দূষণের থাবায় শকুনি লেক

­­মাদারীপুর প্রতিনিধি 
Thumbnail image

মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এবং বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে সবার কাছে পরিচিত শকুনি লেকের পানি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পানি আরও বেশি নষ্ট হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে মাদারীপুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে মাদারীপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়। লেকের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিন বহু মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসে। সকালের নির্মল হাওয়া আর বিকেলের পায়চারি শহরবাসীর নিত্যদিনের ঘটনা। অথচ এই সৌন্দর্যময় লেকের পানি দিন দিন নষ্ট হলেও নেওয়া হয়নি তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। সবুজ শেওলা পড়েছে। মাঝেমধ্যেই পানি থেকে পচা গন্ধও আসে। তাই এখনই এ লেকের পানি রক্ষার জন্য পদক্ষেপ না নিলে একটা সময় পানি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে মাঝেমধ্যে লেকের পানি নামমাত্র পরিষ্কার করলেও তা যথেষ্ট নয়।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে প্রমত্তা পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় যখন মাদারীপুর মূল শহরের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে, তখন নতুন করে শহর স্থানান্তরের জন্য মাটির প্রয়োজনে ১৯৪২-৪৩ সালে এ লেক খনন করা হয়। সে সময় এলাকাটি ছিল জনমানবহীন এবং বনজঙ্গলে ভরা একটি নিচু ভূমি। নদীভাঙনকবলিত তৎকালীন মহকুমা শহরের কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, থানা, জেলখানাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলো স্থানান্তরের জন্য এই এলাকা বেছে নেওয়া হয়। কারণ, সমতলে এসব স্থাপনা তৈরির জন্য অনেক মাটির প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের মাদারীপুর মহকুমা প্রশাসন এ লেক খনন করে মাটির চাহিদা পূরণ করে।

উন্নয়নকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, মাদারীপুরের দৃষ্টিনন্দন শকুনি লেকের পানির যে অবস্থা হচ্ছে, তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘুরতে আসা মাদারীপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, এখনই লেকের পানি রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মাদারীপুরের কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, লেকের চারপাশে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে আছে। সবার অগোচরে বিশেষ করে রাতের আঁধারে এই রেস্টুরেন্টগুলো ময়লা-আবর্জনা, ময়লা পানি, তেল, মসলাযুক্ত পানি ফেলার কারণেই লেকটি নষ্ট হওয়ার মূল কারণ। লেক রক্ষার কথা চিন্তা করেই রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করা উচিত।

মাদারীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রাজন মাহমুদ বলেন, ‘লেকের মূল অংশ হচ্ছে পানি। আর এই পানিই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে লেকের আর কি সৌন্দর্য থাকে। লেকের পাড়কে যেমন দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে, তেমনি এই লেকের পানিও নিরাপদ রাখতে হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লেকের পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

লেকের পানিতে কোনো প্রকার ময়লা-আবর্জনা ফেলতে দেওয়া যাবে না। তবেই আমাদের এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।’

মাদারীপুরে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, লেকটির পানি স্বচ্ছ রাখার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত