ভাটায় ইট পুড়ছে টায়ারের ছাইয়ে

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৪: ১১

রংপুরের বদরগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে টায়ারের ছাই, কাঠের গুঁড়া, প্লাস্টিক ও পুরোনো কাপড়ের টুকরো। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাশ্রয়ের জন্য এসব বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ইটভাটার মালিকেরা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও মানুষ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বদরগঞ্জে কৃষিজমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ৭১টি ইটভাটা। বেশির ভাগ ইটভাটার কোনো কাগজপত্র নেই।

গত রোববার মধুপুর ইউনিয়নের চেংমারী এলাকায় বিবিএল, কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় এমআরসি ও এসএনবি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটার মালিকেরা কাঁচা ইট পোড়াতে টায়ারের ছাই, কাঠ, কাঠের গুঁড়া, প্লাস্টিক ও পুরোনো কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করছেন। গত বছর তিন ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে বিবিএল ইটভাটা। কাগজপত্র ছাড়াই এই ইটভাটা নির্মাণ করায় ওই বছরের শুরুতে ভাটাটি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। বন্ধের কিছুদিন পর আবার চালু করা হয়।

জানা গেছে, ইটভাটায় আগুন দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসনের লিখিত অনুমতি লাগে। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই ১১ নভেম্বর বিবিএল ইটভাটায় ইট পোড়াতে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে কয়লার সঙ্গে মিশ্রণ করা হচ্ছে টায়ারের ছাই। ভাটাটি পরিচালনা করছেন এলাকার মোকছেদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

আগুন দেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিবিএল ইটভাটার মালিক মোকছেদুল ইসলাম বলেন ‘সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে আবেদন করলে আর কিছুই লাগে না।’ টায়ারের ছাই ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এসএনবি নামের ইটভাটাটিও জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাঁচা ইট পোড়াতে কয়লার পরিবর্তে কাঠের গুঁড়া, টায়ারের ছাই ও প্লাস্টিকের গুঁড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাটায় শত শত বস্তা টায়ারের ছাই ও প্লাস্টিকের বস্তা একটি ঘরে মজুত করে রাখা হয়েছে। ইটভাটার মালিক শামসুল আলম বলেন, ‘ভাই, কয়লার দাম বেশি, টাকা দিয়েও মিলছে না।

তাই কাঁচা ইট পোড়াতে টায়ারের ছাই ও প্লাস্টিকের গুঁড়া ব্যবহার করছি। এতে পরিবেশের বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।’

এমআরসি ইটভাটায় কয়লার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে কাঠের গুঁড়া। এই ইটভাটা গত বছর কৃষিজমিতে নির্মাণ করা হয়। শুরুতে নির্মাণাধীন ইটভাটাটি প্রশাসন গুঁড়িয়ে দেয়। পরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে পুনরায় ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। ১৫ নভেম্বর ইটভাটাটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাঠের গুঁড়া স্তূপ করা হয়েছে। শ্রমিকেরা কয়লার সঙ্গে মিশ্রণ করছেন কাঠের গুঁড়া। এই ইটভাটার মালিক রুহুল আমিন জানান, আগুন দেওয়ার শুরুতে কাঠের গুঁড়া ব্যবহার করা লাগে। আগুন দেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুমতি পেয়েই ভাটায় আগুন দিয়েছি।’ তবে তিনি অনুমতির কোনো কাগজপত্র এ প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি।

ওই এলাকার স্কুলশিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, ‘টায়ারের ছাই ও প্লাস্টিকের গুঁড়া ইটভাটায় ব্যবহার করায় মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। কিন্তু দেখার কেউ নেই।’

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাকির মুবাশ্বির বলেন, ‘পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ টায়ারের ছাই ও প্লাস্টিকের গুঁড়া ইটভাটায় ব্যবহার করায় মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ারও বেশি ঝুঁকি রয়েছেন ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকেরা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ‘ইটভাটাগুলোতে যদি আইনবহির্ভূত কোনো কাজ হয়ে থাকে, তাহলে ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত