভবান হতেন। এখানে সুযোগটা বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না, পাচ্ছে সরকার।

সরকারের হাতে আরও শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগে বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য লোকসানের কথা স্বীকার করেছেন বিএসসিসিএলের কোম্পানি সচিব আব্দুস সালাম খান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে দর সমন্বয় হলে বিনিয়োগকারীদের একটু লোকসান হবে। তবে সরকার ফেস ভ্যালুতে নিতে চেয়েছিল। আমরা দর-কষাকষি করে ৭৫ টাকা নিয়েছি। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে এমনিতেই বাজারে একটা দর সংশোধন হবে।

সরকারকে ঋণের বিপরীতে শেয়ার কেন দেওয়া হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের শর্ত ছিল শেয়ার ইস্যু করতে হবে। তবে কত টাকায় হবে, তা বলা ছিল না। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণের জন্য। তবে সেটা না করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

জানা যায়, ২০২২-২৩ হিসাব বছর শেষে সরকারের কাছ থেকে বিএসসিসিএলের গ্রহণ করা শেয়ার মানি ডিপোজিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫২ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকা। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্‌ল সিস্টেম (এসএমডব্লিউ৫) প্রকল্পের জন্য ১৬৬ কোটি টাকা নেয় কোম্পানি। আর দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন কেব্‌ল প্রকল্পের (কাজ এখনো চলমান) জন্য নেয় ৮৬ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টাকা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে শেয়ার ইস্যুর শর্তে কোম্পানিটিকে এই অর্থ দেয় সরকার। আইন অনুসারে এ অর্থ গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যু করার বিধান থাকলেও কোম্পানিটি তা পরিপালনে ব্যর্থ হয়।

কোম্পানিটি প্রথমে ৫৫ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ার ক্যাপিটাল ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বৃদ্ধি পেলে তারা প্রথম দফায় নেওয়া অর্থের বিপরীতে প্রতিটি শেয়ার ১১০ টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় নেওয়া অর্থের বিপরীতে প্রতিটি শেয়ার ১৩০ টাকা দরে ইস্যুর প্রস্তাব করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। প্রস্তাবিত দরকে অতিরিক্ত মনে করে মন্ত্রণালয়।

এ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের নিরসন না হওয়ায় সে সময় কোম্পানি শেয়ার ইস্যু করতে পারেনি। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় ৭৫ টাকা দরে সাধারণ শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে সম্মতি দেয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিএসসিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের ২১৫তম সভায় ৭৫ টাকা (অভিহিত মূল্য ১০ টাকা ও অধিহার ৬৫ টাকা) দরে ২ কোটি ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর জন্য সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের সিদ্ধান্ত ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি নেবে কোম্পানি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত