Ajker Patrika

ডুমুরিয়ার চুই ঝালে মাতবে থাইল্যান্ডও

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৩৯
ডুমুরিয়ার চুই ঝালে মাতবে থাইল্যান্ডও

চুই বা চই ঝাল। খুলনা, সাতক্ষীরায় দূর অতীত থেকেই রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে চুই। তবে এখন এর কদর সারা দেশেই। মাংসের রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তোলা এই মসলা রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় চুই ঝাল নামে সুপরিচিত। খিচুড়ি ও মুড়ি মাখতেও এটি ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন তরকারিতেও দেওয়া যায় চুই ঝাল। অচিরেই এই চুই ঝালের গুঁড়া মসলা আসছে বাজারে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডলের উদ্যোগে এ মসলা শুধু দেশের বাজারেই নয়, যাবে দেশের বাইরে থাইল্যান্ডেও।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় নবদ্বীপ ও নিউটন চুই চাষ শুরু করেন। এরপর তাঁরা চারাগাছ বিক্রি করছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুই ঝালের গুঁড়া তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। প্রথম চালান তাঁরা পাঠাচ্ছেন থাইল্যান্ডে। মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চুই ঝাল সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৪-৫টি চুই গ্রাম হবে। এই গ্রামের প্রত্যেক সদস্যের বাড়িতে অন্তত দুটি চুই ঝালের গাছ লাগানো হবে।’

শিকড়, বাকল ও ডাল রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে পিষে চুই ঝালের গুঁড়া মসলা তৈরি করছেন নবদ্বীপ ও নিউটন। নবদ্বীপ জানালেন, ২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালের বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেন তাঁরা। ২০১৮ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের কাছে চুইয়ের চারা বিক্রির পাশাপাশি এর চাষাবাদে উৎসাহ দিতে থাকেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু মুশকিল হলো, চুই লতা কাটার পর এর শিকড়, বাকল ও ডাল বেশি দিন রাখা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে শুকিয়ে গেলে এটিকে আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। চুইয়ের কাঁচা ডাল, শিকড় ও লতা কুরিয়ারে পাঠাতে গেলে অনেক সময় দু-তিন দিন সময় লেগে যায়। তখন চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়। এর পরপরই তাদের মাথায় গুঁড়া চুই ঝালের ভাবনা আসে। দেড় বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী চুই ঝাল খেতে সুস্বাদু। চুই ঝালের গাছ দুই রকমের। একটি ঝুটো চুই, যা মাটিতে হয়। আরেকটি গাছ চুই, যা অন্য গাছের সঙ্গে লতার মতো উঠে যায়। দুই চুই ঝালের দুই রকম স্বাদ। তবে ঝুটো চুই ঝালে স্বাদ বেশি।

নবদ্বীপ জানান, চুই ঝাল চিবিয়ে খেয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায়, গুঁড়া মসলায় তা পাওয়া যাবে না। তবে গুঁড়া মসলায়ও দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে। তাদের উদ্ভাবিত চুইয়ের গুঁড়া থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে শিগগিরই। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণ বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

নিউটন মণ্ডল বলেন, চুই গাছের শিকড় ও ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় না। তাই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের গুঁড়া তৈরির কাজ শুরু করেন তাঁরা। তিনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে চুই ঝালের গুঁড়া থাইল্যান্ডে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। সাড়া পাওয়া গেলে সেখানে এটি বাজারজাত করা হবে।

নিউটন বলেন, ‘১২ কেজি চুইয়ের শিকড় ও ডাল শুকিয়ে এক কেজি গুঁড়া তৈরি হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা গুঁড়ার মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি। মানভেদে কেজি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় এই মসলা বিক্রি করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

পাগল বেশে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সম্পর্কে যা জানা গেল

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী কে এই আনিসুজ্জামান চৌধুরী

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের ফলকার তুর্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত