টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়কের নাগরপুর উপজেলার ভাদ্রা ইউনিয়নের টেংরিপাড়া গ্রামে নয়নদী শাখা খালের ওপর বেইলি সেতুটি দিয়ে পেঁয়াজভর্তি ট্রাক পারাপারের সময় পাটাতন ভেঙে গেছে। সেতু ভেঙে পড়ায় আটকে গেছে আরিচা থেকে আসা টাঙ্গাইলগামী ট্রাকটি। গতকাল বুধবার সকালে এ ঘটনার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যান চলাচল। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে সেতুর দুই পারের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য।

এ নিয়ে চলতি মাসেই তিনবার ভেঙেছে সেতুটি। ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় এবং দায়সারা সংস্কারের কারণে কয়েক দিন পরপরই এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 
২০১৩ সালে ধলেশ্বরী সেতু চালু হওয়ার পর এই সড়ক ব্যবহার বেড়ে যায় কয়েক গুণ। টাঙ্গাইল থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট যেতে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা এড়াতে এ সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে ঢাকার নবীনগর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ হয়ে দীর্ঘপথ যাত্রার শেষ হয়। এতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মালবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস এই সড়ক ব্যবহার করে টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। এ ছাড়া পদ্মার ওপারের রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ কয়েকটি জেলায় চলাচলের পথ সুগম হয়। অপরদিকে প্রতিদিন কয়েক শ সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ক্ষুদ্র যানবাহনগুলো টাঙ্গাইল-আরিচা-পাটুরিয়া এলাকায় চলাচল করছে।

এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেইলি ব্রিজের অবস্থা নাজুক হওয়ায় প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক যানবাহনকে চলতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। সেতুটিতে স্টিলের পাটাতন ক্ষয়ে গেছে। ফলে মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন প্রায়ই চাকা পিছলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ভারী যানবাহন উঠলে রীতিমতো কেঁপে ওঠে পুরো সেতু।

এ ছাড়া ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ হলেও তা উপেক্ষা করে প্রতিদিন কয়েক শ ভারী যান চলাচল করছে। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 
চলতি বছরের ৮ মার্চ একই স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুর সেই স্থানে সংস্কারের দুদিন পরেই আবার ভেঙে যায়। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সেতুর অন্য স্থানে পেঁয়াজভর্তি একটি ট্রাক আটকা পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ আগস্ট বালুভর্তি ট্রাক পারাপারের সময় পাটাতন ভেঙে সেতুর মাঝখানেই আটকে যায়। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেতুটির অন্য স্থানে আবারও দুর্ঘটনা ঘটে।

বিভিন্ন স্থানে ভাঙা থাকার কারণে গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। 
ভাদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী বলেন, ‘চলতি মার্চ মাসেই দুবার সংস্কার করা হয়েছে, কিন্তু কাজের মান ভালো না হওয়ায় আবারও বেইলি ব্রিজ ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু। তবে সেতুর ওপর দিয়ে আট টনের বেশি মালামাল বহনকারী ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে না পারলে বারবারই এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলিউল হোসেন বলেন, ‘সেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে প্রতিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টেংরীপাড়া সেতুতেই শুধু বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চলছে। মেকানিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি ব্রিজটি অতি দ্রুত মেরামত করা হবে।’

জানতে চাইলে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওহিদুজ্জামান মিলন গতকাল দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে মেরামতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। সাময়িকভাবে মানুষ চলাচলের উপযোগী করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’