ফুটপাতে উচ্ছেদ-দখল খেলা

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ২২

ফুটপাতের পুরোটাই হকারদের দখলে। ৬০ ফুট চওড়া রাস্তার ওপরও সারি সারি ভ্রাম্যমাণ দোকান। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন না পথচারীরা। যান চলাচলে ঘটছে ব্যাঘাত, সারাক্ষণই লেগে থাকছে জট। শুধু তা-ই নয়, দোকানের ফাঁকে ফাঁকে অবৈধভাবে পার্ক করে রাখা হচ্ছে মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কারসহ নানা যানবাহন।

এমন চিত্র রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তার। ঢাকার বড় এ সবজির বাজারে রমরমা বাণিজ্যের সুযোগ নিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত ভ্রাম্যমাণ দোকান। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় হকার বসিয়ে কারওয়ান বাজার ঘিরে চলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদা-বাণিজ্য। বারবার অভিযান পরিচালনা করেও রাস্তা দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। অভিযানের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার দখল হচ্ছে ফুটপাত ও রাস্তা।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর তথ্যমতে, কারওয়ান বাজারের ফুটপাত ও সড়ক হকারদের দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত ৬ মাসে ১৮ বার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। সবশেষ ৬ এপ্রিল কারওয়ান বাজার এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ। তিনি বিভিন্ন ধারায় ১০টি মামলায় দখলদারদের ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

মোতাকাব্বীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনতা টাওয়ার থেকে পেট্রোবাংলা ভবন পর্যন্ত পুরোটা হকারদের দখলে। প্রতি মাসে গড়ে তিনবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আবার দখল হয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে তো দাঁড়িয়ে সারা দিন পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।’

কারওয়ান বাজারে ২০ বছর ধরে সবজির ব্যবসা করেন মিজানুর রহমান। বর্তমানে তিনি সবজির আড়ত বিসমিল্লাহ বাণিজ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজারে টাকার খেলা চলে। এখানে রাস্তার প্রতি ইঞ্চি জায়গা ভাড়া চলে ঘণ্টা হিসেবে। রাস্তা দখল করে সবজি নিয়ে বসলেই মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয়। জায়গাগুলো ভাগ করা থাকে, স্থানীয় একেক রাজনৈতিক নেতা একেক জায়গা থেকে টাকা তোলেন।’

কারওয়ান বাজারে কয়েক বছর ধরে মিষ্টিকুমড়ার ব্যবসা করেন মনির হোসেন। জনতা টাওয়ারের উল্টো পাশের সড়কে বসেন তিনি। মনির বলেন, ‘রাস্তায় কুমড়া নিয়ে বসার জন্য প্রতি রাতে চাঁদা দিই। লাভের বড় অংশ সেখানে যায়।’

এ তো গেল রাতের চিত্র। দিনে সবজির সঙ্গে যোগ হয় নানা মৌসুমি ফলের ভ্রাম্যমাণ দোকান। গত শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের (অঞ্চল-৫) সামনে আনারস বিক্রি করতে দেখা যায় হারুন নামের এক হকারকে। হারুন বলেন, ‘ভ্যানে করে আনারস বিক্রি করি। দিনে ১০০ করে দিই। উচ্ছেদের খবর পেলে আগে আগে সরে যাই। পরে আবার দোকান বসানো যায়।’

সোনারগাঁও হোটেল-সংলগ্ন ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে গার্মেন্টস আইটেম বিক্রি করেন মোহাম্মদ সোহান। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মালামাল বিক্রি করি। লাইনম্যানকে ১৫০ করে দিই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘পাঁচ থেকে সাত সারি দোকান বসে। সিটি করপোরেশনের ৬০ ফুট রাস্তার ২০ ফুটও ফাঁকা থাকে না। এটার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’

ফুটপাতের হকারদের কাছে কারা চাঁদা তোলে জানতে চাইলে লোকমান হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে বলতে পারবেন অঞ্চল-৫-এর কর্মকর্তারা, স্থানীয় কাউন্সিলর। মার্কেটের ভেতরে কোনো সমস্যা হলে সেগুলো আমরা দেখি। চাঁদার বিষয়ে আমি জানি না, আমিও চাই মানুষের ভোগান্তি কমে আসুক।’

কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজার স্থানান্তর করা ছাড়া স্থায়ী সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান লোকদেখানো কার্যক্রম ছাড়া কিছুই নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সরকারের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।’

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত