বগুড়ায় ‘মাথা নষ্ট’ এসআইয়ের কাণ্ড

বগুড়া ও শিবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ১৭
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ৩৬

বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আইনুল হকের বিরুদ্ধে এক কিশোরকে নির্যাতন করে তার পরিবারের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে আহত ওই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ওই এসআই চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আইনুল বলেছেন, ‘পুলিশের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করায় চড়থাপ্পড় দিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো কিছু না।’ আর শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেছেন, ‘এসআই আইনুলের মাথায় সমস্যা রয়েছে।’

নির্যাতনের শিকার শাকিল আহম্মেদ (১৭) শিবগঞ্জ থানার আটমুল ইউনিয়নের ভায়ের পুকুর মন্ডলপাড়া গ্রামের ছাকরাম হোসেনের ছেলে। গত বুধবার শিবগঞ্জ থানার কিচক বাজারে ছাকরামের রিকশা-সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের দোকানে শাকিলকে নির্যাতন করেন এসআই আইনুল।

শাকিলের বাবা ছাকরাম হোসেন বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে এসআই আইনুল তাঁর দোকানে যান। সে সময় তিনি ব্যবসায়িক কাজে জয়পুরহাটে ছিলেন। দোকানে তাঁর ছেলে ও কর্মচারী ছিল। এসআই আইনুল একটি মোটরসাইকেল দেখে সেটি চোরাই বলে থানায় নিয়ে যেতে চান। শাকিল বাড়ি থেকে কাগজপত্র এনে দেখানোর পর এসআই আইনুল বলেন, দোকানের মালামাল ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে। বিষয়টি বাবা ছাকরামকে জানায় শাকিল। এরপর তিনি এসআই আইনুলের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আইনুল ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দেন, ‘টাকা না দিলে দোকানের মালামাল থানায় নিয়ে ভারতীয় মালামাল হিসেবে মামলা দিব।’

ছাকরাম হোসেন আরও বলেন, শাকিলের সঙ্গে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তাকে দোকানের মধ্যেই লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করেন এসআই আকরাম। খবর পেয়ে শাকিলের মা লাভলী বেগম বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং মালামাল কেনার মেমো নিয়ে দোকানে যান। বেলা ২টার দিকে এসআই আইনুল ৬০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। নির্যাতনে শাকিল অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার সন্ধ্যার পর তাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এসআই আইনুল হাসপাতালে গিয়ে শাকিলকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে হাত-পা এক্স-রে করান। পরে চিকিৎসার খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং ওষুধ কিনে শাকিলকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আইনুল হক বলেন, ‘কিচক বাজারে আসামি ধরতে গিয়ে ছাকরামের দোকানে যাই। সেখানে তাঁর ছেলে আমার সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে। এ কারণে চড়থাপ্পড় দিয়েছি। তবে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘শাকিলের বাবাকে ফোন করে বলেছি, চড়থাপ্পড়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কারণ কী? এতে তারা স্বেচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে গেছে।’

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘শাকিলকে নির্যাতন করে ৬০ হাজার টাকা আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। তবে এসআই আইনুল হকের মাথার সমস্যা আছে। ২০২৩ সালে তিনি রাজশাহীর চারঘাটে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মারামারি করে গুরুতর আহত হন। সে সময় তাঁর নামে চারঘাট থানায় মামলা হয়। তিনি পাঁচ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সাময়িক বরখাস্তও হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তাঁর নামে বিভাগীয় মামলা চলছে। শাকিলের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত