মাসুদ কামাল
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সাক্ষাৎটি কি খুব আনুষ্ঠানিক ছিল? আমার তা মনে হয় না। আনুষ্ঠানিক হলে সেখানে ফটোসাংবাদিক থাকতেন, ছবি উঠত, সে ছবি ঘটা করে ছাপা হতো। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কিছু হয়নি। এই সময়ে রাষ্ট্রপতির ইন্টারভিউ নিতে পারা একটা বড় ঘটনা। পত্রিকাটিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কোনো ইন্টারভিউ প্রকাশিত হয়নি। ফলে বোঝাই যায়, পুরো বৈঠকটাই ছিল অনানুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রপতি যেভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, পুরোনো সম্পর্কের কথা তুলেছেন, তাতে বোঝা যায়, আটপৌরে অনেক কথাই উচ্চারিত হয়েছে তাঁদের আলোচনায়। অথচ সেই আলোচনারই একটি বাক্য নিয়ে দারুণ উত্তপ্ত এখন রাজনীতির মাঠ।
রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এই একটি কথাই যেন অনেক ঘটনার জন্ম দিতে চলেছে। এরই মধ্যে তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে।
লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই, সোমবার, অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা অভিযোগ করলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। এতটুকু বলেই থামেননি এই উপদেষ্টা, সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি মিথ্যাচার করেন, তাহলে তিনি কি শপথ ভঙ্গ করেননি?
উপদেষ্টার এমন প্রশ্ন কিন্তু অসংগত নয়। শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে দেশত্যাগের পর, অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার আগে, রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে একটা ভাষণ দিয়েছিলেন। সংক্ষিপ্ত সেই ভাষণে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, সেই পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি গ্রহণও করেছেন। যে পদত্যাগপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন বলে পুরো জাতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, এখন এত দিন পরে এসে সেটাকে অস্বীকার করা তো মিথ্যাচারেরই নামান্তর। এটাই আসলে সরল বিশ্লেষণ। এ বিবেচনায় উপদেষ্টার প্রশ্নটি যথাযথ।
কিন্তু বাস্তবতা কি এ রকমই ছিল? পৃথিবীতে সব ঘটনাই কি প্রচলিত নিয়ম মেনে হয়? উপদেষ্টা প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রপতির শপথ ভঙ্গের বিষয়ে। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ তো তাঁরাও নিয়েছেন। সেই শপথ তাঁদের সবাই কি ঠিকঠাকমতো রক্ষা করতে পারছেন?
সংবিধান, শপথ—এসব মেনে চলা কেবল রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টাদেরই কাজ নয়। দেশের প্রত্যেক নাগরিকেরই একান্ত দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব কি সবাইকে সব সময় মেনে চলতে দেখা যায়? এই যে বিগত সরকার ছিল, তার গুরুত্বপূর্ণ লোকগুলো কি সংবিধান মেনে দুর্নীতি করতেন? সংবিধানে কি দুর্নীতি করার কোনো অনুচ্ছেদ আছে?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন, সংবিধান মেনে ছেড়েছেন? গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব—যে নামেই অভিহিত করুন, সেটা কি সংবিধান মেনে হয়েছে? এমনকি আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও তো হয়নি সংবিধান মেনে। কিছু কিছু ঘটনা কিন্তু সমাজে বা রাষ্ট্রে সব সময় ঘটে থাকে, যা প্রচলিত নিয়ম মেনে হয় না, কিন্তু তার অনিবার্যতাকে অস্বীকারও করা যায় না। তখন সংবিধান, নাকি শপথ লঙ্ঘিত হলো, সেসব দেখার সময় থাকে না। আমি যদি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যটিকেও সে রকম কিছু বলে মনে করি, তাহলে কি বড় বেশি ভুল হয়ে যাবে?
এবার লেখাটির দিকে বরং আরেকবার তাকাতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পাওয়া যায়নি, ওনার কাছে দিয়ে যাননি, ওনাকে বলেও যাননি—এত সব কথা বলার পরও রাষ্ট্রপতির শেষ কথাটি কিন্তু ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন, এটাই সত্য।’ এটাই হচ্ছে মূলকথা। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন—এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ওনার এই দেশত্যাগ আইনগতভাবে হয়েছে কি হয়নি, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। শেখ হাসিনা অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে কী বলছেন, ওনার পুত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সম্পর্কে সংবিধান কী বলছে—এগুলো আসলে বর্তমান বাস্তবতায় কুতর্ক ছাড়া আর কিছু নয়।
আমি কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে মিথ্যাচার মনে করি না। রাষ্ট্রপতি সত্য কথাই বলেছেন। ওনার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র নেই, তিনি সেটি দিয়ে যাননি। একবার ৫ আগস্টের সেই সময়টার কথা ভাবুন, শেখ হাসিনার পক্ষে কি এতটা গুছিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা ছিল? আচ্ছা, যদি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েও থাকেন, কার মাধ্যমে পাঠিয়েছেন? লোকটাকে খুঁজে বের করলেই তো হয়। কেউ একজন বলুক, ‘আমিই শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে পৌঁছে দিয়েছি।’ বাস্তবতা হচ্ছে, তেমন কোনো লোককে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এদিকে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪-এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়েছিলেন।
তাহলে রাষ্ট্রপতি কেন সেদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগ করা এবং সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন? উত্তর একটাই—বাস্তবতার প্রয়োজনে বলেছেন। আচ্ছা, ওই সময়ে এ ছাড়া অন্য কিছু কি তিনি বলতে পারতেন? বললে সেটা কি গণ-অভ্যুত্থানের যে উত্তাল জোয়ার, তার অনুকূলে হতো। সেই জোয়ারের প্রতিকূলে থাকা কি কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল?
এই কথাগুলো বললাম, উপদেষ্টা সাহেব কি এসব জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন, খুব ভালোভাবেই জানেন। বিষয়গুলো আসলে সবাই জানেন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এসব নিয়ে কথা বলা, নতুন তর্কের সূচনা করতে যাওয়া আসলে কোনো কাজের কাজ নয়। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন সে কথাটা, শেখ হাসিনা চলে গেছেন, এটাই সত্য। তাহলে কি নতুন করে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরুর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে?
দিনকয়েক আগে, ১৮ অক্টোবর, ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া ‘ইন্ডিয়া টুডে’তে একটা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বাংলাদেশ পাওয়ার স্ট্রাগল: ইউনূস গভর্নমেন্ট ওয়ান্টস প্রেসিডেন্ট আউট, আর্মি চিফ অন রাডার’ শিরোনামে নিবন্ধটি লিখেছেন তাদের প্রথিতযশা সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। আলোচিত সেই লেখায় যেসব রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল, তারই যেন প্রতিফলন ঘটছে। সুবীর ভৌমিক বলেছিলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আইনগতভাবে যা কিছু করতে সমস্যায় পড়ে, সেগুলো করতে ছাত্ররা এগিয়ে আসে। বিষয়টি প্রমাণে তিনি উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারকের অপসারণে ছাত্রদের মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন।
সামনের দিনগুলোতে সে রকম কিছু দেখতে হবে?
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সাক্ষাৎটি কি খুব আনুষ্ঠানিক ছিল? আমার তা মনে হয় না। আনুষ্ঠানিক হলে সেখানে ফটোসাংবাদিক থাকতেন, ছবি উঠত, সে ছবি ঘটা করে ছাপা হতো। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কিছু হয়নি। এই সময়ে রাষ্ট্রপতির ইন্টারভিউ নিতে পারা একটা বড় ঘটনা। পত্রিকাটিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কোনো ইন্টারভিউ প্রকাশিত হয়নি। ফলে বোঝাই যায়, পুরো বৈঠকটাই ছিল অনানুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রপতি যেভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, পুরোনো সম্পর্কের কথা তুলেছেন, তাতে বোঝা যায়, আটপৌরে অনেক কথাই উচ্চারিত হয়েছে তাঁদের আলোচনায়। অথচ সেই আলোচনারই একটি বাক্য নিয়ে দারুণ উত্তপ্ত এখন রাজনীতির মাঠ।
রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এই একটি কথাই যেন অনেক ঘটনার জন্ম দিতে চলেছে। এরই মধ্যে তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে।
লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই, সোমবার, অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা অভিযোগ করলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। এতটুকু বলেই থামেননি এই উপদেষ্টা, সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি মিথ্যাচার করেন, তাহলে তিনি কি শপথ ভঙ্গ করেননি?
উপদেষ্টার এমন প্রশ্ন কিন্তু অসংগত নয়। শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে দেশত্যাগের পর, অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার আগে, রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে একটা ভাষণ দিয়েছিলেন। সংক্ষিপ্ত সেই ভাষণে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, সেই পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি গ্রহণও করেছেন। যে পদত্যাগপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন বলে পুরো জাতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, এখন এত দিন পরে এসে সেটাকে অস্বীকার করা তো মিথ্যাচারেরই নামান্তর। এটাই আসলে সরল বিশ্লেষণ। এ বিবেচনায় উপদেষ্টার প্রশ্নটি যথাযথ।
কিন্তু বাস্তবতা কি এ রকমই ছিল? পৃথিবীতে সব ঘটনাই কি প্রচলিত নিয়ম মেনে হয়? উপদেষ্টা প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রপতির শপথ ভঙ্গের বিষয়ে। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ তো তাঁরাও নিয়েছেন। সেই শপথ তাঁদের সবাই কি ঠিকঠাকমতো রক্ষা করতে পারছেন?
সংবিধান, শপথ—এসব মেনে চলা কেবল রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টাদেরই কাজ নয়। দেশের প্রত্যেক নাগরিকেরই একান্ত দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব কি সবাইকে সব সময় মেনে চলতে দেখা যায়? এই যে বিগত সরকার ছিল, তার গুরুত্বপূর্ণ লোকগুলো কি সংবিধান মেনে দুর্নীতি করতেন? সংবিধানে কি দুর্নীতি করার কোনো অনুচ্ছেদ আছে?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন, সংবিধান মেনে ছেড়েছেন? গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব—যে নামেই অভিহিত করুন, সেটা কি সংবিধান মেনে হয়েছে? এমনকি আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও তো হয়নি সংবিধান মেনে। কিছু কিছু ঘটনা কিন্তু সমাজে বা রাষ্ট্রে সব সময় ঘটে থাকে, যা প্রচলিত নিয়ম মেনে হয় না, কিন্তু তার অনিবার্যতাকে অস্বীকারও করা যায় না। তখন সংবিধান, নাকি শপথ লঙ্ঘিত হলো, সেসব দেখার সময় থাকে না। আমি যদি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যটিকেও সে রকম কিছু বলে মনে করি, তাহলে কি বড় বেশি ভুল হয়ে যাবে?
এবার লেখাটির দিকে বরং আরেকবার তাকাতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পাওয়া যায়নি, ওনার কাছে দিয়ে যাননি, ওনাকে বলেও যাননি—এত সব কথা বলার পরও রাষ্ট্রপতির শেষ কথাটি কিন্তু ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন, এটাই সত্য।’ এটাই হচ্ছে মূলকথা। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন—এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ওনার এই দেশত্যাগ আইনগতভাবে হয়েছে কি হয়নি, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। শেখ হাসিনা অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে কী বলছেন, ওনার পুত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সম্পর্কে সংবিধান কী বলছে—এগুলো আসলে বর্তমান বাস্তবতায় কুতর্ক ছাড়া আর কিছু নয়।
আমি কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে মিথ্যাচার মনে করি না। রাষ্ট্রপতি সত্য কথাই বলেছেন। ওনার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র নেই, তিনি সেটি দিয়ে যাননি। একবার ৫ আগস্টের সেই সময়টার কথা ভাবুন, শেখ হাসিনার পক্ষে কি এতটা গুছিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা ছিল? আচ্ছা, যদি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েও থাকেন, কার মাধ্যমে পাঠিয়েছেন? লোকটাকে খুঁজে বের করলেই তো হয়। কেউ একজন বলুক, ‘আমিই শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে পৌঁছে দিয়েছি।’ বাস্তবতা হচ্ছে, তেমন কোনো লোককে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এদিকে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪-এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়েছিলেন।
তাহলে রাষ্ট্রপতি কেন সেদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগ করা এবং সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন? উত্তর একটাই—বাস্তবতার প্রয়োজনে বলেছেন। আচ্ছা, ওই সময়ে এ ছাড়া অন্য কিছু কি তিনি বলতে পারতেন? বললে সেটা কি গণ-অভ্যুত্থানের যে উত্তাল জোয়ার, তার অনুকূলে হতো। সেই জোয়ারের প্রতিকূলে থাকা কি কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল?
এই কথাগুলো বললাম, উপদেষ্টা সাহেব কি এসব জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন, খুব ভালোভাবেই জানেন। বিষয়গুলো আসলে সবাই জানেন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এসব নিয়ে কথা বলা, নতুন তর্কের সূচনা করতে যাওয়া আসলে কোনো কাজের কাজ নয়। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন সে কথাটা, শেখ হাসিনা চলে গেছেন, এটাই সত্য। তাহলে কি নতুন করে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরুর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে?
দিনকয়েক আগে, ১৮ অক্টোবর, ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া ‘ইন্ডিয়া টুডে’তে একটা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বাংলাদেশ পাওয়ার স্ট্রাগল: ইউনূস গভর্নমেন্ট ওয়ান্টস প্রেসিডেন্ট আউট, আর্মি চিফ অন রাডার’ শিরোনামে নিবন্ধটি লিখেছেন তাদের প্রথিতযশা সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। আলোচিত সেই লেখায় যেসব রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল, তারই যেন প্রতিফলন ঘটছে। সুবীর ভৌমিক বলেছিলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আইনগতভাবে যা কিছু করতে সমস্যায় পড়ে, সেগুলো করতে ছাত্ররা এগিয়ে আসে। বিষয়টি প্রমাণে তিনি উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারকের অপসারণে ছাত্রদের মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন।
সামনের দিনগুলোতে সে রকম কিছু দেখতে হবে?
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪