ডকইয়ার্ডের ধুলায় দূষণ অভিযোগে চুপ মালিকেরা

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ১১: ৩৯

নারায়ণগঞ্জ সদরের ধর্মগঞ্জ এলাকায় ডকইয়ার্ডে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ে সৃষ্ট ধুলায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। অন্তত পাঁচটি ডকইয়ার্ডে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই দূষণ চলছে। এতে শ্বাসকষ্টজনিত নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বারবার অভিযোগ করার পরও বিষয়টিতে কর্ণপাত করেছেন না ডকইয়ার্ড মালিকেরা। এবার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ‘স্যান্ড ব্লাস্টিং’ নামক নির্মাণ প্রক্রিয়ার কারণে ডকইয়ার্ডে ধুলার সৃষ্টি হয়। তবে নিয়মকানুন মেনে এ কাজ করলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয় না; কিন্তু খরচ বাঁচাতে তা না মেনে স্যান্ড ব্লাস্টিং করায় ক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

দূষণ চালানো পাঁচটি ডকইয়ার্ড হলো মেসার্স সোনালী ডকইয়ার্ড, মেসার্স আঞ্জুমান, সিটি, পিএইচএম ডকইয়ার্ড এবং এলটিডি জোন। এগুলো প্রভাবশালীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যে সোনালী ডকইয়ার্ডের মালিক স্থানীয় এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। ইউপির সাবেক সদস্য রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সম্প্রতি ডকইয়ার্ড এলাকায় দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ পিএইচএম ডকইয়ার্ডে স্যান্ড ব্লাস্টিং চলছে। ধুলোয় স্যান্ড ব্লাস্টিং করা শ্রমিককে দেখা যায় না। পূর্বদিকে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা নদীর বাতাসে এই ধুলো আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। পরে তা নিশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। বিষয়টি নিয়ে মৌখিকভাবে আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ডকইয়ার্ডের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ডকইয়ার্ডে মেরামত বা নির্মাণাধীন জাহাজের গায়ে লেগে থাকা জং তুলতে স্যান্ড ব্লাস্টিং করা হয়। এতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্প্রেসর যন্ত্রের মাধ্যমে সিলেটি সিপ্টিন বালু জাহাজের গায়ে নিক্ষেপ করা হয়। এতে জং উঠলেও জাহাজের গায়ে লেগে বালু আরও ভেঙে কুয়াশার মতো বাতাসে ছড়িয়ে যায়।

স্যান্ড ব্লাস্টিং বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে চারপাশে কাপড়, চট বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশনা রয়েছে, যাতে ধুলো বাতাসের সঙ্গে উড়ে যেতে না পারে। তাতে বায়ুদূষণ হয় না।

এনায়েতনগর ইউপি সাবেক সদস্য রুহুল আমিন বলেন, স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের কারণে ঘরবাড়ি ধুলোয় ভরে যাচ্ছে। মানুষ ঠিকভাবে দম নিতে পারে না। ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে সারাবছর। অনেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ডকে শুক্রবার বেলা ২টা থেকেই স্যান্ড ব্লাস্টিং চলে। বাকিরা বিকেল বা সন্ধ্যা থেকে শুরু করে।

অভিযোগ বিষয়ে এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তো ব্যাপক পরিসরে স্যান্ড ব্লাস্টিং করি না। তা ছাড়া আমাদের ডকইয়ার্ড বাড়িঘর থেকে অনেক দূরে। সবসময় স্যান্ড ব্লাস্টিংও চালাই না, মাঝেমধ্যে দুয়েকটি জাহাজে করি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে পিএইচএম ডকইয়ার্ডের মালিক তোফাজ্জল হোসেন তাপু বলেন, ‘এই কমপ্লেইন কে করেছে? আমার ডকইয়ার্ডের পাশে তো কোনো আবাসিক এলাকা বা বসতি নেই। প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার দূরে থেকে ব্লাস্টিং করলে দূষণ হওয়ার কথা নয়। আপনি এসে দেখা যান, আসলেই দূষণ হয় কি না।’

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দূষণের এলাকা পরিদর্শন করব। যদি দূষণের সত্যতা পাওয়া যায়, তা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত