বরিশাল-৩: সুগন্ধাতীরে ভাঙনের আভাস

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ১১: ৪০

সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে বরিশালের দুই উপজেলা বাবুগঞ্জ ও মুলাদী। ১৯৭৩ সালের পর এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) পায়নি আওয়ামী লীগ। প্রতিবারই তারা আসনটি ছেড়ে দিয়েছে মহাজোটের শরিক দলগুলোকে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন নিজেদের পক্ষে চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিটির নেতারা। জোট, মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারাও ছাড় দিতে নারাজ। তাঁদের এমন ডামাডোল নির্বাচনেও অব্যাহত থাকলে সুযোগ নেবে বিএনপি।

আসনটিতে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। ২০০৮ সালে মহাজোটের কারণে আসনটি পায় জাপা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির ঘরে যায় আসনটি। ২০১৮ সালেও জোটের কারণে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকার টিকিট পেলেও আসনটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। পরবর্তী নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস বাকি থাকতেই টিপুর বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

স্থানীয় ভোটার ও সরকারদলীয় নেতাদের ভাষ্য, লঞ্চ ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া টিপু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কোনো নজর দেননি। করোনাকালেও তাঁকে জনগণ পাশে পায়নি। এ ছাড়া নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি মীরগঞ্জ সেতু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী এমদাদুল হক দুলাল বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি নেই। দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা অভিভাবকশূন্য।

এমদাদুল হকের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে বছরে বরাদ্দ ৪৪ লাখ টাকা। আর রাস্তাঘাট করতে এমপির জন্যই বরাদ্দ ১০ কোটি টাকা। টিআর, কাবিখা প্রকল্পে বছরে পান ৩ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ দিয়ে এমপি কী উন্নয়ন করেছেন, তা যাচাই করে দেখা দরকার।

জানতে চাইলে এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, তিনি জনগণের পকেটে হাত দেননি। অনেক উন্নয়ন করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে মীরগঞ্জ সেতু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামীবার হবে।

প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে টিপুর ভাষ্য, এবার তাঁর দল জোট-মহাজোট যেখানেই যাক, নিজে ঠিকই প্রার্থী হবেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো দিনই দলীয় প্রার্থী পাবে না। তাঁদের একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা যে ক্ষমতা দেখান, তাতে জনগণ বিরক্ত।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতিকুর রহমান, যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক মিজানুর রহমান। বিএনপির হয়ে প্রার্থী হতে চান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের এমপি লুৎফুন্নেছা খান বিউটি।

প্রার্থী হতে চাওয়ার কারণ হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, জোট-মহাজোটের কারণে স্থানীয়ভাবে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া যুগ যুগ ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।

এদিকে আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও দলের দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্বে সাংগঠনিক অবস্থা বেশ দুর্বল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদীনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জয়নুল আবেদীন এ প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর দল সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী আছে। তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে দলের হয়ে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করবেন।

রাশেদ খান মেননের জন্মস্থান হওয়ায় এলাকায় তাঁর দল ওয়ার্কার্স পার্টির প্রভাব চোখে পড়ার মতো। সংগঠনটির জেলা শাখার সভাপতি নজরুল হক নিলু বলেন, এই আসন তাঁদেরই ছিল। সবশেষ নির্বাচনে জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান নৌকা প্রতীক পেলেও আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁর পক্ষে কাজ করেননি। এমন পরিস্থিতিতেও তাঁর দল আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত