মন্ত্রী তাজুলের এলাকায় ভোট লাগল না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৪: ১৯
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০৩

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন আছে ১১টি। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ার‍ম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য মিলিয়ে পদ ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে ১২৯টিতেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে গেলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের সব কটি, সদস্যপদের ৯৯টির মধ্যে ৮৮টি এবং সংরক্ষিত নারী সদস্যপদের ৩৩টির মধ্যে ৩০টি।

মনোহরগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা ৩১ জানুয়ারি। অথচ সেখানে কার্যত ভোটই লাগছে না। এর আগে গত অক্টোবরে জেলার লাকসামে পাঁচ ইউনিয়নের সব কটি পদে বিনা ভোটে জিতে গিয়েছিলেন প্রার্থীরা।

মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম নিয়ে কুমিল্লা-৯ আসন। এই আসনের সাংসদ মো. তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগেই তাঁর লোকজন এখানে অন্য কাউকে নির্বাচন করতে দেননি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা।

এ বিষয়ে কয়েক দিন আগে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাজুল বলেছেন, ‘সেখানের লোকেরা আমাকে খুব পছন্দ করেন, তাঁদেরও আমি পছন্দ করি। এ কারণে আমার দেওয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।’

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ ধাপে ভোট হচ্ছে মনোহরগঞ্জে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। কিন্তু ১১ ইউনিয়নের সব কটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিপরীতে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অপরদিকে সাধারণ মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে একক প্রার্থী হওয়ায় আরও ১১৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজির হোসেন মিয়া জানান, চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় বাইশগাঁও ইউনিয়নে আলমগীর হোসেন, সরসপুর ইউনিয়নে আবদুল মান্নান, হাসনাবাদ ইউনিয়নে কামাল হোসেন, ঝলম উত্তর ইউনিয়নে আবদুল মজিদ খান রাজু, ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়নে আশিকুর রহমান হিরণ, মৈশাতুয়া ইউনিয়নে মফিজুর রহমান, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নে মহিন উদ্দিন, খিলা ইউনিয়নে আল আমিন ভূঁইয়া, উত্তর হাওলা ইউনিয়নে আবদুল হান্নান হিরণ, নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নে আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং বিপুলাসার ইউনিয়নে ইকবাল মাহমুদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

তবে বিপুলাসার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে এবং মৈশাতুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ঝলম উত্তর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে একাধিক প্রার্থী আছেন। এই ১৪টি সদস্য পদে ৩১ জানুয়ারি ভোট হবে।

সরসপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার মজুমদারের স্ত্রী মনোহরগঞ্জ নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে এসে লাঞ্ছিত হন। তাঁকে মনোনয়নপত্র কিনতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কিনতে না পেরে আরও অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে ৩১ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেছিলেন।

ঝলম উত্তর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মো. ইকবাল হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন কাউকে মনোনয়নপত্র কিনতে দেননি। যাঁরা গিয়েছেন তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা উপায় না পেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট মনোনয়নপত্র কিনতে গেলে তিনি জানান উপজেলা থেকেই কিনতে হবে। পরে ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করি। এরপর সেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৩১ ডিসেম্বর একটি মানববন্ধন করি। উপায় না পেয়ে আমরা ১ জানুয়ারি ঢাকার উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হই। ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আদালত থেকে আমাদের মনোনয়নপত্র দিতে নির্দেশ প্রদান করে বেলা ১২টার দিকে। আমরা বিকেল সাড়ে চারটায় কুমিল্লা এসে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে জমা দিতে গেলে আমাদের জানানো হয় উপজেলায় দিতে হবে। পরে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গেলে যুবলীগ নেতা কামালের নেতৃত্বে যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ধাওয়া করে। পরে আর জমা দেওয়া হয়নি।

বিপুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান দুলাল অভিযোগ করেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমি নৌকা প্রতীক পেয়েছিলাম। পরে মন্ত্রীর নির্দেশে আমি সরে যাই। নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় যুবলীগ নেতা ইকবাল মাহমুদকে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত