Ajker Patrika

সফলতা বাড়ছে, সমস্যা কাটছে না

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ০৯: ২২
সফলতা বাড়ছে, সমস্যা কাটছে না

দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আগের তুলনায় সফলতার হার বাড়লেও এখনো কাটছে না পুরোনো সমস্যাগুলো। বরং করোনাকালে তা রূপ নিয়েছে আরেক মহামারিতে। প্রাপ্তবয়স্কদের যক্ষ্মা পরীক্ষা ও শনাক্তের সফলতার হার ইতিবাচক বার্তা দিলেও উল্টো পথে শিশুদের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। গত দুই বছরে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।

দুই সপ্তাহ আগে জ্বর ও ঠান্ডায় ভোগার পর কয়েক দিনের মাথায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় লক্ষ্মীপুরের কানিজ ফাতেমা। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে এখানেই চিকিৎসাধীন ফাতেমা।

ফাতেমার মা নাসরিন বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়েকে যখন নিয়ে আসি তখন চিকিৎসক জানান, যক্ষ্মার কারণে ফাতেমার ফুসফুসও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। কিন্তু জেলার চিকিৎসকেরা তা ধরতে পারেননি। অবস্থা খারাপ হলে এখানে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) পাঠায়।’

যক্ষ্মা চিকিৎসায় দেশে বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল অন্যতম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক বছরে বহির্বিভাগে যক্ষ্মায় আক্রান্ত সাড়ে ৪০০ শিশু এখানে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে শয্যাসংকটে রোগী ভর্তি করতে পারছে খুব কম।

গত মঙ্গলবার হাসপাতালের যক্ষ্মা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৬টি শয্যাতেই রোগী। এমনকি অন্যান্য ওয়ার্ডেও যক্ষ্মা রোগীদের রাখা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত যক্ষ্মায় আক্রান্ত ৩৬ শিশুকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।Untitled-3

যক্ষ্মা নীতিমালা প্রণয়নের কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্বে ১২ লাখের মতো শিশু যক্ষ্মায় ভুগছে। আর বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৪৫ হাজারের মতো। যা মোট আক্রান্তের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ তারা ঠিকভাবে পরীক্ষার আওতায় আসছে না।

মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেক কিছু উপসর্গ দেখা গেলেও বাচ্চাদের শনাক্ত করা কঠিন। তারা তো আর কফ দিতে পারে না। মা-বাবাও অনেকটা অসচেতন। চিকিৎসকেরাও অনেক সময় নিউমোনিয়া মনে করে চিকিৎসা দেন।

ডা. কামরুজ্জামান জানালেন, করোনা মহামারির আগে দেশে শিশুদের যক্ষ্মা পরীক্ষা ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। কিন্তু গত দুই বছরে তা দ্বিগুণ কমে ৪ শতাংশে নেমেছে।

শিশুদের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে অভিভাবকদেরও দায় আছে জানিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোনো বাবা-মা স্বীকার করতে চায় না যে, বাচ্চার যক্ষ্মা হতে পারে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। উপজেলা পর্যায়ে মেডিসিনের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়। তবে করোনায় ঠিকমতো ডায়াগনোসিস না হওয়ায় অনেক জটিলতা দেখা যাচ্ছে।’

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের প্রায় ২৮ লাখ যক্ষ্মা পরীক্ষা হয়েছে। আগের বছর যা ছিল ২৭ লাখ। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জন। তবে কতজন মারা গেছে, সেই পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি সরকারি এ সংস্থাটি।

করোনা মহামারির আগে দেশে শিশুদের যক্ষ্মা পরীক্ষা ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। কিন্তু গত দুই বছরে তা দ্বিগুণ কমে ৪ শতাংশে নেমেছে

এদিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, যক্ষ্মার সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. মো. খুরশিদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের সহজেই শনাক্ত (যক্ষ্মা) করা গেলেও শিশুদের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। ফলে তাদের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জের বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত