কুড়িগ্রাম-৩: যেখানে জাপার জয়, সেখানে কোন্দলে ভয়

আরিফুল ইসলাম রিগান ও শিমুল দেব, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩, ১১: ০৩

১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) সংসদীয় আসন হাতছাড়া করেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। বিপুলসংখ্যক ‘ভোটব্যাংক’ থাকায় দলটির প্রার্থীর বিপরীতে সুবিধা করতে পারেননি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে সাংগঠনিকভাবে জাপা আর আগের জায়গায় নেই। ২০১৮ সালে সে সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে এ দলটিতেও আধিপত্য নিয়ে কোন্দল চলছে। ভোটারদের ধারণা, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর সুযোগ নিতে পারে জাপা কিংবা বিএনপি। 
 
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ভোটার ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার ভোটব্যাংকও কিছুটা হালকা হয়েছে। ফলে একক প্রার্থী দিয়ে দলটির জয়ী হওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে জোট বাঁধতে হবে সমমনা কোনো দলের সঙ্গে। 
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ কে এম মাঈদুল ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) হন রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে এরশাদের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালু এমপি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এ কে এম মাঈদুল ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হন জাপার মতিয়ার রহমান। কিন্তু ২০০৮ সালে দল বদলে জাপার প্রার্থী হয়ে আসনটিতে এমপি হন মাঈদুল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। ২০১৮ সালে মাঈদুল ইসলাম মারা গেলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ মতিনকে হারিয়ে জয়ী হন জাপার আক্কাছ আলী সরকার। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র চার মাস। একই বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা নাটকীয়তার পর সে নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আক্কাছ আলী। নির্বাচনে বিএনপির তাসভীর উল ইসলামকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের এম এ মতিন। 
 
আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এম এ মতিন। অন্যদের মধ্যে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবীব রানা, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মতি শিউলি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে। 
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একাধিক নেতা বলেন, আধিপত্য নিয়ে এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের কথা এখন সবার জানা। উপজেলার রাজনীতিতে তাঁদের নিজস্ব বলয় আছে। কিছুদিন আগেও সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা একে অপরের বিষোদ্গার করেছেন। বিরোধ জিইয়ে রাখলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটের ফলাফলে। 
তবে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমান এমপি এম এ মতিন। তিনি বলেন, দলে কোনো বিরোধ নেই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দল ঐক্যবদ্ধ আছে। 
 
এদিকে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সংগঠনের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জেবুন্নেসা রহমান টুম্পা, উপজেলা জাপার আহ্বায়ক আতিয়ার রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন। তাঁরা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কমবেশি যোগাযোগ রাখছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, আসনটি বরাবরই জাতীয় পার্টির ছিল। ভবিষ্যতেও এলাকার সাধারণ ভোটাররা জাপা প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। 
 
মনোনয়নপ্রত্যাশী জেবুন্নেসা রহমান টুম্পা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবারও জাতীয় পার্টি এ আসনে জয়ী হবে। নির্বাচিত হলে এলাকায় নতুন শিল্পাঞ্চল তৈরির পাশাপাশি উলিপুরকে বিনিয়োগবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলবেন। 
 
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন জেলা কমিটির সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম ও রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক। মাঝেমধ্যেই এলাকায় এসে তাঁরা জনসংযোগ করছেন। তাসভীর উল ইসলাম বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ বিএনপিকেই জয়ী করবে। 
 
এ তিন দলের বাইরে বাসদের সাঈদ আখতার আমীন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দেলোয়ার হোসেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে এবার জাপায় না থাকলেও আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি আক্কাছ আলী সরকার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেওয়া এ নেতা দলটির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাগাভাগি হতে পারে জাপার ভোটব্যাংক।
 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত