আখের ক্ষতি পোষাল বাঁধাকপি

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২২, ০৭: ১৬
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৬

চৌগাছায় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সবজি প্রধান উপজেলাটির সবজিচাষিদের।

আলু, পেঁয়াজ, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির খেত হেক্টরের পর হেক্টর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পথে বসার উপক্রম হন বহু কৃষকের। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে একই জমিতে নতুন করে অন্য ফসল চাষ শুরু করেন তাঁরা। তেমনই একজন কৃষক সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাড়ার বাসিন্দা আজিজুর রহমান।

আজিজুর মূলত ২০০২ সাল থেকে আখ চাষ করেন। ভূমিহীন আজিজুর প্রায় পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখের চাষ করেন। সেই আখমাড়াই করে রস হিসেবে বাজারে বিক্রি করে আসছিলেন। তবে ডিসেম্বরের শুরুতে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তাঁর ২৬ কাঠার আখের সমস্ত চারা নষ্ট হয়ে যায়। আখের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়ে আজিজুরের। স্থানীয় আরেক সবজি চাষি শামছুল আলমের পরামর্শে তিনি স্বল্প দিনে ওই জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। তবে একা বাঁধাকপি চাষ করতে সাহস না পেয়ে শামছুল আলমের সঙ্গে যৌথভাবে চাষ করেন তিনি।

গত শনিবার খেতে গেলে দেখা হয় আজিজুর ও শামছুল আলমের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, শনিবার সকালেই জমির ৪০০ বাঁধাকপি বিক্রি করেছি। প্রতিটির দাম পেয়েছি ১০ টাকা। জানালেন এর আগে আরেকদিন ৫০০টি বিক্রি করেছি প্রতিটি ১২ টাকা দরে।

জমির নষ্ট আখের চারা দেখিয়ে আজিজুর বলেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের টানা বর্ষণে আমার এই আখের চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমি ঘাবড়ে যাই। নানা দুশ্চিন্তায় মাথা আর কাজ করছিল না, এ বছর কিভাবে চলবে-এই ভেবে।’ এ সময় শামছুল আলমকে দেখিয়ে আজিজুর বলেন, ‘পরে আলম ভাইয়ের পরামর্শে জমিতে বাঁধাকপি রোপণ করি। তবে একা সাহস না পেয়ে আলম ভাইকে সঙ্গে নিয়েছি।’

আজিজুর বলেন, ‘২৬ কাঠা জমিতে (সোয়া এক বিঘা) ৬ হাজার বাঁধাকপির চারা লাগিয়েছি। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯০০ কপি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আজ (গত শনিবার) সকালেই ৪০০ কপি বিক্রি করেছি ১০ টাকা দরে। এর আগে ৫০০টি বিক্রি করেছি ১২ টাকা দরে। এখন বাজারে যে দাম যাচ্ছে, তাতে বাকি পাঁচ হাজার কপি অন্তত ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।’

শামছুল আলম এবং আজিজুরের অভিযোগ, এই দুর্ভোগের সময়ে উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাই তাঁদের খোঁজ নেননি। অথচ তাঁদের জমির ২০০ মিটারের মধ্যেই কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

আজিজুর বলেন, ‘প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই জমিতে চাষাবাদ করছি। আজ পর্যন্ত একদিনও কৃষি অফিসের কেউ খোঁজ নেননি। অতি বর্ষণে ফসল প্রায় সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও কেউ খোঁজ নিতে বা পরামর্শ দিতে আসেননি।’

শামছুল ও আজিজুরের মতো চৌগাছা পৌর এলাকার একাধিক কৃষকের অভিযোগ এখানকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মাঠেই আসেন না। এমনকি কারও কোনো প্রশিক্ষণে নাম দিলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেন তিনি।

তবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা তো মাঠে যাই। কোনো কৃষক পরামর্শ চাইলে সব সময়ই তাঁদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ দেননি। অভিযোগ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত