বেগুনগাছের ডগায় টমেটো

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৩৯
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০০

সবুজ গাছের এক ডগায় ঝুলছে বেগুন, অন্য ডগায় কাঁচা-পাকা টমেটো। বেগুন গাছের গোড়া মাটিতে থাকলেও টমেটো গাছের গোড়া মাটিতে নেই। এ দৃশ্য কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বর্গা সবজি চাষি বাবলু কোম্পানির বেগুন খেতে। বেগুনগাছে কলমের মাধ্যমে টমেটোগাছ লাগিয়ে দেওয়ার পর এই সফলতা পান তিনি।

নিজের কোনো জমি না থাকলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সরকারি পরিত্যক্ত জমিকে পরিষ্কার করে বাবলু বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন। অল্প জমিতে কীভাবে বেশি ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া যায় তা নিয়ে নিজের মতো করে সনাতন পদ্ধতি খাঁটিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি আলুগাছে কলমের মাধ্যমে টমেটো চাষ করার জন্য কাজ করছেন।

জানা যায়, বাবলুর গত কয়েক বছরের কষ্টের ফসল এটা। ২০১৫ সাল থেকে চেষ্টা করতে করতে অবশেষে সফল হয়েছেন তিনি। আশার চেয়ে কয়েকগুণ বেগুন গাছে টমেটো ধরেছে। দুটি গাছে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেও বর্তমানে বাবলুর প্রায় ১০০ বেগুনগাছের ডগায় টমেটো ধরেছে। একই গাছে বেগুন ও টমেটো দেখে খুশি তিনি। তাঁর সফলতায় খুশি কৃষি বিভাগসহ স্থানীয়রা।

বাবলু কোম্পানি বলেন, ‘আমি সামান্য একজন চাষি। অন্যের জমি ভাগে (বর্গা) নিয়ে চাষাবাদ করি। নিজের কোনো জমিজমা নাই। তবে আমার ইচ্ছা আছে কাজ করার। নিত্যনতুনভাবে ফসল চাষাবাদ করার। এবং বাজারে যেখানে বিষযুক্ত সবজি ভরপুর, আমি সেখানে বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমার অনেক দিনের শখ এটা। একটি গাছে অনেকগুলো সবজি বা ফসল ধরবে। গত বছর একটি বেগুনগাছে টমেটোর ডগা কেটে নিয়ে কলম করি। সেখানে কিছুদিন পর দেখা যায় টমেটোর ডগাটি বেগুনের ডগার মতোই বড় হচ্ছে। কলম করার প্রায় ১ মাস পরে বেগুনগাছে টমেটোর ডগায় টমেটো ধরে। এরপরে কয়েকটি টমেটো পাই ওই বেগুনগাছ থেকে। সেখান থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার ২০টি বেগুন গাছে কলম করি। এবার গাছপ্রতি ৩৫-৪০টি করে টমেটো পেয়েছি।’

২০১১ সালে বাবলু ঢ্যাঁড়স গাছ থেকে পাটের মতো আঁশ উদ্ভাবন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। ২০১২ সালে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন আয়োজিত উদ্ভাবনী মেলায় ২৫ স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকের একজন তিনি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, বাবলু একজন সফল বিষমুক্ত সবজি চাষি। তিনি উপজেলার একজন মডেল চাষি হিসেবে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, বেগুন, টমেটো, তিত বেগুন একই গোত্রের হওয়ার কারণে বেগুনগাছে খুব সহজেই টমেটোর কলম করা যায়। এ ছাড়া বেগুনের চেয়ে তিত বেগুনে রোগবালাই কম হয়।

রমেশ চন্দ্র বলেন, বাবলু তাঁর জমিতে বেগুনগাছে কলম করে টমেটোতে সাফল্য পেয়েছেন। সাধারণত শৌখিন ব্যক্তিরা এগুলো বাড়ির ছাদে টবেও করতে পারে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে বেগুনগাছে টমেটো চাষ খুব জনপ্রিয় হবে।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তাঁর কাজ অনেকটাই ইউনিক। বেগুনগাছে টমেটোর গাছ কলম করে সফল হওয়ার পর তিনি আলুগাছে কলম করে টমেটোর আবাদ করার চেষ্টা করছেন। আমরা বিভিন্নভাবে তাঁকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত