বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নতুন করে উত্থান ঘটেছে এমপিবিরোধীদের। দলীয় পদ হারানোর পর এমপি পঙ্কজ নাথের অনুসারীরা এখন কোণঠাসা। বিরোধীপক্ষের লোকজন তাঁর অনুসারীদের হটিয়ে খেয়াঘাট ও মাছঘাট দখলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে পঙ্কজের পাঁচজন অনুসারীকে ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

বহিষ্কৃত দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম দেওয়ানের দাবি, এমপিবিরোধীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁদের ডাকাত অপবাদ দিয়ে হয়রানি করছেন। বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শহীদ দেওয়ান, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোশারফ আকন, দলীয় কর্মী বাচ্চু ও আবুল কাশেম।

জানা গেছে, ৭ ডিসেম্বর নাঈম দেওয়ান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের দাবি, তিনি ডাকাত সর্দার। পর দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেনের উপস্থিতিতে নাঈম দেওয়ানকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে ধৃত ডাকাতের উদ্দেশে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি এই টাকা পয়সা কারে দাও। কাশেম আর মোশাররফ ভাগ পায়!’ ওসি এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বলেন, ‘ওখানে স্যার ডাকাতের লিডার আছে চারজন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাম দেওয়ান, ওয়ার্ড মেম্বার শহিদ, মেম্বার মোশাররফ, আর একটা বাচ্চু। এরা ওইলে স্যার নদীতে ডাকাতি করতে যায় না, কিন্তু ভাগ পায়।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানতে চান, ‘এর কারণ কী?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘এরা শেল্টার দেয় তাদের।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘চান্দা খাইতো তারা সবাই?’ ওসি বলেন, ‘না না স্যার, চান্দা খাইতো কাশেম, মোশাররফ। গডফাদারের নাম পরে বলব।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা সালাম দেওয়ান বলেন, ‘আমার এলাকার চরে পাতাবন বেশি থাকায় আমি অসংখ্যবার ডাকাত আটক করে পুলিশে দিয়েছি। ১৭ বছর যাবৎ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ব্যক্তি নয়, নৌকার এমপিকে সমর্থন করি। শুধু এই অপরাধে আমাকে ডাকাত অপবাদ দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, গত মার্চে এমপিবিরোধীরা তাঁকে আটকে বেদম মারধর করে। তিনি এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ওসি শফিক নেননি। পরে তিনি আদালতে মামলা এবং থানার সামনে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন। এরপর থেকে ওসি শফিকুল এমপিবিরোধীদের সঙ্গে মিশে তিনিসহ মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের নাজেহাল করে আসছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘ওসি আমাদের বলেছেন বহিষ্কৃত পাঁচজন ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁর কথার ওপর ভিত্তি করে তাদের বহিষ্কার করেছি। এর বাইরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো স্পষ্ট অভিযোগ নেই।’

মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটা আমাদের ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল। উপস্থিত কেউ ভিডিওটি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। নাঈম বাদে কাউকেই ডাকাত কিংবা ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।’

বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নাঈমকে ডাকাতির ঘটনায় আটক করা হয়নি। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ তাঁকে আটক করা হয়। পরে মেহেন্দীগঞ্জের ওসি তাঁকে জানিয়েছেন সে ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

এ বিষয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, তিনি এমপি হওয়ার আগে থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদে আছেন। স্থানীয় এমপি হওয়ায় তাঁরা তাঁকে সমর্থন করতেই পারেন। শুধু এই অপরাধে ‘ডাকাত’ অপবাদ দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হলে বিষয়টি দুঃখজনক।