রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই নায়রা গ্রামে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ, একটি সেতু ও একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে কাজের চেয়ে বেশি বিল তুলে দেড় বছরে ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে আট গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী জানান, বেশি বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে না পারায় কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় এলজিইডির অধীনে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার সারাই ইউনিয়নের কাচু মহিষওয়ালার মোড় বাজার থেকে নায়রা প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ এবং মানাস খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু ও একটি কালভার্ট নির্মাণে ২ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৩ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল কাজ পায় কেজেডএইচসি (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাশিপুর এলাকার এনামুল হক।

গত বছর ৩ এপ্রিল নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও সড়ক ও সেতুর নির্মাণকাজ হয়েছে ৭০ শতাংশ। ৬০ শতাংশের কম কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত বছর ৭০ শতাংশ নির্মাণকাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০১ টাকা বিল তুলেছে। বাকি কাজ সমাপ্ত হলে চুক্তি অনুযায়ী ৬৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৬২ টাকা পাবেন। এখনো নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা বেশি তুলেছে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে।

সারাই নায়রা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মানাস খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে নির্মাণাধীন সেতু। সেতুর রেলিং ও অ্যাপ্রোচ এবং দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নেই। এ ছাড়া দুই কিলোমিটার রাস্তায় ইট-বালু মিশ্রিত ডাবলু বিএম করা হয়েছে। এর মধ্যে ডাবলু বিএম ছাড়াই রাস্তার একাংশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন সেতুর দুই প্রান্তে কাঠের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে।

নায়রা গ্রামের সহিদুল হক ও মফিজুল বলেন, সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রকৌশলী বা ঠিকাদারের লোকজন আসেন না।

সারাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুসহ রাস্তা নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির বিষয় উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় এবং প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।

ঠিকাদার এনামুল হক জানান, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় ডাবলু ৭৪ নম্বর প্যাকেজের নির্মাণকাজ নিয়ে তিনি খুবই সমস্যায় পড়েছেন। কাজটি তিনি করছেন না, তাঁর লাইসেন্স নিয়ে শহরের এক ঠিকাদার টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পান এবং ওই ব্যক্তি নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় ওই ঠিকাদার দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। কাজের চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলনের বিষয় এনামুল কিছুই জানেন না।

এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমী বলেন, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদারকে কাজের চেয়ে অতিরিক্ত বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল হক বলেন,  অসমাপ্ত নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করে ঢাকা অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।