ভাঙন আতঙ্কে ঘর স্থানান্তর

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২২, ০৬: ২৬
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১৩: ৩৫

ভয়, আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় কাটছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জয়ন্তী নদীতীরের মানুষের দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভিটেবাড়ি অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাবেন কি না, প্রতিনিয়ত সেই আতঙ্কে রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এক-দেড় কিলোমিটার দূরের নদীতীর ভাঙতে ভাঙতে শতাধিক মানুষের ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে উপজেলার ইদিলপুর ও গোসাইরহাট ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিলেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। নিঃস্ব মানুষগুলোর আহাজারি ও কান্নার শব্দ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গত বছর ভাঙন এলাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা পরিদর্শন করে আশ্বাস দিলেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলাচলের রাস্তাঘাটসহ ইদিলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০-৩৫টি বাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি ও বরজ নদীতে ভেঙে গেছে। রফিজুর হাওলাদার, নুরুল ইসলাম রাড়ী, মিজান হাওলাদার, আজাহার সিকদার, জহুরুল রাড়ী, পানু মোল্লাসহ দুই ইউনিয়নের শতাধিক মানুষের ভিটেবাড়ি, চাষের জমি কেড়ে নিয়েছে জয়ন্তী নদী। বর্ষা মৌসুমে নদীর স্রোত বেশি থাকায় ভাঙন অনেক বেশি।

জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। গত বছর পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পশ্চিম) প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম, ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল আলম স্পিডবোটযোগে গোসাইরহাটের নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনের সময় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। স্থানীয় প্রশাসনও তখন জানায়, নদীভাঙন রোধ করতে প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে এস্টিমেট করা হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস দেওয়ার পর বছর পার হলেও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের। তাঁদের দাবি, দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে আর কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ছাদেক সরকার বলেন, ‘আমার প্রায় ৪০ শতাংশ চাষের জমি নদীর ভাঙনে শেষ হইয়া গেছে। এহন নদী বসতভিডার একেবারে সামনে চইলা আইছে।’

গৃহবধূ সুফিয়া বেগম বলেন, ‘চাষের জমি যা ছিল, সব নদীতে ভাইঙ্গা গিয়েছে। অনেক দূরে হাইট্টা গিয়া যে নদীর থাইক্কা পানি আনতাম, ভাঙতে ভাঙতে হেই নদী এহন বসতবাড়ির থাইক্কা ১৫-২০ হাতের মধ্যে চইলা আইছে। দিনরাইত ডর-ভয়ে থাহি। কুন সময় জানি আমাগো থাকনের ঘরটাও নদীতে ভাইঙ্গা নিয়া যায়।’

গোসাইরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজাজামান রিপন বলেন, ‘কিছু জিও ব্যাগ ফালানো হয়েছিল। তবে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণে বড় আকারের বাজেট দরকার। আমরা মাননীয় এমপি ও মন্ত্রী মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

ইদিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন দাশ গুপ্ত বলেন, সচিবকে দিয়ে ওই এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কোনো বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত