ড. এম আবদুল আলীম
বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের যিনি জনক, আজ তাঁর জন্মদিন। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। জন্মস্থান পূর্ববঙ্গের নিভৃত পল্লি টুঙ্গিপাড়া। এই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের সোনালি প্রহরগুলো তিনি জেলে কাটিয়েছেন।
কখনো বিনা বিচারে, কখনো বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি জেল খেটেছেন, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন, কিন্তু নীতি-আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি। জেলে বন্দী করে যতবারই তাঁকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই নতুন উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তি নিয়ে বের হয়ে এসেছেন এবং বাংলার মানুষ তাঁকে বিপুল সংবর্ধনায় বুকে টেনে নিয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হয়ে এবং ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে বের হয়ে স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখতেই লাখ লাখ মানুষ তাঁকে পুষ্পিত শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর প্রাণের অকৃত্রিম আবেগ-উচ্ছ্বাসে তাঁকে বরণ করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান এবং ‘জাতির পিতা’র আসনে ঠাঁই দিয়েছে। পাকিস্তানের কারাগারে এই মহান নেতার জন্মদিনগুলো কীভাবে কেটেছে, তার সব তথ্য পাওয়া যায় না। যতটুকু পাওয়া যায়, তার আলোকেই এই লেখার অবয়ব সাজানো হয়েছে।
৫৫ বছরের জীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় তেরো বছর জেলের প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১তম (১৯৫০), ৩২তম (১৯৫১), ৪০তম (১৯৫৯), ৪১তম (১৯৬০), ৪২তম (১৯৬১), ৪৩তম (১৯৬২), ৪৮তম (১৯৬৭) এবং ৪৯তম (১৯৬৮)—এই আটটি জন্মদিন কারাগারে কাটিয়েছেন। কখনো বই পড়ে, কখনো বাগান করে, কখনো সহবন্দীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে, কখনো রাজনৈতিক শিষ্য-সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা করে কারাগারের দিনগুলো কাটিয়েছেন। তাঁর তিনটি গ্রন্থ: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন; পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনসমূহ এবং অনেক সহবন্দীর স্মৃতিচারণ ও ডায়েরিতে তাঁর জেলজীবনের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর আটটি জন্মদিন কীভাবে কেটেছে তার বিশদ বিবরণ জানা যায় না। তবে ১৯৬৭ সালে কাটানো ৪৭তম জন্মদিনটি সম্পর্কে তিনি কারাগারের রোজনামচায় একটু বিস্তারিতভাবেই লিখেছেন। দিনটি ছিল শুক্রবার। পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লিতে ১৯২০ সালে তাঁর জন্ম, সেই বিবরণ প্রথমেই তুলে ধরেছেন। এ-ও লিখেছেন, তিনি নিজে কখনো জন্মদিন পালন করেননি, তবে এই দিনে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছোট্ট একটি উপহার দিতেন। জন্মদিনে বাড়তি আয়োজন না থাকলেও তিনি চেষ্টা করতেন বাড়িতে থেকে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে সময় কাটানোর।
৪৭তম জন্মদিনে কারাগারে বসে তিনি পত্রিকা মারফত জানতে পারেন ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ তাঁর জন্মদিন পালন করছে। বন্দী ছিলেন বলেই হয়তো এই জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তত দিনে তিনি পাকিস্তান আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক, যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আইন পরিষদের সদস্য ও মন্ত্রী এবং ৬ দফা কর্মসূচির জননন্দিত নেতা হলেও অতি বিনয়ের সঙ্গে লিখেছেন: ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস!’ মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আবার দেখা করে গেলেও প্রত্যাশা করেন জন্মদিনে যেন সন্তানদের নিয়ে দেখা করতে আসেন।
স্ত্রী-সন্তান দেখা করতে আসবেন—এই আশায় প্রহর কাটান। তাঁদের আগেই দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক ফুল নিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন সহবন্দীরা। প্রথমেই কয়েকটি ফুল নিয়ে ২০ নম্বর সেল থেকে দেখা করতে আসেন নূরে আলম। বঙ্গবন্ধুর হাতে ফুল তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আমার উপহার, আপনার জন্মদিনে।’ সেই শুভেচ্ছা উপহার ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করতেই বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার একটি রক্ত গোলাপ নিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর বাবু সুধাংশু বিমল দত্ত শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সাদা গোলাপ দিয়ে। একই সঙ্গে ডিপিআর বন্দী এমদাদুল্লা সাহের লাল ডালিয়া নিয়ে হাজির হন। বঙ্গবন্ধু থাকতেন দেওয়ানি ওয়ার্ডে আর তাঁর এই সহবন্দী শুভানুধ্যায়ীরা থাকতেন পুরোনো বিশ নম্বর সেলে। তাঁদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হতো হাঁটার সময়। আর তাতেই এই হার্দিক সম্পর্ক, অতঃপর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় ভালোবাসা জানানো।
সহবন্দীদের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করে জেলের নিত্যদিনের কাজ শেষে ওই জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু বিকেল ৪টা পর্যন্ত খবরের কাগজ পড়েন। তখনো অধীর অপেক্ষায় থাকেন স্ত্রী-সন্তানদের জন্য এই ভেবে যে, ‘আসতেও পারে।’ কিন্তু সাড়ে ৪টা বাজার পর আশা ছেড়ে দেন। তখন তাঁর মনে হয়, হয়তো এসেছিলেন, দেখা করার অনুমতি পাননি। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ৫টার ঘরে যেতে না যেতেই জমাদার সাহেব এসে জানায়, ‘চলুন, আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলেমেয়েরা এসেছে।’ এ খবরে আনন্দ আর ধরে না। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওনা হলেন জেলগেটের দিকে। গিয়ে দেখেন ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও ছোট ছেলে শেখ রাসেল ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মালা হাতে নিয়ে আড়াই বছরের সন্তান রাসেলের গলায় পরাতে গেলে সে কিছুতেই পরল না; বরং ছোট্ট তুলতুলে হাতে মালাটি পিতার গলায় পরিয়ে দিল। রাসেলকে নিয়ে রুমে ঢুকলেন এবং মেয়েকে আদর করলেন। ওই সময় দেখতে পান সিটি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ একটি বিরাট কেক পাঠিয়ে দিয়েছে। সে কেক রাসেলকে দিয়ে কাটান এবং জেলগেটের সবাইকে দেন। কেকের কিছুটা কারাবন্দী ভাগনে শেখ মনির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। একই জেলে থাকলেও দুজনের সাক্ষাৎ হয় না। আরেকটি কেক পাঠিয়েছেন জনৈক বদরুন।
তিনি সাক্ষাৎ করার অনুমতি পাননি, তাই কেকটি পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণীর কাছে। সেই কেক তিনি ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং তাঁর এই স্নেহের ঋণ চিরদিন স্মরণ রাখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু এই মধুর সময় বেশিক্ষণ কাটাতে পারলেন না। ৬টা বাজতেই স্ত্রী-সন্তানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁকে ফিরতে হলো জেলের প্রকোষ্ঠে। বিদায় বেলায় বুকের মধ্যে বিষাদের রাগিণী বাজতে থাকল। যদিও ছোট্ট ছেলেটি তত দিনে বুঝে গেছে যে, জেলই বুঝি বাবার আসল ঠিকানা, তাই তাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হলো না।
কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি পিতাকে ছেড়ে যেতে খুব ব্যথা পাচ্ছিল, যা তাঁর মুখের অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে। জেলবন্দী পিতার মনও সন্তানস্নেহে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। স্ত্রী খুব চাপা, বুকে পাষাণভার চেপে মুখে কিছু প্রকাশ করেন না। এমনই ছিল পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের দৃশ্য।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বড় বড় কেক কেটে শ্রদ্ধা জানানো হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কারাগারে কত দুঃসহ ছিল তাঁর জন্মদিনগুলো, তা সহজেই অনুমেয়। একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে এবং এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন সেই দুঃসহ জেলজীবন। তাঁর জন্মদিন পালন তখনই সার্থক হবে, যখন এ দেশের সব মানুষের মুখে হাসি ফুটবে এবং শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাবেক ডিন, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের যিনি জনক, আজ তাঁর জন্মদিন। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। জন্মস্থান পূর্ববঙ্গের নিভৃত পল্লি টুঙ্গিপাড়া। এই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের সোনালি প্রহরগুলো তিনি জেলে কাটিয়েছেন।
কখনো বিনা বিচারে, কখনো বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি জেল খেটেছেন, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন, কিন্তু নীতি-আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি। জেলে বন্দী করে যতবারই তাঁকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই নতুন উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তি নিয়ে বের হয়ে এসেছেন এবং বাংলার মানুষ তাঁকে বিপুল সংবর্ধনায় বুকে টেনে নিয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হয়ে এবং ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে বের হয়ে স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখতেই লাখ লাখ মানুষ তাঁকে পুষ্পিত শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর প্রাণের অকৃত্রিম আবেগ-উচ্ছ্বাসে তাঁকে বরণ করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান এবং ‘জাতির পিতা’র আসনে ঠাঁই দিয়েছে। পাকিস্তানের কারাগারে এই মহান নেতার জন্মদিনগুলো কীভাবে কেটেছে, তার সব তথ্য পাওয়া যায় না। যতটুকু পাওয়া যায়, তার আলোকেই এই লেখার অবয়ব সাজানো হয়েছে।
৫৫ বছরের জীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় তেরো বছর জেলের প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১তম (১৯৫০), ৩২তম (১৯৫১), ৪০তম (১৯৫৯), ৪১তম (১৯৬০), ৪২তম (১৯৬১), ৪৩তম (১৯৬২), ৪৮তম (১৯৬৭) এবং ৪৯তম (১৯৬৮)—এই আটটি জন্মদিন কারাগারে কাটিয়েছেন। কখনো বই পড়ে, কখনো বাগান করে, কখনো সহবন্দীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে, কখনো রাজনৈতিক শিষ্য-সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা করে কারাগারের দিনগুলো কাটিয়েছেন। তাঁর তিনটি গ্রন্থ: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন; পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনসমূহ এবং অনেক সহবন্দীর স্মৃতিচারণ ও ডায়েরিতে তাঁর জেলজীবনের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর আটটি জন্মদিন কীভাবে কেটেছে তার বিশদ বিবরণ জানা যায় না। তবে ১৯৬৭ সালে কাটানো ৪৭তম জন্মদিনটি সম্পর্কে তিনি কারাগারের রোজনামচায় একটু বিস্তারিতভাবেই লিখেছেন। দিনটি ছিল শুক্রবার। পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লিতে ১৯২০ সালে তাঁর জন্ম, সেই বিবরণ প্রথমেই তুলে ধরেছেন। এ-ও লিখেছেন, তিনি নিজে কখনো জন্মদিন পালন করেননি, তবে এই দিনে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছোট্ট একটি উপহার দিতেন। জন্মদিনে বাড়তি আয়োজন না থাকলেও তিনি চেষ্টা করতেন বাড়িতে থেকে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে সময় কাটানোর।
৪৭তম জন্মদিনে কারাগারে বসে তিনি পত্রিকা মারফত জানতে পারেন ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ তাঁর জন্মদিন পালন করছে। বন্দী ছিলেন বলেই হয়তো এই জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তত দিনে তিনি পাকিস্তান আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক, যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আইন পরিষদের সদস্য ও মন্ত্রী এবং ৬ দফা কর্মসূচির জননন্দিত নেতা হলেও অতি বিনয়ের সঙ্গে লিখেছেন: ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস!’ মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আবার দেখা করে গেলেও প্রত্যাশা করেন জন্মদিনে যেন সন্তানদের নিয়ে দেখা করতে আসেন।
স্ত্রী-সন্তান দেখা করতে আসবেন—এই আশায় প্রহর কাটান। তাঁদের আগেই দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক ফুল নিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন সহবন্দীরা। প্রথমেই কয়েকটি ফুল নিয়ে ২০ নম্বর সেল থেকে দেখা করতে আসেন নূরে আলম। বঙ্গবন্ধুর হাতে ফুল তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আমার উপহার, আপনার জন্মদিনে।’ সেই শুভেচ্ছা উপহার ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করতেই বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার একটি রক্ত গোলাপ নিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর বাবু সুধাংশু বিমল দত্ত শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সাদা গোলাপ দিয়ে। একই সঙ্গে ডিপিআর বন্দী এমদাদুল্লা সাহের লাল ডালিয়া নিয়ে হাজির হন। বঙ্গবন্ধু থাকতেন দেওয়ানি ওয়ার্ডে আর তাঁর এই সহবন্দী শুভানুধ্যায়ীরা থাকতেন পুরোনো বিশ নম্বর সেলে। তাঁদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হতো হাঁটার সময়। আর তাতেই এই হার্দিক সম্পর্ক, অতঃপর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় ভালোবাসা জানানো।
সহবন্দীদের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করে জেলের নিত্যদিনের কাজ শেষে ওই জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু বিকেল ৪টা পর্যন্ত খবরের কাগজ পড়েন। তখনো অধীর অপেক্ষায় থাকেন স্ত্রী-সন্তানদের জন্য এই ভেবে যে, ‘আসতেও পারে।’ কিন্তু সাড়ে ৪টা বাজার পর আশা ছেড়ে দেন। তখন তাঁর মনে হয়, হয়তো এসেছিলেন, দেখা করার অনুমতি পাননি। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ৫টার ঘরে যেতে না যেতেই জমাদার সাহেব এসে জানায়, ‘চলুন, আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলেমেয়েরা এসেছে।’ এ খবরে আনন্দ আর ধরে না। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওনা হলেন জেলগেটের দিকে। গিয়ে দেখেন ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও ছোট ছেলে শেখ রাসেল ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মালা হাতে নিয়ে আড়াই বছরের সন্তান রাসেলের গলায় পরাতে গেলে সে কিছুতেই পরল না; বরং ছোট্ট তুলতুলে হাতে মালাটি পিতার গলায় পরিয়ে দিল। রাসেলকে নিয়ে রুমে ঢুকলেন এবং মেয়েকে আদর করলেন। ওই সময় দেখতে পান সিটি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ একটি বিরাট কেক পাঠিয়ে দিয়েছে। সে কেক রাসেলকে দিয়ে কাটান এবং জেলগেটের সবাইকে দেন। কেকের কিছুটা কারাবন্দী ভাগনে শেখ মনির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। একই জেলে থাকলেও দুজনের সাক্ষাৎ হয় না। আরেকটি কেক পাঠিয়েছেন জনৈক বদরুন।
তিনি সাক্ষাৎ করার অনুমতি পাননি, তাই কেকটি পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণীর কাছে। সেই কেক তিনি ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং তাঁর এই স্নেহের ঋণ চিরদিন স্মরণ রাখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু এই মধুর সময় বেশিক্ষণ কাটাতে পারলেন না। ৬টা বাজতেই স্ত্রী-সন্তানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁকে ফিরতে হলো জেলের প্রকোষ্ঠে। বিদায় বেলায় বুকের মধ্যে বিষাদের রাগিণী বাজতে থাকল। যদিও ছোট্ট ছেলেটি তত দিনে বুঝে গেছে যে, জেলই বুঝি বাবার আসল ঠিকানা, তাই তাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হলো না।
কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি পিতাকে ছেড়ে যেতে খুব ব্যথা পাচ্ছিল, যা তাঁর মুখের অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে। জেলবন্দী পিতার মনও সন্তানস্নেহে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। স্ত্রী খুব চাপা, বুকে পাষাণভার চেপে মুখে কিছু প্রকাশ করেন না। এমনই ছিল পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের দৃশ্য।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বড় বড় কেক কেটে শ্রদ্ধা জানানো হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কারাগারে কত দুঃসহ ছিল তাঁর জন্মদিনগুলো, তা সহজেই অনুমেয়। একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে এবং এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন সেই দুঃসহ জেলজীবন। তাঁর জন্মদিন পালন তখনই সার্থক হবে, যখন এ দেশের সব মানুষের মুখে হাসি ফুটবে এবং শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাবেক ডিন, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে