জাহীদ রেজা নূর
৪ ডিসেম্বর থেকে স্পষ্ট হতে থাকে, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যাচ্ছে, যদিও বাইরে তাদের আস্ফালন অব্যাহত থাকে। এদিন সকালে জেনারেল ইয়াহিয়া ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৮ মিনিটব্যাপী বেতার ভাষণে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। এখন সাড়া দেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে দুশমনকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার।’ একই দিনে লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যই হচ্ছে, নির্যাতিতের পক্ষে দাঁড়ানো।’ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি এলাকা দখল করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই, তবে নিশ্চিতভাবেই আমরা চাই, বাংলাদেশ স্বাধীন হোক।’
এই দিন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তাঁরা অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন।
এই দিন ঢাকায় প্রচণ্ড বিমান হামলা শুরু হয়। যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি প্রচারণা অব্যাহত থাকে। পিপিপি ও পিপিআইয়ের বরাত দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি থেকে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ভারতীয় বিমানগুলো ঢাকার পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও বিমানবন্দরের ওপর বেলা ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৫ বার হামলা চালায়। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি ভারতীয় বিমানকে ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তান। মিথ্যে প্রচার দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হতে চাইছিল পাকিস্তানিরা। এদিন পাক-ভারত যুদ্ধ থামানোর জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়।
৩ ডিসেম্বর থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী নানা দিক দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি মূল ঘাঁটিগুলো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল। প্রত্যেকটি পাকিস্তানি ঘাঁটির সামনে গোলন্দাজ বাহিনীর কিছু লোক রেখে যাওয়া হয়। তারা মাঝে মাঝেই ঘাঁটিতে থাকা পাকিস্তানিদের উদ্দেশে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। এতে পাকিস্তানিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই কৌশলের ফলে তারা বুঝতেই পারেনি যে মূল বাহিনী তাদের পাশ কাটিয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ দিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রচণ্ড বিমান হামলা চালায়। এতে বিমানবন্দরগুলো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ দিনে আলবদর বাহিনী কয়েকটি পথসভা করে। সেই পথসভায় ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বুদ্ধিজীবীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন এবং আল বদরদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। সেদিন এক যুক্ত বিবৃতিতে ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম বলেন, ‘হিন্দুস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে এসে হিন্দুস্তান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’
এদিকে পাকিস্তানের ওপর ভারতীয় হামলার নিন্দা জানায় চীন। হংকং থেকে এপিপি এই খবরটি পরিবেশন করে। গণচীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পেং-ফি বলেন, ‘সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থন ও অনুপ্রেরণার দরুন ভারত বিশ্বের নিন্দায় কর্ণপাত না করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম বহাল রেখেছে।’ স্পষ্টই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলছিলেন।
যুদ্ধের ফ্রন্টগুলোয় তখন পাকিস্তানি বাহিনীর অসহায়ত্ব ফুটে উঠছে।
সূত্র: গোলাম মুরশিদ, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর, একটি নির্দলীয় ইতিহাস; আমির হোসেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক।
৪ ডিসেম্বর থেকে স্পষ্ট হতে থাকে, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যাচ্ছে, যদিও বাইরে তাদের আস্ফালন অব্যাহত থাকে। এদিন সকালে জেনারেল ইয়াহিয়া ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৮ মিনিটব্যাপী বেতার ভাষণে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। এখন সাড়া দেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে দুশমনকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার।’ একই দিনে লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যই হচ্ছে, নির্যাতিতের পক্ষে দাঁড়ানো।’ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি এলাকা দখল করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই, তবে নিশ্চিতভাবেই আমরা চাই, বাংলাদেশ স্বাধীন হোক।’
এই দিন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তাঁরা অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন।
এই দিন ঢাকায় প্রচণ্ড বিমান হামলা শুরু হয়। যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি প্রচারণা অব্যাহত থাকে। পিপিপি ও পিপিআইয়ের বরাত দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি থেকে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ভারতীয় বিমানগুলো ঢাকার পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও বিমানবন্দরের ওপর বেলা ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৫ বার হামলা চালায়। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি ভারতীয় বিমানকে ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তান। মিথ্যে প্রচার দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হতে চাইছিল পাকিস্তানিরা। এদিন পাক-ভারত যুদ্ধ থামানোর জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়।
৩ ডিসেম্বর থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী নানা দিক দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি মূল ঘাঁটিগুলো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল। প্রত্যেকটি পাকিস্তানি ঘাঁটির সামনে গোলন্দাজ বাহিনীর কিছু লোক রেখে যাওয়া হয়। তারা মাঝে মাঝেই ঘাঁটিতে থাকা পাকিস্তানিদের উদ্দেশে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। এতে পাকিস্তানিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই কৌশলের ফলে তারা বুঝতেই পারেনি যে মূল বাহিনী তাদের পাশ কাটিয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ দিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রচণ্ড বিমান হামলা চালায়। এতে বিমানবন্দরগুলো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ দিনে আলবদর বাহিনী কয়েকটি পথসভা করে। সেই পথসভায় ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বুদ্ধিজীবীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন এবং আল বদরদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। সেদিন এক যুক্ত বিবৃতিতে ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম বলেন, ‘হিন্দুস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে এসে হিন্দুস্তান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’
এদিকে পাকিস্তানের ওপর ভারতীয় হামলার নিন্দা জানায় চীন। হংকং থেকে এপিপি এই খবরটি পরিবেশন করে। গণচীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পেং-ফি বলেন, ‘সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থন ও অনুপ্রেরণার দরুন ভারত বিশ্বের নিন্দায় কর্ণপাত না করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম বহাল রেখেছে।’ স্পষ্টই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলছিলেন।
যুদ্ধের ফ্রন্টগুলোয় তখন পাকিস্তানি বাহিনীর অসহায়ত্ব ফুটে উঠছে।
সূত্র: গোলাম মুরশিদ, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর, একটি নির্দলীয় ইতিহাস; আমির হোসেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে