ড. মো. গোলাম রহমান
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে না নেওয়ার দাবি জানিয়ে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গত ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়া বরাবর ব্যক্তিগতভাবে একটি চিঠি দিয়েছে। ইতিমধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চিঠিটি প্রকাশ করেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর এ নিয়ে জনমনে, রাজনৈতিক দলে ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
যেকোনো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আলোচিত হয়, নিন্দিত হয়। তার প্রধান কারণ এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকে যায়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়া, কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এসব নিয়ে প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং কিছু কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও এর প্রতিকার নিয়ে বেশি কথা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া কতিপয় ঘটনা মানুষের মনে প্রশ্নের অবতারণা করে, বিতর্ক ওঠে এবং সেসব অস্বাভাবিকও নয়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে এবং অংশগ্রহণকারীরা যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের শুরু থেকেই বিভিন্ন রকম কার্যকলাপ ঘটছে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালের ‘কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার’-এর একটি কমিটি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের মার্চে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কমিশনার মিচেল ব্যাচলেট সমস্যাটিকে দীর্ঘদিনের বলে অভিহিত করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ৫ ডিসেম্বর এসব লঙ্ঘন ও অপব্যবহারকে পক্ষান্তরে কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। (ডেইলি স্টার, জানুয়ারি ২১, ২০২২, পৃষ্ঠা ১ ও ২)।
আমরা জানি, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোভনান্ট-এর প্রধান নয়টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আটটি মেনে নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস এবং ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারপরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও ঘটেছে। বাংলাদেশ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গনে সুনাম অর্জন করে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন এবং নানাবিধ আধুনিক সমাজব্যবস্থায় স্বাক্ষর রেখে চলেছে অন্য অনেক দেশের তুলনায়; বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার বিদায়কালে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীন হচ্ছে তাঁদের প্রতিযোগী, তাঁদের শত্রু দেশ নয়। চীনের সহযোগিতা তাঁদের প্রয়োজন রয়েছে। গণতন্ত্র উন্নয়নে বাংলাদেশকে আরও সহায়তা দান, মানবাধিকার মর্যাদায় কার্যকর ভূমিকা, দুর্নীতি দমনে সহায়তার ইস্যুতে বাংলাদেশকে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে বাংলাদেশকে সাহায্যের কথা বলেছেন। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
ক্রমাবনতিমান মানবাধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। সভ্যতার শিখরে আরোহণরত দেশগুলো দেশের অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করছে। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের স্বার্থে দেশের সব কাজে, বিশেষ করে সুশাসন অর্জনে জবাবদিহি কায়েম হবে। অতএব, রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্নীতি দমন, সুশাসন ও জবাবদিহির বিষয় চর্চা হবে, এটিই স্বাভাবিক। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। অন্যান্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে নিশ্চয়ই আমাদের কোনো স্বস্তি নেই, নেই কোনো আত্মসন্তুষ্টিও। তারপরও কয়েকটি বিষয়ে আমাদের জানা থাকা দরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২০-এর প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এমন কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্ততপক্ষে এক হাজার লোক পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে। জনগণের জন্য পরিবেশিত সীমিতসংখ্যক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এসব ঘটনায় কালো মানুষদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক কর্মসূচির অধীনে এসব মৃত্যুর হিসাব সঠিকভাবে রক্ষিত হয় না। ২০০১ থেকে ২০০৯ সিআইএ পরিচালিত গোপন বন্দী কার্যক্রমের অধীন যেসব ডজন ডজন বন্দী গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের বিচার প্রাপ্তির সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
শুধু সীমিত অনুসন্ধানের কয়েকটি অভিযোগকে কোনো শাস্তির বিধান না করে সেগুলোর পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট ২০২০ দ্রষ্টব্য)। ‘গ্লোবাল ওয়ার’-এর মতো একটি ত্রুটিপূর্ণ নীতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের কয়েকটি দেশে উপর্যুপরি সামরিক ড্রোন ব্যবহার করে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় মানবাধিকার সংরক্ষণ হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম চেতনা, যা সব দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাধীনতাকে সুসংহত করে। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কাজ থেকে সবাইকে নিবৃত্ত থাকা উচিত।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের ধারা বজায় আছে। গণতন্ত্র যদি সঠিক চর্চায় না থাকে, তাহলে জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসর সংকীর্ণ হয়ে আসবে। সমাজে বিভিন্ন ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠী কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা মহল নিজেদের কোটারি স্বার্থে হামলা ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আমরা ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী এ রকম ঘটনা গণমাধ্যমে সবিস্তারে প্রকাশিত হতে দেখেছি। পরবর্তীকালেও মাঝেমধ্যেই এ ধরনের হঠকারী ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, আবার কতিপয় ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তাও দেখেছি। দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ ভূমিকা নিতেও দেখেছি। হোলি আর্টিজানের মতো নৃশংস ঘটনার পর শক্ত হাতে জঙ্গি দমন ও তাদের পরিকল্পনার মূল উৎপাটন করতেও দেখেছি।
দেশের মানুষ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপতৎপরতাকে ধিক্কার জানায়। দেশের বর্তমান সরকারও এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অবশ্যই অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। এগুলো জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, র্যাব তৈরি করেছে আমেরিকান ও ব্রিটিশরা। তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইউএসএ তাদের শিখিয়েছে রুলস অব এনগেজমেন্ট (নিয়মকানুন), কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ (হাউ টু ইন্টারোগেট) করতে হবে ইত্যাদি। তিনি আরও বলেছেন, র্যাবের যদি রুলস অব এনগেজমেন্টে কোনো দুর্বলতা থাকে, এই রুলস অব এনগেজমেন্টের জন্য যদি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, অবশ্যই নতুন করে ট্রেনিং হবে। তিনি আরও বলেছেন, তার জন্য কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জাস্টিফাইড না। বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। সরকার এ বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইতিপূর্বের বিচারহীনতার মতো আইনকে বাতিল করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আবেদন যতটা না সংস্কারমূলক, তার চেয়ে বেশি অভিযোগমূলক। বাংলাদেশ শান্তি মিশনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। এই মর্যাদাসম্পন্ন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি এবং এই সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিরুদ্ধে কোনো কোনো মহল বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে। তাদের ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখা প্রয়োজন।
এটা অত্যন্ত সংগত যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে আমরা সমালোচনা করি। সভ্য সমাজও তা-ই করে। প্রতিটি দেশের প্রত্যেক মানুষের এই প্রত্যাশা হওয়া উচিত। দেশ-কাল-পাত্রভেদে বিশ্বের সব মানুষই মানুষ। মানবকল্যাণে নিবেদিত হয়ে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন সর্বত্র। আমাদের দেশে এর প্রয়োগ যেমন জরুরি, অন্য দেশগুলোতেও একইভাবে মানবাধিকারের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক আমাদের দেশে, প্রতিটি দেশে। কোনো দেশ, কোনো জাতি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। আসুন, মানবতার জয়গান গাই।
লেখক: ড. মো. গোলাম রহমান।
সম্পাদক,আজকের পত্রিকা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে না নেওয়ার দাবি জানিয়ে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গত ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়া বরাবর ব্যক্তিগতভাবে একটি চিঠি দিয়েছে। ইতিমধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চিঠিটি প্রকাশ করেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর এ নিয়ে জনমনে, রাজনৈতিক দলে ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
যেকোনো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আলোচিত হয়, নিন্দিত হয়। তার প্রধান কারণ এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকে যায়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়া, কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এসব নিয়ে প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং কিছু কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও এর প্রতিকার নিয়ে বেশি কথা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া কতিপয় ঘটনা মানুষের মনে প্রশ্নের অবতারণা করে, বিতর্ক ওঠে এবং সেসব অস্বাভাবিকও নয়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে এবং অংশগ্রহণকারীরা যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের শুরু থেকেই বিভিন্ন রকম কার্যকলাপ ঘটছে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালের ‘কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার’-এর একটি কমিটি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের মার্চে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কমিশনার মিচেল ব্যাচলেট সমস্যাটিকে দীর্ঘদিনের বলে অভিহিত করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ৫ ডিসেম্বর এসব লঙ্ঘন ও অপব্যবহারকে পক্ষান্তরে কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। (ডেইলি স্টার, জানুয়ারি ২১, ২০২২, পৃষ্ঠা ১ ও ২)।
আমরা জানি, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোভনান্ট-এর প্রধান নয়টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আটটি মেনে নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস এবং ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারপরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও ঘটেছে। বাংলাদেশ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গনে সুনাম অর্জন করে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন এবং নানাবিধ আধুনিক সমাজব্যবস্থায় স্বাক্ষর রেখে চলেছে অন্য অনেক দেশের তুলনায়; বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার বিদায়কালে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীন হচ্ছে তাঁদের প্রতিযোগী, তাঁদের শত্রু দেশ নয়। চীনের সহযোগিতা তাঁদের প্রয়োজন রয়েছে। গণতন্ত্র উন্নয়নে বাংলাদেশকে আরও সহায়তা দান, মানবাধিকার মর্যাদায় কার্যকর ভূমিকা, দুর্নীতি দমনে সহায়তার ইস্যুতে বাংলাদেশকে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে বাংলাদেশকে সাহায্যের কথা বলেছেন। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
ক্রমাবনতিমান মানবাধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। সভ্যতার শিখরে আরোহণরত দেশগুলো দেশের অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করছে। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের স্বার্থে দেশের সব কাজে, বিশেষ করে সুশাসন অর্জনে জবাবদিহি কায়েম হবে। অতএব, রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্নীতি দমন, সুশাসন ও জবাবদিহির বিষয় চর্চা হবে, এটিই স্বাভাবিক। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। অন্যান্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে নিশ্চয়ই আমাদের কোনো স্বস্তি নেই, নেই কোনো আত্মসন্তুষ্টিও। তারপরও কয়েকটি বিষয়ে আমাদের জানা থাকা দরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২০-এর প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এমন কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্ততপক্ষে এক হাজার লোক পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে। জনগণের জন্য পরিবেশিত সীমিতসংখ্যক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এসব ঘটনায় কালো মানুষদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক কর্মসূচির অধীনে এসব মৃত্যুর হিসাব সঠিকভাবে রক্ষিত হয় না। ২০০১ থেকে ২০০৯ সিআইএ পরিচালিত গোপন বন্দী কার্যক্রমের অধীন যেসব ডজন ডজন বন্দী গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের বিচার প্রাপ্তির সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
শুধু সীমিত অনুসন্ধানের কয়েকটি অভিযোগকে কোনো শাস্তির বিধান না করে সেগুলোর পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট ২০২০ দ্রষ্টব্য)। ‘গ্লোবাল ওয়ার’-এর মতো একটি ত্রুটিপূর্ণ নীতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের কয়েকটি দেশে উপর্যুপরি সামরিক ড্রোন ব্যবহার করে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় মানবাধিকার সংরক্ষণ হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম চেতনা, যা সব দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাধীনতাকে সুসংহত করে। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কাজ থেকে সবাইকে নিবৃত্ত থাকা উচিত।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের ধারা বজায় আছে। গণতন্ত্র যদি সঠিক চর্চায় না থাকে, তাহলে জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসর সংকীর্ণ হয়ে আসবে। সমাজে বিভিন্ন ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠী কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা মহল নিজেদের কোটারি স্বার্থে হামলা ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আমরা ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী এ রকম ঘটনা গণমাধ্যমে সবিস্তারে প্রকাশিত হতে দেখেছি। পরবর্তীকালেও মাঝেমধ্যেই এ ধরনের হঠকারী ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, আবার কতিপয় ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তাও দেখেছি। দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ ভূমিকা নিতেও দেখেছি। হোলি আর্টিজানের মতো নৃশংস ঘটনার পর শক্ত হাতে জঙ্গি দমন ও তাদের পরিকল্পনার মূল উৎপাটন করতেও দেখেছি।
দেশের মানুষ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপতৎপরতাকে ধিক্কার জানায়। দেশের বর্তমান সরকারও এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অবশ্যই অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। এগুলো জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, র্যাব তৈরি করেছে আমেরিকান ও ব্রিটিশরা। তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইউএসএ তাদের শিখিয়েছে রুলস অব এনগেজমেন্ট (নিয়মকানুন), কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ (হাউ টু ইন্টারোগেট) করতে হবে ইত্যাদি। তিনি আরও বলেছেন, র্যাবের যদি রুলস অব এনগেজমেন্টে কোনো দুর্বলতা থাকে, এই রুলস অব এনগেজমেন্টের জন্য যদি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, অবশ্যই নতুন করে ট্রেনিং হবে। তিনি আরও বলেছেন, তার জন্য কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জাস্টিফাইড না। বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। সরকার এ বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইতিপূর্বের বিচারহীনতার মতো আইনকে বাতিল করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আবেদন যতটা না সংস্কারমূলক, তার চেয়ে বেশি অভিযোগমূলক। বাংলাদেশ শান্তি মিশনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। এই মর্যাদাসম্পন্ন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি এবং এই সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিরুদ্ধে কোনো কোনো মহল বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে। তাদের ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখা প্রয়োজন।
এটা অত্যন্ত সংগত যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে আমরা সমালোচনা করি। সভ্য সমাজও তা-ই করে। প্রতিটি দেশের প্রত্যেক মানুষের এই প্রত্যাশা হওয়া উচিত। দেশ-কাল-পাত্রভেদে বিশ্বের সব মানুষই মানুষ। মানবকল্যাণে নিবেদিত হয়ে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন সর্বত্র। আমাদের দেশে এর প্রয়োগ যেমন জরুরি, অন্য দেশগুলোতেও একইভাবে মানবাধিকারের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক আমাদের দেশে, প্রতিটি দেশে। কোনো দেশ, কোনো জাতি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। আসুন, মানবতার জয়গান গাই।
লেখক: ড. মো. গোলাম রহমান।
সম্পাদক,আজকের পত্রিকা
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
৩ ঘণ্টা আগেপর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে