রিমন রহমান ও শরীফুল ইসলাম ইন্না সিরাজগঞ্জ থেকে
ক্ষমতার দম্ভ যেন পেয়ে বসেছিল সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফকে (৩২)। মেডিকেল কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। ইন্টার্ন চিকিৎসক থাকাকালে রোগীর পরিবারকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করতেন। শিক্ষক হওয়ার পর হরহামেশাই পিস্তল নিয়ে ক্লাসে যেতেন।
শরীফকে নিয়ে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ক্যানটিনে বাকি খেতেন। টাকা চাইলে গুলি করার ভয় দেখাতেন। ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণও ছিল শরীফের নিত্যদিনের ঘটনা। তবে এসব জেনেও নীরব ছিলেন অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী।
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গত সোমবার বিকেলে ক্লাস নেওয়ার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে (২২) গুলি করেন শিক্ষক শরীফ। এই ঘটনার পর অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে পুলিশ বাদী হয়ে শিক্ষক শরীফের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাতের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন আরেকটি মামলা করেন। এসব মামলায় শরীফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাজ উদ্দিন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সদর আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
স্বীকারোক্তিতে যা বললেন
শিক্ষক শরীফ স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, তিনিই ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন। তবে এটি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। গুলির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সঙ্গেও কথা বলেছেন শরীফ। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। দুটোই পিস্তল। সে দুটির লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। ছাত্রীদের রাতে ফোন করে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ছাত্রীদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে তিনি এটা করতেন।
কে এই রায়হান শরীফ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান শরীফ। সিরাজগঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষকদের করা ‘প্রফেসরস গার্ডেন’ নামে ভবনে মা-বাবার সঙ্গে থাকেন শরীফ। তিনি পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক)। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি রামেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ইন্টার্নশিপ শেষ করে রাজশাহী থেকে এসে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। তবে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে চাকরিচ্যুত হন। এক নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেছিলেন শরীফ। সেই বিয়ে টেকেনি। পরে ২০২১ সালে বিসিএস (বিশেষ বিসিএস) দিয়ে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
সার্বক্ষণিক সঙ্গী পিস্তল
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গত সোমবারের গুলির ঘটনার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, রামেকে থাকাকালে শিক্ষার্থীদের মারধর এবং হরহামেশাই গভীর রাতে ক্যাম্পাসে গুলি ফোটাতেন শরীফ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন শরীফ। সেদিন ওই ওয়ার্ডে জয় নামের এক রোগী মারা যান। এর প্রতিবাদ করলে জয়ের স্বজনদের দিকে পিস্তল তাক করেন শরীফ। এর এক সপ্তাহ পর ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে মহসিন আলী নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে বিনা চিকিৎসায়। ওই দিনও মহসিনের দুই ছেলেকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখান শরীফ। সেই সময় মহসিনের স্ত্রী মানববন্ধনে বলেছিলেন, ‘একজন ইন্টার্ন আমার ছেলেদের গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে গুলি না করে আমার ছেলেদের পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।’
এই ঘটনার দুই দিন পর ১৫ নভেম্বর রামেক হাসপাতালে দুই রোগীকে মারধর করেছিলেন শরীফ। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ‘শরীফ ছাত্রজীবনেই একটা মেশিন (অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র) কাছে রাখত।’
সেই সময়ে রামেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কামাল হোসেন। গতকাল যোগাযোগ করা হলে শরীফ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি (শরীফ) একটু পাগলাটে-রগচটা টাইপের মানুষ ছিলেন। পার্টি টাইমে মজা-মাস্তি করতেন। পরে বিসিএস দিয়ে তো স্বাভাবিক হচ্ছিলেন। হঠাৎ কাল নিউজে দেখলাম, মেডিকেল কলেজে ছাত্রকে গুলি করার ঘটনা।’
গতকাল মনসুর মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীফ মাঝে মাঝে ছাত্রীনিবাসেও যেতেন। ছাত্রীদের মাদকদ্রব্য সেবনের আহ্বান জানাতেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আড্ডার সময়ও অস্ত্র বের করে রাখতেন টেবিলের ওপর। গত ১০ মাসে কলেজ ক্যানটিনে প্রায় ১১ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন শরীফ। টাকা চাইলে ক্যানটিনের মালিক স্বপন ইসলামকেও গুলি করার ভয় দেখাতেন। স্বপন ইসলাম বলেন, ‘টাকা চাইলে ডা. রায়হান কয় পরে দিমু। ধমক দেয়। পিস্তল দেখায় মাঝেমধ্যে।’
সব জেনেও চুপ ছিলেন অধ্যক্ষ
শরীফের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারপরও তিনি ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা লিখিত কিংবা মৌখিক কোনোভাবেই আমাকে আগে কিছু জানায়নি। তবে এই শিক্ষকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা অন্য মাধ্যমে শুনেছিলাম। এ জন্য তাঁকে বদলির চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাঁর বদলি হয়নি।’
তবে শরীফের গুলির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. বায়জীদ খুরশীদ সাংবাদিকদের বলেন, কলেজে শরীফ এ ধরনের আচরণ করেন, তা অধ্যক্ষ লিখিত বা মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
রায়হানের ব্যাগে যা ছিল
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রকে গুলি করার পরে শরীফকে ঘরে আটকে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের কেউ কেউ উত্তমমধ্যমও দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই কক্ষ থেকে পড়ে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া তার ব্যাগটিও জব্দ করা হয়। এই ব্যাগের ভেতরে আরও একটি পিস্তল, ৮১টি গুলি,৪টি ম্যাগাজিন,২টি বিদেশি কাতানা (ছোরা) ও ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু জব্দ করা হয়।
এসব অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে গত সোমবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুজন উপপরিদর্শক তদন্ত করছেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে
এদিকে শিক্ষক শরীফের শাস্তির দাবিতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ চলছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কলেজে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। বিক্ষোভের কারণে সিরাজগঞ্জ-নলকা সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিক্ষোভস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী। তিনিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তবে পরে কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। রায়হান শরীফকে চাকরিচ্যুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ক্ষমতার দম্ভ যেন পেয়ে বসেছিল সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফকে (৩২)। মেডিকেল কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। ইন্টার্ন চিকিৎসক থাকাকালে রোগীর পরিবারকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করতেন। শিক্ষক হওয়ার পর হরহামেশাই পিস্তল নিয়ে ক্লাসে যেতেন।
শরীফকে নিয়ে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ক্যানটিনে বাকি খেতেন। টাকা চাইলে গুলি করার ভয় দেখাতেন। ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণও ছিল শরীফের নিত্যদিনের ঘটনা। তবে এসব জেনেও নীরব ছিলেন অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী।
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গত সোমবার বিকেলে ক্লাস নেওয়ার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে (২২) গুলি করেন শিক্ষক শরীফ। এই ঘটনার পর অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে পুলিশ বাদী হয়ে শিক্ষক শরীফের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাতের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন আরেকটি মামলা করেন। এসব মামলায় শরীফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাজ উদ্দিন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সদর আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
স্বীকারোক্তিতে যা বললেন
শিক্ষক শরীফ স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, তিনিই ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন। তবে এটি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। গুলির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সঙ্গেও কথা বলেছেন শরীফ। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। দুটোই পিস্তল। সে দুটির লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। ছাত্রীদের রাতে ফোন করে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ছাত্রীদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে তিনি এটা করতেন।
কে এই রায়হান শরীফ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান শরীফ। সিরাজগঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষকদের করা ‘প্রফেসরস গার্ডেন’ নামে ভবনে মা-বাবার সঙ্গে থাকেন শরীফ। তিনি পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক)। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি রামেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ইন্টার্নশিপ শেষ করে রাজশাহী থেকে এসে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। তবে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে চাকরিচ্যুত হন। এক নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেছিলেন শরীফ। সেই বিয়ে টেকেনি। পরে ২০২১ সালে বিসিএস (বিশেষ বিসিএস) দিয়ে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
সার্বক্ষণিক সঙ্গী পিস্তল
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গত সোমবারের গুলির ঘটনার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, রামেকে থাকাকালে শিক্ষার্থীদের মারধর এবং হরহামেশাই গভীর রাতে ক্যাম্পাসে গুলি ফোটাতেন শরীফ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন শরীফ। সেদিন ওই ওয়ার্ডে জয় নামের এক রোগী মারা যান। এর প্রতিবাদ করলে জয়ের স্বজনদের দিকে পিস্তল তাক করেন শরীফ। এর এক সপ্তাহ পর ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে মহসিন আলী নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে বিনা চিকিৎসায়। ওই দিনও মহসিনের দুই ছেলেকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখান শরীফ। সেই সময় মহসিনের স্ত্রী মানববন্ধনে বলেছিলেন, ‘একজন ইন্টার্ন আমার ছেলেদের গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে গুলি না করে আমার ছেলেদের পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।’
এই ঘটনার দুই দিন পর ১৫ নভেম্বর রামেক হাসপাতালে দুই রোগীকে মারধর করেছিলেন শরীফ। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ‘শরীফ ছাত্রজীবনেই একটা মেশিন (অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র) কাছে রাখত।’
সেই সময়ে রামেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কামাল হোসেন। গতকাল যোগাযোগ করা হলে শরীফ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি (শরীফ) একটু পাগলাটে-রগচটা টাইপের মানুষ ছিলেন। পার্টি টাইমে মজা-মাস্তি করতেন। পরে বিসিএস দিয়ে তো স্বাভাবিক হচ্ছিলেন। হঠাৎ কাল নিউজে দেখলাম, মেডিকেল কলেজে ছাত্রকে গুলি করার ঘটনা।’
গতকাল মনসুর মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীফ মাঝে মাঝে ছাত্রীনিবাসেও যেতেন। ছাত্রীদের মাদকদ্রব্য সেবনের আহ্বান জানাতেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আড্ডার সময়ও অস্ত্র বের করে রাখতেন টেবিলের ওপর। গত ১০ মাসে কলেজ ক্যানটিনে প্রায় ১১ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন শরীফ। টাকা চাইলে ক্যানটিনের মালিক স্বপন ইসলামকেও গুলি করার ভয় দেখাতেন। স্বপন ইসলাম বলেন, ‘টাকা চাইলে ডা. রায়হান কয় পরে দিমু। ধমক দেয়। পিস্তল দেখায় মাঝেমধ্যে।’
সব জেনেও চুপ ছিলেন অধ্যক্ষ
শরীফের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারপরও তিনি ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা লিখিত কিংবা মৌখিক কোনোভাবেই আমাকে আগে কিছু জানায়নি। তবে এই শিক্ষকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা অন্য মাধ্যমে শুনেছিলাম। এ জন্য তাঁকে বদলির চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাঁর বদলি হয়নি।’
তবে শরীফের গুলির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. বায়জীদ খুরশীদ সাংবাদিকদের বলেন, কলেজে শরীফ এ ধরনের আচরণ করেন, তা অধ্যক্ষ লিখিত বা মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
রায়হানের ব্যাগে যা ছিল
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রকে গুলি করার পরে শরীফকে ঘরে আটকে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের কেউ কেউ উত্তমমধ্যমও দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই কক্ষ থেকে পড়ে থাকা একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া তার ব্যাগটিও জব্দ করা হয়। এই ব্যাগের ভেতরে আরও একটি পিস্তল, ৮১টি গুলি,৪টি ম্যাগাজিন,২টি বিদেশি কাতানা (ছোরা) ও ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু জব্দ করা হয়।
এসব অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে গত সোমবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুজন উপপরিদর্শক তদন্ত করছেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে
এদিকে শিক্ষক শরীফের শাস্তির দাবিতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ চলছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কলেজে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। বিক্ষোভের কারণে সিরাজগঞ্জ-নলকা সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিক্ষোভস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী। তিনিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তবে পরে কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। রায়হান শরীফকে চাকরিচ্যুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে