সুগন্ধি কনিয়ারি

মোকারম হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ মে ২০২২, ০৬: ৫৯
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১০: ০৩

ফুলটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় প্রায় ১৬ বছর আগে, মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। প্রথম দেখায় কিছুটা দ্বিধায় পড়েছিলাম সেদিন। পাতা ও গাছের গড়ন অনেকটা গন্ধরাজের মতো হলেও ফুল ঠিক তেমনটা নয়। আবার গন্ধরাজের তুলনায় গাছটিও বেশ বড়। তাহলে গাছটির সঠিক পরিচয় কী হতে পারে? নানা কিছু ভাবতে ভাবতে ছবি তুলে বাসায় ফিরি। পরে বই দেখে নিশ্চিত হই, এ গাছের নাম কনিয়ারি বা কইনার। প্রথম দেখার কয়েক বছর পর রাঙামাটির পাহাড়ে প্রাকৃতিক আবাসেই দুটি গাছ দেখি। ঢাকায় তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বেগুনবাড়ি সড়কে প্রায় এক দশক থেকে একটি গাছ দেখছি। সম্প্রতি দুটো গাছ দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। স্থানীয় পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কনিয়ারি বর্তমানে বিপন্ন বৃক্ষ। একহারা গড়ন, পাতার আলঙ্কারিক অবয়ব আর ফুলের অপার সৌন্দর্য ও সৌরভ এই উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ কারণে এরা পথতরু হিসেবেও আদর্শ।

কনিয়ারি (Gardenia coronaria) আমাদের পাহাড়ি ফুল হলেও নগর-উদ্যানে অনেকটাই দুর্লভ। আমাদের তিন পার্বত্য জেলায় এরা খুব সহজেই জন্মে ও বেড়ে ওঠে। সেখানকার পাহাড়ি ঢাল এবং বনের প্রান্তে বেশি দেখা যায়। ঢাকায় মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি গাছ দেখা যায়। বসন্তের প্রায় শেষ দিকে সারা গাছজুড়ে অসংখ্য ফুল ফুটতে শুরু করে। এই ফুলের প্রস্ফুটন প্রক্রিয়া ততটা নিবিড় না হলেও ফুলের মধুগন্ধই প্রধান আকর্ষণ। স্থানীয়ভাবে এই গাছ আরও অনেক নামে পরিচিত, যেমন—বনকমল, বাতা, বেলা, কনিয়ারি, কইনর, কোনিয়ারা, রাঙখাই ইত্যাদি।

গন্ধরাজ গুল্মশ্রেণির ঝোপাল ধরনের গাছ হলেও কনিয়ারি মূলত মাঝারি উচ্চতার গাছ। ডালপালা বিক্ষিপ্ত, পাতাও ততটা ঘনবদ্ধ নয়। বছরে একবার পাতা ঝরায়। পাতা মসৃণ, বল্লমাকার এবং উপপত্রযুক্ত। পাতার বোঁটা খাটো, অন্তত ১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পত্রফলক ৬ থেকে ২০ সেন্টিমিটার, শীর্ষ অভিমুখ অনেকটাই অস্পষ্ট। ফুল একক, সুগন্ধি ও পাতার কোলেই ফোটে। বৃতি ফলক বেলানকার চকচকে ও পাতলা। এই ফুলের পাপড়ির সংখ্যা ৫। ফুলের রঙ প্রথমে হালকা হলুদ থাকে, পরে ধীরে ধীরে গাঢ় হলুদ রঙ ধারণ করে। ফুলের নল ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। ফুল শেষ হওয়ার আগেই গাছে ফল আসে। ফল আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা এবং মসৃণ খাঁজযুক্ত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত