হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের সাত উপজেলার ৫৭ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেই এই নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা চলবে ভোট গ্রহণ। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ২১টি ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়।

জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, চুনারুঘাট উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৪৮ ও মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫৬ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও চুনারুঘাট উপজেলার ৯০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪১৪ ও ৩০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৬১ এবং মাধবপুর উপজেলার ৯৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৩৫ ও ৩৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৪৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দুই উপজেলার ২০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভোটের মাঠে দুই উপজেলায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মাঠে কাজ করবে ৬ প্লাটুন বিজিবি (১৯৮ জন), ১ হাজার ২৯৭ জন পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৮৫ জন আনসার এবং পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের ‘মোবাইল-স্ট্রাইকিং’ ফোর্স। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে কয়েক প্লাটুন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) টিম। ১৫ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং আটজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

মৌলভীবাজার: পঞ্চম ধাপে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ। শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন মোট ১৮টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৭ জনসহ মোট ৪৬৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

মোট ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৮ জন। মোট ৯৫টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা ১৩০ এবং সাধারণ সদস্য ৩৯০

মোট ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৩ জন। মোট ১০০টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দুটি উপজেলায় তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ দলও কাজ করবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তিন উপজেলার ১৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ১৩২ জন প্রার্থী। তিন উপজেলায় ১৮২ কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৮২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই হাওর এলাকায় দুর্গম ভোটকেন্দ্র। যেসব ভোটকেন্দ্র অতি দুর্গম সেসব কেন্দ্রে গতকাল থেকেই পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করবেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের আটজন মুখ্য বিচারক।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার জানান, অতি দুর্গম এলাকায় যেসব ভোটকেন্দ্র রয়েছে সেসব কেন্দ্রে অন্যান্য সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় বাড়তি পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভোট সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মাঠে থাকবে বিজিবি, র‍্যাব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়াও তাৎক্ষণিক নির্বাচন অপরাধ বিচার করার জন্য ৮ জন বিচারিক হাকিম মাঠে আছেন।

পঞ্চম দফায় যাতে কোনো প্রকার সহিংসতা না ঘটে এ জন্য পুলিশ বাহিনীকে বিভিন্ন স্তরে সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত ৪ দফা নির্বাচনগুলোতেও সুনামগঞ্জের কোথাও কোনো বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করি এবারও কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।’