Ajker Patrika

আগে ভাত পরে ভাজি আর সব মাঝামাঝি

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৩৩
আগে ভাত পরে ভাজি আর সব মাঝামাঝি

পৌষ এই এল বলে! এখন সময় রোদে পিঠ পেতে দিয়ে গরম-গরম খাবার খাওয়ার। ধোঁয়া ওঠা সাদা ফ্যানভাতের ওপর হলুদ বরণ একটুখানি গাওয়া ঘি, সঙ্গে টেলে নেওয়া কাঁচা মরিচ, একটুখানি আলুভাজি। আর সঙ্গে যদি থাকে আগের রাতে রান্না করা বড় পুঁটিমাছের সরপড়া ঝোল, তাহলে স্বর্গ ধরা দেবে জিভের ডগায়। সেই কবে আমাদের কোন পূর্বপুরুষ বলে গেছেন, গরম ভাতে গাওয়া ঘি দিয়ে যে লোক ভাত খায়, সে ভাগ্যবান।

কিন্তু মর্ত্যের মানুষ শীতের দিনে গরম-গরম ভাত খেতে পারলেই বর্তে যায়। ভাতই কেন? কারণ এই পুণ্যভূমি বদ্বীপে হাজার বছর ধরে শস্য হিসেবে প্রধান হচ্ছে ধান। ধান থেকে চাল আর চাল সেদ্ধ করে ভাত খাওয়ার রীতি গড়ে উঠেছে প্রাচীন কাল থেকে। ধানের প্রাধান্য এমনই যে হেমন্ত ঋতুতে উৎপাদিত সব ফসলের নাম হৈমন্তী হলেও এই বঙ্গে হেমন্ত হয়ে গেছে ধানের ঋতু। আর উদরপূর্তি করা সব খাবারের আভিধানিক নাম ‘অন্ন’ হলেও এখানে ভাতের নাম অন্ন। ভাতের শক্তি এখানে এমনই প্রবল যে এ দেশের এক ঐতিহাসিক পুরুষ তর্জনী উঁচিয়ে বলতে পারেন, ‘তোমাদের ভাতে মারব।’

ফলে এখানে, এই অনায়াসে উৎপন্ন হওয়া ধানের দেশে ভাতকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনচর্যার প্রজন্মান্তরের জ্ঞান তৈরি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের খাদ্যসংস্কৃতিকে শত শত বছর ধরে সজীব রাখার কারিগর নারীরা। কোনো পুরস্কারের তোয়াক্কা না করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে গেছেন খাদ্যসংস্কৃতির বিশাল জগৎকে। বছরের পর বছর হেঁশেলে আগুন-পানি-চাল-ডাল-মাছ-মাংস আর মসলাপূর্ণ জীবনে খাদ্যসংস্কৃতির যে প্রজ্ঞা নারীরা অর্জন করেছেন, তাতে জীবনের বিপুল বয়ান ধরা পড়ে। সেই প্রজ্ঞার সূত্র ধরেই তাঁরা নির্মাণ করেছেন খাদ্যবিজ্ঞান। সেখানেই আমরা পাই শীতের দিনের গরম ভাত খাওয়ার বিজ্ঞান, প্রবাদের মোড়কে।

ছবি: নীলু ইসলাম‘আগে ভাত পরে ভাজি আর সব মাঝামাঝি’ শীতকালীন খাদ্যবিজ্ঞানের এক অসাধারণ সূত্র। ভাত ঠান্ডা হয় ধীরে ধীরে। রান্নার পর ফ্যান ঝরিয়ে রেখে দেওয়া যায় অনেকক্ষণ। আর যদি ফ্যানভাত হয় তাহলেও গরম থাকবে দীর্ঘক্ষণ। তাই ভাত রান্না করতে হবে সবার আগে। সাধারণত রান্নাঘরের নিয়ম সেটাই। তারপর একে একে বিভিন্ন তরকারি। আর একেবারে শেষে বা খাওয়ার আগে ভাজি। যেকোনো ভাজি। কারণ ভাজি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। তেলে ভাজা কোনো কিছুই ঠান্ডা খেতে ভালো লাগে না। রসিক মানুষ নেতিয়ে যাওয়া তেলে বা ঘিয়ে ভাজা কিছু খেতে পছন্দ করে না। তাই ভাজি হবে একেবারে শেষে। খাওয়ার আগে আগে। শীতে একবার এই সূত্র মেনে রান্নাটা করে দেখুন।

একবার শুধু ভেবে দেখুন, দুধসাদা ভাতের ওপর ছাঁকা তেলে ভেজে তোলা কড়কড়ে মাছ কিংবা আলুভাজি অথবা বেসনে ডোবানো বকফুল বা কুমড়ো ফুলের বড়া আপনার সামনে। এই শীতে আর কিছু কি দরকার আছে কোনো বিশুদ্ধ বাঙালির? কিংবা জুঁই ফুলের মতো সাদা সুগন্ধি চালের ভাতের ওপর হালকা গরম মাংসের ঘন খয়েরি ঝোল আর হলুদ আলুর রসায়ন? ভেবে দেখুন তো?

ছবি: বীথিখাদ্যবিজ্ঞানের এই রসায়ন এক দিনে তৈরি হয়নি। শত শত বছর ধরে একটা সূত্র চলে এসেছে আমাদের সামনে। খাবার রান্না আর খাওয়া এ দুইয়ের মধ্যে দৃশ্যমান যোগসূত্র আছে। যে পরিবারের মানুষেরা খেতে পছন্দ করে, সেই পরিবারে খাবার রান্নার গল্পটা দারুণ। এই ‘খেতে পছন্দ করা’ বিষয়টির সঙ্গে অর্থনৈতিক সংগতির সম্পর্ক থাকলেও সেটা গৌণ।

ভাজি বা ভাজা নিয়ে এত কথা যখন হচ্ছে, চলুন, আজ শুক্রবারের এই ছুটির দিনে একটি ভাজির রেসিপি দিই আপনাদের। আমি নিশ্চিত, বেশির ভাগ মানুষ এর কথা শোনেননি। এই খাবারের নাম ‘তিলের পাট ভাজি’। প্রথমে তিলের খোসা ছাড়িয়ে নিন। অবশ্য এখন পরিষ্কার তিল কিনতেই পাওয়া যায়। দুই ভাগ তিল ও এক ভাগ চাল, পরিমাণ হবে এটি। পরিষ্কার তিল ভেজানো আতপ চালের সঙ্গে পাটায় বেটে নিন। আবার তিল বেটে নিয়ে আতপ চালের গুঁড়ো পরে মিশিয়েও নেওয়া যায়। এর সঙ্গে স্বাদমতো মরিচবাটা ও লবণ মিশিয়ে নিন। এবার সবকিছু ভালো করে ঘুঁটে নিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন। সেই ব্যাটারে শসা, ছাঁচি কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন এ রকম সবজি পাট পাট করে কেটে ডুবিয়ে নিন। তারপর ডুবো তেলে ভেজে নিন। আজ থেকে বহু বছর আগে কিরণ লেখা রায় বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে এ রেসিপি সংগ্রহ করেছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী শরৎকুমার রায় ১৯২০ সালের দিকে ‘বরেন্দ্র রন্ধন’ নামে সংকলনে প্রকাশ করেছিলেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

সেনাসদস্যকে এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, আরেক গাড়ি পিষে যায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত