কদিন আগে এক পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এক কাউন্সিলর নাজমুল হাসান পাপনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর বক্তব্য শুরুই করলেন চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোর দিয়ে। শুধু পাপন কেন, এই স্কোর বিসিবির সব দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তির কাছেই ছিল অস্বস্তিদায়ক। তবে বিসিবি সভাপতি এজিএমে নিয়মিত কাউন্সিলরদের কাছে টেস্ট উন্নতিতে লিখিত আকারে বাস্তবধর্মী সুপারিশ আহ্বান করেন।
টেস্ট আঙিনায় দিনের পর দিন বাংলাদেশের হোঁচট খেতে দেখে কেউ কেউ নিজের আগ্রহে সুপারিশ করেও থাকেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হারের পর ক্রিকেটারদের কল্যাণ সংগঠন কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক ২০টি সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন বিসিবিতে। তাঁর বেশির ভাগ সুপারিশই ছিল যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবধর্মী। সে সব সুপারিশ ই-মেইলের কর্তাদের ইনবক্সেই হয়তো পড়ে আছে বা ডিলিটও হয়ে যেতে পারে!
টেস্টে বছরের পর বছর ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার তির কম সইতে হয়নি মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে। ২০২১ সালে বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো ঢেলে সাজাতে বিসিবি সভাপতিকে অনেকগুলো প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাবপত্রে ছিল বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো আমূল বদলে ফেলার অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ। টিম ম্যানেজমেন্টে কারা থাকবেন, কীভাবে কাজ করবে এই ম্যানেজমেন্ট, কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ, ম্যাচ ফি, বেতন, দল গঠনের প্রক্রিয়া, কখন শুরু হবে, খেলার ধরন কেমন হবে, ম্যাচের পয়েন্ট পদ্ধতি, ম্যাচের বল, উইকেট—সবকিছু ছিল নান্নুর সুপারিশে।
সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে নান্নু কাল আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন, ‘(বাস্তবায়ন) হবে হবে আর করে হয়নি।’ দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে স্পষ্টতই হতাশা তাঁর কণ্ঠে, ‘একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে জাতি, যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ভালো কাঠামো নেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালো এস্টাবলিশড হলেই না আপনি টেস্ট ভালো খেলবেন।’
সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান সামনে আনলেন আরেকটি বিষয়, ‘জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যদি খেলত, তখন উন্নতি হতো। ক্রিকেট বোর্ড তো আর বলে দেয় না এ খেলবে, সে খেলবে না। খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর মূল কাজ ক্রিকেটারদের।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ব্যস্ত সূচি, তাতে ফাঁকা সময় থাকলেও খেলা বেশির ভাগ তারকা ক্রিকেটার খুব একটা আগ্রহ পান না প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার। ক্রিকেট বোর্ডও খেলোয়াড়দের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট সামনে এনে তাঁদের চাপ দিতে চায় না। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা নিয়ে একবার এই প্রতিবেদককে সাকিব আল হাসান অকপটেই বলেছিলেন, ‘আমাদের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললে সামান্যতম উন্নতি হবে, সেটা বিশ্বাস করি না।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স যে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে খুব বেশি কাজে দেয় না, সে অভিযােগ ঘরোয়া ক্রিকেটের এক নিয়মিত মুখের। তিনি বলছিলেন, ‘জাতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই তো অটো চয়েস, তারা কেন জাতীয় লিগ, বিসিএল খেলবে? আর এখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে কী, কেউ তো মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলে না। চার দিন খেলে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ বেতন ৩৫ হাজার টাকা, যেটা পায় ২০ ক্রিকেটার। এই বেতন দিয়ে গাড়ির তেলের খরচও হয় না! যে কোচিং স্টাফ থাকে, তাঁরাও যুগোপযোগী নন। সালাহউদ্দিন স্যার, সুজন ভাইয়ের (খালেদ মাহমুদ) মতো সফল কোচরা প্রিমিয়ার লিগে ৩০-৩৫ লাখ টাকা নেন। তাঁরা কি এখানে ১-২ লাখ টাকার জন্য আসবেন?’
২০১৯ সালে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পর বিসিবি অবশ্য ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি, বেতন, সুযোগ-সুবিধা আগের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়েছে। এখানে বিসিবির বরাদ্দও বেড়েছে। জাতীয় লিগে ২০২৩ সালেই খরচ হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। যদিও এই খরচ ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের অধীনে থাকা বিদেশি কোচদের বেতনের সমান।
তাঁরা কী ভাবছেন
টেস্টে বাংলাদেশ খারাপ খেললে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান নিয়ে কথা ওঠে। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো ঢেলে সাজানোর দাবি ওঠে। বিচ্ছিন্নভাবে সুপারিশও আসে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয় কি? কিংবা কী করা উচিত। সাবেক তারকা কিংবা ক্রিকেট সংগঠকেরা কী ভাবছেন—
যে দোষ চাপানো হচ্ছে অনেকাংশে সত্য
আহমেদ সাজ্জাদুল আলম, চেয়ারম্যান, টুর্নামেন্ট কমিটি,আহমেদ সাজ্জাদুল আলম
গত তিন বছরে কিছুটা এগিয়ে নিয়েছি। খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি বা অন্যান্য যে টাকাপয়সার ব্যাপার আছে, আম্পায়ারসহ—অনেক বাড়িয়েছি, যাতে সবাই লংগার ভার্সন ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হয়। ভালো আউটফিল্ড, ভালো উইকেট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ডিউক, এসজি, কোকাবুরা—তিন ধরনের বলই দিয়েছি। থাকা-যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থার চেষ্টা করেছি।
একটা জায়গায় মিসিং হচ্ছে, সেটা দর্শক ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার। মিডিয়া গেলে কিন্তু মানুষের আগ্রহ বাড়ে, পৃষ্ঠপোষকেরাও আসে।
টেস্টের চ্যালেঞ্জ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিতে হলে কী চাই? ভালো প্রতিপক্ষ। আমি কীভাবে ভালো প্রতিপক্ষ দেব? এখানে তারাই খেলেছে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে। পার্থক্য হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যখন তারা খেলছে, তারা ভালো প্রতিপক্ষ মোকাবিলা করছে। আমি শ্রীলঙ্কার মানের ক্রিকেটার কোত্থেকে দেব? হয়তো খেলার একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারব।
তারা যে ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর দোষ চাপাচ্ছে, এটা অনেকাংশে সত্য। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো সমাধান কিসে সেটাও যদি জানা যেত তাহলে ভালো হতো। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যা করার তা তো করছি। খেলার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো তাদেরও দায়িত্ব। টাকাপয়সা আরও বাড়ানোর ইচ্ছে আমাদের। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকতে হবে। তবে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। অনেক কাজ বাকি থেকে গেছে। মাঠ যদি আরও উন্নত করতে পারতাম, আমাদের মৌসুমও ছোট। তবে তারকা খেলোয়াড়দের যদি আরও বেশি পাওয়া যেত, তাহলে খেলা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। তাদের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টিও অবশ্য দেখতে হবে।
গতি বাড়াতে হবে জেলা পর্যায় থেকে
গাজী আশরাফ হোসেন
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে আমার এর আগে ছিল দূর থেকে পর্যবেক্ষণ, আগামী বছরের পর আমার পর্যবেক্ষণ আরও পরিষ্কার হবে। এখন তুলনামূলক আগের চেয়ে ভালো উইকেটে খেলা হচ্ছে। ম্যাচ ফি অনেক বেড়েছে, তবে সেটি পর্যাপ্ত কি না জানি না। বিসিএলে ডিউক বলে খেলা হয়, এটা একটা ভালো ব্যাপার।
কোচিং স্টাফরা কতটুকু সময় পান একটা টুর্নামেন্টের জন্য দল প্রস্তুত করতে, এটা আমি নিশ্চিত না। খেলোয়াড়দেরও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বার্তা দেওয়া উচিত ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত থাকতে। টুর্নামেন্ট কমিটি ও গ্রাউন্ডস বিভাগের সঙ্গে একটা সমন্বয় থাকা উচিত ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের। ক্রিকেট ক্যালেন্ডার মাথায় রেখে যদি ভেঙে আয়োজন করা যায় প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট, ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ হবে। এতে হয়তো কিছুটা ছন্দ নষ্ট হতে পারে। আঞ্চলিক ক্রিকেট কাঠামো দাঁড় করাচ্ছে বোর্ড, সেটারও সমন্বয় হবে।
জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট যদি গতি পায়, তাহলে বিভাগীয় ক্রিকেটও গতি পাবে। বিভাগীয় ক্রিকেট গতি পেলে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও গতি আসবে। কোচদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, সংগঠকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকবে। প্রথম শ্রেণির কোচদের সঙ্গে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদেরও যোগসূত্র থাকা দরকার।
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি
রাজিন সালেহ
সবার আগে ট্রু উইকেট দিতে হবে। ঘরোয়া লিগে আম্পায়ারিং নিয়ে সব সময় বিতর্ক হয়, থার্ড আম্পায়ার রাখাও দরকার। ডিআরএস লাগে না। চার পাশে চারটি ভালো ক্যামেরা দিলেই হবে। বিরতিতে জাতীয় দলের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হকসহ দু-তিনজন খেলোয়াড় ছাড়া বেশির ভাগই চার দিনের ম্যাচ খেলতে আগ্রহ দেখায় না।
খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি। খেলোয়াড়েরা চিন্তা করে এত কম টাকা এখানে, এর চেয়ে আমি বিশ্রাম নেব, শরীরের যত্ন নেব—ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলব, এর চেয়ে বেশি টাকা পাব। একজন কোচ যদি পায় এক-দেড় লাখ টাকা, ওই কোচের মূল্য কী থাকে? অন্তত ৭-৮ লাখ টাকা পাওয়া উচিত। তাহলে কোচদের কাজের মান, দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে চালু করা উচিত। তখন ম্যাচের সংখ্যাও দ্বিগুণ হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিনিয়র টিম বা ‘এ’ দল ‘বি’ দলের টুর্নামেন্ট করা উচিত।
বর্তমান-ভবিষ্যৎ একসঙ্গে ভাবা দরকার
নাঈম ইসলাম
চাইলেই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো ফার্স্ট উইকেট বানানো সম্ভব নয় আমার। চাইলেই ওরকম বাউন্স, সুইংয়ের উইকেট বানানো সম্ভব নয়। আমাদের যা আছে, সেটা থেকে ভালো কিছুর চেষ্টা করা উচিত। এখন উইকেট সবুজও থাকে। প্রতিটি দলে ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে পারে, এমন তিনজন করে বোলার দরকার।
তাসকিনদের গতি আছে, ওরা তো ঘরোয়া লিগে খেলে না। টেস্টের খেলোয়াড় যদি উন্নতি করতে চান, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের এমন একটা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত, সে ১১টা ম্যাচ খেলবে এনসিএল ও বিসিএল মিলিয়ে—যেখান থেকে পুরো এক বছরের ভরণপোষণের অর্থ যেন সে পায়। তখন সে শুধু এদিকেই মনোনিবেশ করবে।
আমরা সব সময় শুধু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গিয়ে বর্তমানের কথা ভুলে যাই। নতুন খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করি, সে আমাদের ১০ বছর সার্ভিস দেবে। কিন্তু দেখা গেল বিনিয়োগ করতে করতে ৩-৪ বছর চলে গেল। পরে ওই খেলোয়াড়ও ভালো করল না। বর্তমানে যারা পারফর্ম করছে তাদের কথা চিন্তা করা উচিত। আমাদের বর্তমানও দরকার, ভবিষ্যৎও দরকার।
কদিন আগে এক পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এক কাউন্সিলর নাজমুল হাসান পাপনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর বক্তব্য শুরুই করলেন চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোর দিয়ে। শুধু পাপন কেন, এই স্কোর বিসিবির সব দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তির কাছেই ছিল অস্বস্তিদায়ক। তবে বিসিবি সভাপতি এজিএমে নিয়মিত কাউন্সিলরদের কাছে টেস্ট উন্নতিতে লিখিত আকারে বাস্তবধর্মী সুপারিশ আহ্বান করেন।
টেস্ট আঙিনায় দিনের পর দিন বাংলাদেশের হোঁচট খেতে দেখে কেউ কেউ নিজের আগ্রহে সুপারিশ করেও থাকেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হারের পর ক্রিকেটারদের কল্যাণ সংগঠন কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক ২০টি সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন বিসিবিতে। তাঁর বেশির ভাগ সুপারিশই ছিল যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবধর্মী। সে সব সুপারিশ ই-মেইলের কর্তাদের ইনবক্সেই হয়তো পড়ে আছে বা ডিলিটও হয়ে যেতে পারে!
টেস্টে বছরের পর বছর ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার তির কম সইতে হয়নি মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে। ২০২১ সালে বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো ঢেলে সাজাতে বিসিবি সভাপতিকে অনেকগুলো প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাবপত্রে ছিল বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো আমূল বদলে ফেলার অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ। টিম ম্যানেজমেন্টে কারা থাকবেন, কীভাবে কাজ করবে এই ম্যানেজমেন্ট, কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ, ম্যাচ ফি, বেতন, দল গঠনের প্রক্রিয়া, কখন শুরু হবে, খেলার ধরন কেমন হবে, ম্যাচের পয়েন্ট পদ্ধতি, ম্যাচের বল, উইকেট—সবকিছু ছিল নান্নুর সুপারিশে।
সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে নান্নু কাল আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন, ‘(বাস্তবায়ন) হবে হবে আর করে হয়নি।’ দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে স্পষ্টতই হতাশা তাঁর কণ্ঠে, ‘একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে জাতি, যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ভালো কাঠামো নেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালো এস্টাবলিশড হলেই না আপনি টেস্ট ভালো খেলবেন।’
সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান সামনে আনলেন আরেকটি বিষয়, ‘জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যদি খেলত, তখন উন্নতি হতো। ক্রিকেট বোর্ড তো আর বলে দেয় না এ খেলবে, সে খেলবে না। খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর মূল কাজ ক্রিকেটারদের।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ব্যস্ত সূচি, তাতে ফাঁকা সময় থাকলেও খেলা বেশির ভাগ তারকা ক্রিকেটার খুব একটা আগ্রহ পান না প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার। ক্রিকেট বোর্ডও খেলোয়াড়দের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট সামনে এনে তাঁদের চাপ দিতে চায় না। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা নিয়ে একবার এই প্রতিবেদককে সাকিব আল হাসান অকপটেই বলেছিলেন, ‘আমাদের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললে সামান্যতম উন্নতি হবে, সেটা বিশ্বাস করি না।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স যে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে খুব বেশি কাজে দেয় না, সে অভিযােগ ঘরোয়া ক্রিকেটের এক নিয়মিত মুখের। তিনি বলছিলেন, ‘জাতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই তো অটো চয়েস, তারা কেন জাতীয় লিগ, বিসিএল খেলবে? আর এখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে কী, কেউ তো মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলে না। চার দিন খেলে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ বেতন ৩৫ হাজার টাকা, যেটা পায় ২০ ক্রিকেটার। এই বেতন দিয়ে গাড়ির তেলের খরচও হয় না! যে কোচিং স্টাফ থাকে, তাঁরাও যুগোপযোগী নন। সালাহউদ্দিন স্যার, সুজন ভাইয়ের (খালেদ মাহমুদ) মতো সফল কোচরা প্রিমিয়ার লিগে ৩০-৩৫ লাখ টাকা নেন। তাঁরা কি এখানে ১-২ লাখ টাকার জন্য আসবেন?’
২০১৯ সালে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পর বিসিবি অবশ্য ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি, বেতন, সুযোগ-সুবিধা আগের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়েছে। এখানে বিসিবির বরাদ্দও বেড়েছে। জাতীয় লিগে ২০২৩ সালেই খরচ হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। যদিও এই খরচ ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের অধীনে থাকা বিদেশি কোচদের বেতনের সমান।
তাঁরা কী ভাবছেন
টেস্টে বাংলাদেশ খারাপ খেললে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান নিয়ে কথা ওঠে। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো ঢেলে সাজানোর দাবি ওঠে। বিচ্ছিন্নভাবে সুপারিশও আসে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয় কি? কিংবা কী করা উচিত। সাবেক তারকা কিংবা ক্রিকেট সংগঠকেরা কী ভাবছেন—
যে দোষ চাপানো হচ্ছে অনেকাংশে সত্য
আহমেদ সাজ্জাদুল আলম, চেয়ারম্যান, টুর্নামেন্ট কমিটি,আহমেদ সাজ্জাদুল আলম
গত তিন বছরে কিছুটা এগিয়ে নিয়েছি। খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি বা অন্যান্য যে টাকাপয়সার ব্যাপার আছে, আম্পায়ারসহ—অনেক বাড়িয়েছি, যাতে সবাই লংগার ভার্সন ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হয়। ভালো আউটফিল্ড, ভালো উইকেট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ডিউক, এসজি, কোকাবুরা—তিন ধরনের বলই দিয়েছি। থাকা-যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থার চেষ্টা করেছি।
একটা জায়গায় মিসিং হচ্ছে, সেটা দর্শক ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার। মিডিয়া গেলে কিন্তু মানুষের আগ্রহ বাড়ে, পৃষ্ঠপোষকেরাও আসে।
টেস্টের চ্যালেঞ্জ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিতে হলে কী চাই? ভালো প্রতিপক্ষ। আমি কীভাবে ভালো প্রতিপক্ষ দেব? এখানে তারাই খেলেছে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে। পার্থক্য হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যখন তারা খেলছে, তারা ভালো প্রতিপক্ষ মোকাবিলা করছে। আমি শ্রীলঙ্কার মানের ক্রিকেটার কোত্থেকে দেব? হয়তো খেলার একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারব।
তারা যে ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর দোষ চাপাচ্ছে, এটা অনেকাংশে সত্য। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো সমাধান কিসে সেটাও যদি জানা যেত তাহলে ভালো হতো। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যা করার তা তো করছি। খেলার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো তাদেরও দায়িত্ব। টাকাপয়সা আরও বাড়ানোর ইচ্ছে আমাদের। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকতে হবে। তবে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। অনেক কাজ বাকি থেকে গেছে। মাঠ যদি আরও উন্নত করতে পারতাম, আমাদের মৌসুমও ছোট। তবে তারকা খেলোয়াড়দের যদি আরও বেশি পাওয়া যেত, তাহলে খেলা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। তাদের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টিও অবশ্য দেখতে হবে।
গতি বাড়াতে হবে জেলা পর্যায় থেকে
গাজী আশরাফ হোসেন
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে আমার এর আগে ছিল দূর থেকে পর্যবেক্ষণ, আগামী বছরের পর আমার পর্যবেক্ষণ আরও পরিষ্কার হবে। এখন তুলনামূলক আগের চেয়ে ভালো উইকেটে খেলা হচ্ছে। ম্যাচ ফি অনেক বেড়েছে, তবে সেটি পর্যাপ্ত কি না জানি না। বিসিএলে ডিউক বলে খেলা হয়, এটা একটা ভালো ব্যাপার।
কোচিং স্টাফরা কতটুকু সময় পান একটা টুর্নামেন্টের জন্য দল প্রস্তুত করতে, এটা আমি নিশ্চিত না। খেলোয়াড়দেরও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বার্তা দেওয়া উচিত ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত থাকতে। টুর্নামেন্ট কমিটি ও গ্রাউন্ডস বিভাগের সঙ্গে একটা সমন্বয় থাকা উচিত ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের। ক্রিকেট ক্যালেন্ডার মাথায় রেখে যদি ভেঙে আয়োজন করা যায় প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট, ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ হবে। এতে হয়তো কিছুটা ছন্দ নষ্ট হতে পারে। আঞ্চলিক ক্রিকেট কাঠামো দাঁড় করাচ্ছে বোর্ড, সেটারও সমন্বয় হবে।
জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট যদি গতি পায়, তাহলে বিভাগীয় ক্রিকেটও গতি পাবে। বিভাগীয় ক্রিকেট গতি পেলে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও গতি আসবে। কোচদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, সংগঠকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকবে। প্রথম শ্রেণির কোচদের সঙ্গে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদেরও যোগসূত্র থাকা দরকার।
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি
রাজিন সালেহ
সবার আগে ট্রু উইকেট দিতে হবে। ঘরোয়া লিগে আম্পায়ারিং নিয়ে সব সময় বিতর্ক হয়, থার্ড আম্পায়ার রাখাও দরকার। ডিআরএস লাগে না। চার পাশে চারটি ভালো ক্যামেরা দিলেই হবে। বিরতিতে জাতীয় দলের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হকসহ দু-তিনজন খেলোয়াড় ছাড়া বেশির ভাগই চার দিনের ম্যাচ খেলতে আগ্রহ দেখায় না।
খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি। খেলোয়াড়েরা চিন্তা করে এত কম টাকা এখানে, এর চেয়ে আমি বিশ্রাম নেব, শরীরের যত্ন নেব—ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলব, এর চেয়ে বেশি টাকা পাব। একজন কোচ যদি পায় এক-দেড় লাখ টাকা, ওই কোচের মূল্য কী থাকে? অন্তত ৭-৮ লাখ টাকা পাওয়া উচিত। তাহলে কোচদের কাজের মান, দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে চালু করা উচিত। তখন ম্যাচের সংখ্যাও দ্বিগুণ হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিনিয়র টিম বা ‘এ’ দল ‘বি’ দলের টুর্নামেন্ট করা উচিত।
বর্তমান-ভবিষ্যৎ একসঙ্গে ভাবা দরকার
নাঈম ইসলাম
চাইলেই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো ফার্স্ট উইকেট বানানো সম্ভব নয় আমার। চাইলেই ওরকম বাউন্স, সুইংয়ের উইকেট বানানো সম্ভব নয়। আমাদের যা আছে, সেটা থেকে ভালো কিছুর চেষ্টা করা উচিত। এখন উইকেট সবুজও থাকে। প্রতিটি দলে ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে পারে, এমন তিনজন করে বোলার দরকার।
তাসকিনদের গতি আছে, ওরা তো ঘরোয়া লিগে খেলে না। টেস্টের খেলোয়াড় যদি উন্নতি করতে চান, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের এমন একটা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত, সে ১১টা ম্যাচ খেলবে এনসিএল ও বিসিএল মিলিয়ে—যেখান থেকে পুরো এক বছরের ভরণপোষণের অর্থ যেন সে পায়। তখন সে শুধু এদিকেই মনোনিবেশ করবে।
আমরা সব সময় শুধু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গিয়ে বর্তমানের কথা ভুলে যাই। নতুন খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করি, সে আমাদের ১০ বছর সার্ভিস দেবে। কিন্তু দেখা গেল বিনিয়োগ করতে করতে ৩-৪ বছর চলে গেল। পরে ওই খেলোয়াড়ও ভালো করল না। বর্তমানে যারা পারফর্ম করছে তাদের কথা চিন্তা করা উচিত। আমাদের বর্তমানও দরকার, ভবিষ্যৎও দরকার।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে