লাউয়াছড়ায় পানি ও খাদ্যসংকটে প্রাণী

মাহিদুল ইসলাম কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) 
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০৮: ২৯

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্য প্রাণীদের পানি ও খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বনের ভেতরের বিভিন্ন ঝিরি, ছড়া বা নালা শুকিয়ে গেছে। কৃত্রিম জলাধারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে অবাধে বনের গাছ-বাঁশ উজাড় হওয়ায় খাদ্যসংকটে পড়েছে বন্য প্রাণী ও পাখি। ফলে খাদ্য ও পানির খোঁজে বন্য প্রাণী বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসছে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, সংকট মোকাবিলায় লাউয়াছড়া উদ্যানে কৃত্রিম পানির জলাধার সৃষ্টির পরিকল্পনার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। পানির সমস্যা সমাধান করার জন্য নতুন করে সুফল প্রকল্প নেওয়া হবে। 

লাউয়াছড়ার আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট ছোট ছড়া ও নালা শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে এসব ছড়ায় পানি আসে। বৃষ্টি না থাকলে পানি থাকে না। ছড়াগুলো শুকিয়ে বালু বের হয়ে গেছে। লাউয়াছড়া ও জানকি ছড়ায় কৃত্রিম দুটি পানির কুয়া খনন করা হয়েছিল। এগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এসব ছড়া ও খালের পানি এবং খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, হরিণ, বানর, বুনো শূকরসহ বনের প্রাণী। কিন্তু কুয়া দুটি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বনে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। 

এ ছাড়া গত দুই দশকে লাউয়াছড়া বনের মূল্যবান গাছ উজাড় হওয়ায় ঘনত্ব অনেকটা কমে আসায় খাবার ও পানিসংকটে পড়ছে। বন্য প্রাণী অনেক সময় লোকালয়ের বাঘমারা, শরইবাড়ী, ভেড়াছড়া, লঙ্গরপুর, টিলাগাঁও ও ভাষানীগাঁও চলে আসে।

টিলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কালু মিয়া বলেন, ‘আমার খেতের সবজি বানর, বুনো শূকরসহ অন্য প্রাণীরা খেয়ে যায়। এদের কারণে আমরা কিছুই চাষ করতে পারছি না।’ 

জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি কমলগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে বনে পানি না থাকার কারণে প্রাণীদের খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা যায়। অনেক সময় প্রাণীরা লোকালয়ের চলে আসে। বন্য প্রাণীদের জন্য স্থায়ীভাবে পানির সমস্যা সমাধান করা হোক। এমনিতেই প্রাণীরা বিলুপ্ত হচ্ছে। এখন আবার প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে খাবার পানি থাকে না। কৃত্রিমভাবে স্থায়ী পানির ব্যবস্থা দ্রুত করা হোক।’ 

বন্য প্রাণীর খাবার ও পানিসংকটের বিষয়ে লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে প্রাণীদের যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন, আমরা ততটুকু করতে পারছি না। লাউয়াছড়া বনের ভেতর ছড়ার মধ্যে যেটুকু পানি আছে, তা প্রাণীদের জন্য যথেষ্ট নয়। বন্য প্রাণীদের জন্য বিশেষ করে কৃত্রিম পানির ব্যবস্থার প্রয়োজন। 

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে বনের ভেতরে পানির সংকট সমাধান করা হবে। এর আগেও পানিসংকটের কারণে কৃত্রিমভাবে জলধারা তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে অতিরিক্ত বালু আসার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছড়াগুলো ভরাট হয়ে যায়। আর কৃত্রিম পানির কুয়াগুলোও ভরাট হয়েছে। প্রাণীদের পানির জন্য নতুন করে সুফল প্রকল্প নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত