দেশে হঠাৎ বেড়ে গেছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ৫৪

রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে গত বুধবার রাতের হামলাকারীরা ছিল অস্ত্রধারী। তারা গুলিও করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংদীতে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সংঘর্ষ, মহড়া, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হঠাৎ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসনও। 

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারীদের কাছেও একাধিক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পুলিশ সূত্র বলছে, গত বছর সারা দেশে গুলি করে হত্যার ঘটনাই ঘটেছে ১ হাজার ৪৭১টি। এর বেশির ভাগ ঘটেছে ঢাকা, গাজীপুর, ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। একই সময়ে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৫টি অস্ত্র। কিন্তু এরপরও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার কমেনি।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান না থাকায় অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। দুর্বল নজরদারির কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটেছে। সারা দেশে একযোগে যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের এখনই সময়। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অস্ত্র উদ্ধারে সমন্বিত অভিযান চালাতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

রামপালে স্পর্শকাতর স্থাপনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বুধবার রাতে অস্ত্রধারী হামলাকারীরা ৩০টি গুলি ছুড়েছে। তাদের গুলিতে পাঁচ আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল লুট করতেই এই হামলা। বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে এত অস্ত্র কীভাবে গেল এবং সেগুলো দিয়ে তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালানোর সাহস কীভাবে করল, এসব তদন্ত করা হচ্ছে। 

হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির পাশাপাশি ছোটখাটো ঘটনায়ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। গত ১৮ মার্চ রাজধানীর ভাটারা থানার জোয়ারসাহারায় ডিওএইচএস সোসাইটির রিকশার নম্বর প্লেটকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে রাজু নামের এক ব্যক্তি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তাঁর সহযোগী মুন্না গুলি করেন রিকশাচালক রুবেলের ডান পায়ে। পরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি বিদেশি শটগান, ভাঙা রিভলবার, ভাঙা ৯ এমএম পিস্তল, 

৭৫টি গুলি, শটগানের দুটি কার্তুজ, গুলির ২১০টি খোসা, পাঁচটি পুরোনো ম্যাগজিন, ৪০ গ্রাম গান পাউডার ও বিভিন্ন অস্ত্রের ৬০টি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ জব্দ করে। 
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এই ধরনের চাঁদাবাজের কাছে এত অস্ত্র দেখে তাঁরা বিস্মিত। 

মার্চেই সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষক রায়হান শরীফ শ্রেণিকক্ষে এক ছাত্রকে গুলি করেন। গ্রেপ্তারের পর ওই শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮১টি গুলি উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, তিনি ওই দুটি অস্ত্র-গুলি ব্যাগে নিয়ে ঘুরতেন, শ্রেণিকক্ষের টেবিলে রাখতেন, প্রদর্শনও করতেন। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই জানত না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, সাঁড়াশি অভিযান না থাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা একপ্রকার প্রশ্রয় পাচ্ছে। তারা নানা অপকর্ম করছে। প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা বড় অস্ত্র কেনে। পার্বত্য এলাকা দিয়েও ছোট অস্ত্র দেশে ঢুকছে।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যা, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। অবৈধ এসব অস্ত্রের একটি অংশ আসে ভারত থেকে সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে। বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়েও অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। সন্ত্রাসীদের কাছে দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি বিদেশি পিস্তল, রিভলবার, রাইফেল, শটগান, এমনকি একে-৪৭ রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রও আছে। 

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে গুরুত্ব না দিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ বিষয়ে নজরদারি ও অভিযান বাড়াতে হবে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি–অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান নিয়মিত চলছে। গোয়েন্দা তথ্য বাড়িয়ে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত