শেরপুর-২: মতিয়ার আসনে নির্ভার আ.লীগ

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর ও অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩, ১২: ২৪
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩, ১২: ২৭

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও শেরপুর-২ আসনে নেই উত্তাপ। নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটাই নির্ভার। এর অন্যতম কারণ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। টানা তিন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। অন্যদিকে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য আন্দোলন চাঙা করা।

১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মতিয়া চৌধুরী। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবেই পরিচিত। এবারও মনোনয়ন চাইবেন মতিয়া চৌধুরী। তাঁর মনোনয়ন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তবে মনোনয়ন পেতে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।

মতিয়া চৌধুরী বাদে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন নৌ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ফারুক এবং নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইলিয়াস খান এবং নালিতাবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সালামের ছেলে শওকত সাঈদ মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল নিরসন করে গত বছরের নভেম্বরে এই আসনের দুই উপজেলাতেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠিত হয়। এতে মতিয়া চৌধুরীর ওপর আস্থা রেখে দুই উপজেলাতেই পদ পেতে প্রার্থী হননি কেউ। নতুন কমিটি পেয়ে আগের চেয়ে অনেক সুসংগঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রার্থী হতে কৌশলে কেউ কেউ প্রচার চালালেও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এবং মানুষকে সহযোগিতা করে সরকারের উন্নয়ন প্রচার চালাচ্ছেন আব্দুস সামাদ ফারুক।

মতিয়া চৌধুরী দলের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা এবং তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে কোনো ঘাটতি হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনেও মতিয়া চৌধুরীই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থী, এমনটাই ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিয়া চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন তো এখনো অনেক দেরি। সময় এলেই সবকিছু ভেবেচিন্তে কথা বলব।’

জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ ফারুক বলেন, ‘আমার বর্তমান কার্যক্রম নির্বাচনী প্রচারেরই অংশ। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাব।’ মোকছেদুর রহমান লেবু বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। রমজানের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করব।’

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ফাহিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর না রাখার অভিযোগ ওঠে। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সুযোগে ইলিয়াস খানের নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ এলাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া জাহেদ আলী চৌধুরীর স্ত্রী ফরিদা চৌধুরীর নির্দেশে দলীয় কার্যালয়ে আরেকটি অংশ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনোয়ার হোসেনও নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

ইলিয়াস খান বলেন, ‘হাইকমান্ডের নির্দেশেই নকলা-নালিতাবাড়ীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছি। বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীই আমায় সমর্থন জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলেও কেন্দ্রীয় নেতারা আশ্বস্ত করেছেন।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো প্রবাসী বা বাইরের কেউ এলাকার মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কখনোই ভাববেন না। আমরা টাকার কাছে বিক্রি হতে চাই না। স্থানীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছি। তবে দল থেকে সমঝোতা করা হলে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’

সর্বোপরি এ আসনে উন্নয়ন আর সাংগঠনিক দিক দিয়ে আওয়ামী লীগ যতটা গোছালো ও শক্তিশালী, বিএনপি ততটা নয়। বরং নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব আর নানামুখী গ্রুপিংয়ে দ্বিধাবিভক্ত। বিষয়টি কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ যে মজবুত অবস্থানে রয়েছে, তাতে প্রার্থী মনোনয়নে কোনো অঘটন না ঘটলে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। এমন ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত