বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভোটের আগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, টাকা বিতরণ, হামলার ঘটনা ঘটলেও গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের কোনো সুরাহা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে। আট জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের কাছে হারলেও ৪৯ জেলায় জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং পঞ্চগড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদের ৮৩ শতাংশ চেয়ারম্যান এখন আওয়ামী লীগের।
গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির মতো কোনো অনিয়ম চোখে পড়েনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি)। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন সিইসি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আজ (সোমবার) গোপন কক্ষে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি যাননি। অত্যন্ত সুন্দর, মার্জিত ও ভদ্রভাবে সবাই ভোট দিয়েছেন।’
মেয়র-ইউএনও বিতণ্ডা
ভোট চলাকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিবাদে জড়িয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। গতকাল দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিলে নতুন ইউএনও মনিরুজ্জামানকে প্রকাশ্যে ‘স্টুপিড’ বলেন মেয়র। ওই সময় ইউএনও বারবার ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে অনুরোধ করলে মেয়র বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থীরাও মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। গতকাল সকালে মেয়রের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন ওঠে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন
পটুয়াখালীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানার দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ ভোটকেন্দ্রে তিনি প্রবেশ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের নিয়ে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্টও করেন তিনি।
ভোটের আগের রাতে পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং পোস্টার ছিঁড়ে হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পরপরই দুই প্রার্থী বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, ‘শনিবার রাতে মোটরসাইকেলের বহরে থাকা লোকজন আমার বাসভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গালিগালাজ করে। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলে।’
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে ইসি। অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই সংসদ সদস্যকে চিঠিও দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বরিশালে ৩ নম্বর (বাবুগঞ্জ) ওয়ার্ডের ৩২ ভোটারকে কুয়াকাটায় নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সদস্য পদপ্রার্থী মাইনুল হোসেন পারভেজ মৃধার অভিযোগ, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আলোচনার জন্য ওই ভোটারদের ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তাঁদের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে নেওয়া হয়। আগরপুর ইউপির চেয়ারম্যান কামরুল আহসান হিমু অভিযোগ করেন, তাঁর ইউনিয়নের আট সদস্যকে কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়ার পর সবার ফোন বন্ধ। ভোটের দিন সকালে সরাসরি কেন্দ্রে আনার জন্য এমন করা হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগটি পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করতে রোববার রাতে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়েছে ইসি।
নির্বাচিত যাঁরা
২৫ জেলার চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার ঘোষণা এসেছে আগেই। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ৬৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য ভোট ছাড়াই বিজয়ের মালা পরেছেন। বাকি পদগুলোতে ৯২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ৬০৩ জন সংরক্ষিত সদস্য এবং ১ হাজার ৪৮৫ জন সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬০ হাজার ৮৬৬ জন।
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়েছে ৫৭ জেলায়। আদালতের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত আছে।
আর ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই দুই জেলায় ভোট হয়নি। চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে বিজয়ী ২৫ জনই আওয়ামী লীগ মনোনীত। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগ সব জেলার চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যান্য দল প্রার্থী দেয়নি।
যেসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ঝালকাঠি, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, বরগুনা ও বরিশাল।
গতকাল ভোট হওয়া বাকি জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুর, নরসিংদী, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, ঝিনাইদহ, কক্সবাজার ও শেরপুরে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা।
এ ছাড়া পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ ‘মনোনীত’ আবু তোয়াবুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।
দিনাজপুরে জেলা জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী বিপুল।
‘বিদ্রোহী’দের জয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় এখানে আমাদের প্রার্থীর বাইরে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ওইভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যায় না।’
অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাঁরাই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অনেককে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
সিইসির চোখে নির্বাচন
১ হাজার ৪০০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে ইসি। গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিক্রিয়ায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটাররা শিক্ষিত, মার্জিত। তাঁরা ভদ্রভাবে ভোট দিয়েছেন। আজ আমাদের যে পর্যবেক্ষণ, তাতে বলা যায়, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও থেকে কোনো অনিয়ম, সহিংসতার তথ্য আসেনি। আমরা সন্তুষ্ট।’
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা তাদের বিষয় নয়। এটা রাজনীতিবিদেরা বুঝবেন।
নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘গাইবান্ধা নির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে গুরুতর অনিয়ম লক্ষ করেছি। কমিশন বাধ্য হয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে একটা মেসেজ (বার্তা) এসেছে। যেহেতু নির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই অনিয়ম হলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমাদের মনে হয়, এর একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) এই (জেলা পরিষদ) নির্বাচনে পড়েছে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, অনেকের যেমন আঙুলের ছাপ প্রথমে মেলেনি, পরে মিলেছে। একজনও ভোট দিতে পারেনি এমন হয়নি।
যদিও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় আঙুলে মেহেদি থাকায় ভোট দিতে ব্যর্থ হন শেলিনা আক্তার। তিনি শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য।
ভোটের আগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, টাকা বিতরণ, হামলার ঘটনা ঘটলেও গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের কোনো সুরাহা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে। আট জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের কাছে হারলেও ৪৯ জেলায় জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং পঞ্চগড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদের ৮৩ শতাংশ চেয়ারম্যান এখন আওয়ামী লীগের।
গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির মতো কোনো অনিয়ম চোখে পড়েনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি)। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন সিইসি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আজ (সোমবার) গোপন কক্ষে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি যাননি। অত্যন্ত সুন্দর, মার্জিত ও ভদ্রভাবে সবাই ভোট দিয়েছেন।’
মেয়র-ইউএনও বিতণ্ডা
ভোট চলাকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিবাদে জড়িয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। গতকাল দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিলে নতুন ইউএনও মনিরুজ্জামানকে প্রকাশ্যে ‘স্টুপিড’ বলেন মেয়র। ওই সময় ইউএনও বারবার ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে অনুরোধ করলে মেয়র বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থীরাও মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। গতকাল সকালে মেয়রের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন ওঠে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন
পটুয়াখালীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানার দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ ভোটকেন্দ্রে তিনি প্রবেশ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের নিয়ে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্টও করেন তিনি।
ভোটের আগের রাতে পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং পোস্টার ছিঁড়ে হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পরপরই দুই প্রার্থী বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, ‘শনিবার রাতে মোটরসাইকেলের বহরে থাকা লোকজন আমার বাসভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গালিগালাজ করে। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলে।’
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে ইসি। অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই সংসদ সদস্যকে চিঠিও দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বরিশালে ৩ নম্বর (বাবুগঞ্জ) ওয়ার্ডের ৩২ ভোটারকে কুয়াকাটায় নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সদস্য পদপ্রার্থী মাইনুল হোসেন পারভেজ মৃধার অভিযোগ, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আলোচনার জন্য ওই ভোটারদের ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তাঁদের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে নেওয়া হয়। আগরপুর ইউপির চেয়ারম্যান কামরুল আহসান হিমু অভিযোগ করেন, তাঁর ইউনিয়নের আট সদস্যকে কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়ার পর সবার ফোন বন্ধ। ভোটের দিন সকালে সরাসরি কেন্দ্রে আনার জন্য এমন করা হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগটি পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করতে রোববার রাতে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়েছে ইসি।
নির্বাচিত যাঁরা
২৫ জেলার চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার ঘোষণা এসেছে আগেই। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ৬৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য ভোট ছাড়াই বিজয়ের মালা পরেছেন। বাকি পদগুলোতে ৯২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ৬০৩ জন সংরক্ষিত সদস্য এবং ১ হাজার ৪৮৫ জন সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬০ হাজার ৮৬৬ জন।
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়েছে ৫৭ জেলায়। আদালতের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত আছে।
আর ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই দুই জেলায় ভোট হয়নি। চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে বিজয়ী ২৫ জনই আওয়ামী লীগ মনোনীত। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগ সব জেলার চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যান্য দল প্রার্থী দেয়নি।
যেসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ঝালকাঠি, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, বরগুনা ও বরিশাল।
গতকাল ভোট হওয়া বাকি জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুর, নরসিংদী, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, ঝিনাইদহ, কক্সবাজার ও শেরপুরে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা।
এ ছাড়া পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ ‘মনোনীত’ আবু তোয়াবুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।
দিনাজপুরে জেলা জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী বিপুল।
‘বিদ্রোহী’দের জয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় এখানে আমাদের প্রার্থীর বাইরে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ওইভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যায় না।’
অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাঁরাই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অনেককে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
সিইসির চোখে নির্বাচন
১ হাজার ৪০০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে ইসি। গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিক্রিয়ায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটাররা শিক্ষিত, মার্জিত। তাঁরা ভদ্রভাবে ভোট দিয়েছেন। আজ আমাদের যে পর্যবেক্ষণ, তাতে বলা যায়, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও থেকে কোনো অনিয়ম, সহিংসতার তথ্য আসেনি। আমরা সন্তুষ্ট।’
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা তাদের বিষয় নয়। এটা রাজনীতিবিদেরা বুঝবেন।
নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘গাইবান্ধা নির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে গুরুতর অনিয়ম লক্ষ করেছি। কমিশন বাধ্য হয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে একটা মেসেজ (বার্তা) এসেছে। যেহেতু নির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই অনিয়ম হলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমাদের মনে হয়, এর একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) এই (জেলা পরিষদ) নির্বাচনে পড়েছে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, অনেকের যেমন আঙুলের ছাপ প্রথমে মেলেনি, পরে মিলেছে। একজনও ভোট দিতে পারেনি এমন হয়নি।
যদিও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় আঙুলে মেহেদি থাকায় ভোট দিতে ব্যর্থ হন শেলিনা আক্তার। তিনি শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে