Ajker Patrika

ঋণের কিস্তি আদায়ে উদ্বিগ্ন ব্যাংকাররা

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০১
ঋণের কিস্তি আদায়ে উদ্বিগ্ন ব্যাংকাররা

করোনা সংক্রমণের পর থেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে কিস্তি আদায় কমেছে। ফলে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিস্তি আদায়ে আরোপিত শিথিলতাও বিদায়ী বছরে শেষ হয়েছে। কিন্তু কিস্তি আদায়ে শিথিলতা তুলে নেওয়া এবং ওমিক্রনের বিস্তারের আভাসকে কেন্দ্র করে খেলাপি ঋণ বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে খোদ ব্যাংকারদের মাঝেও উদ্বেগ বিরাজ করছে। খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা সত্ত্বেও গত বছরে তা কমানো সম্ভব হয়নি। বরং বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। এমনকি সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা দিয়েছে। আর ঋণ পরিশোধে দিয়েছে বিশেষ ছাড়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রণোদনা সুবিধা এবং কিস্তি আদায়ে বিশেষ শিথিলতা আরোপ করে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।’

সেলিম আর এফ হোসেন আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে ও দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে। ব্যবসা স্বাভাবিক হচ্ছে। বিনিয়োগ, আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে। ঋণের কিস্তি আদায়ে শিথিলতা আস্তে আস্তে তুলে দেওয়া দরকার ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটাই করেছে। এখন ঋণ আদায় না হলে এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, তা ব্যাংকিং খাতের জন্য কিছুটা হলেও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ওমিক্রমণের সংক্রমণ আশঙ্কা নিয়ে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ওমিক্রন ডেলটার মতো ভয়ংকর হবে না। ইতিমধ্যে দুই ডোজ টিকা দেওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। বুস্টার ডোজও শুরু করা হয়েছে। এ জন্য হয়তো বা লকডাউন পর্যায়ে যেতে হবে না। আর যদি যেতেই হয় তবে সেটা অর্থনীতির জন্য খারাপ ও ঋণ আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলব। কারণ, মানুষের আয় বাধাগ্রস্ত হলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়তে পারে, যা ব্যাংকের জন্য খারাপ।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, ঋণ আদায়ে শিথিলতা কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করবে অর্থনীতি সচল থাকার ওপর।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণের বিষয়ে আগাম কিছু বলা যাবে না।

প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব জাবিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঋণের কিস্তি আদায়ে শিথিলতা তুলে না দিলে ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তবে শিথিলতা তুলে দেওয়ায় ঋণ আদায় বাড়বে। আর খেলাপি ঋণ যদি বেড়েও যায় তবু উদ্বেগের কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে।’

প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. জাহিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্প্রতি অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ঋণ আদায় বেড়েছে। তবে কোনো কারণে যদি আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়, তখন ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, মানুষের কাছ থেকে জোর করে ঋণ আদায় করা যায় না। এটা যেকোনো ব্যাংকের জন্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত