মুক্তির সামনে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ

জাহিদ হাসান, নড়াইল থেকে ফিরে
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩: ২১

নড়াইল-১ আসনটি কবিরুল হক মুক্তির করতলে বললে খুব একটা ভুল হবে না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিমল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে বিজয় ছিনিয়ে নেন মুক্তি। এরপর নৌকার টিকিটে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু মুক্তির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এখন আওয়ামী লীগের ‘ঘরের মধ্যেই ঘর’ হয়ে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তির মনোনয়ন ঠেকাতে হাফ ডজন দলীয় নেতা নৌকার মাঝি হতে তৎপর। তা উতরে গেলে মুক্তিকে টপকাতে হবে বিএনপির বাধা। সংসদ সদস্য হতে হলে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে এই নেতাকে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, দলীয় টিকিট পেতে সোচ্চার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী সরোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহিদুল ইসলাম শাহী, আওয়ামী লীগের জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমদাদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা লে. কমান্ডার (অব.) ওমর আলী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাজি মফিজ।

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা বিএনপি চাইছে আসনটি দখলে নিতে। আছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী, যা নিয়ে দলটিতে রয়েছে অস্বস্তি।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, প্রয়াত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ সাহার ছেলে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা আনন্দ এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাজেদুর রহমান সুজা।

এ ছাড়া জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি (আম্বিয়া-প্রধান) শরীফ নূরুল আম্বিয়া এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন চাইতে পারেন কালিয়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আকতার হোসেন রাঙ্গাও। 

এ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের আধিপত্য। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, পরেরবার বিজয়ের হাসি হাসে বিএনপি। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয় পায় বিএনপি। ২০১৪ সালে আসনটি পুনরুদ্ধারের পর থেকে এ পর্যন্ত ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আগেভাগে মাঠে নেমেছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন তৃণমূলে। পোস্টার-ব্যানারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রে।

তবে আওয়ামী লীগে ক্রমেই বাড়ছে দলীয় কোন্দল। দীর্ঘদিন ধরে দল দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে নিজাম উদ্দিন খান নিলু, অন্যটির মুক্তি। মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন তিনি। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এলাকাটিতে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। মুক্তির অনুসারীরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের ইন্ধনে একটি পক্ষ তাঁকে ঠেকানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে যাঁরা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা এলাকার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ কারণে নতুন মুখ চাইছেন ভোটাররা।

মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, মতবিনিময়, সভা-সমাবেশসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কবিরুল হক মুক্তি এমপি হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নাই।’

তবে নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বোস বলেন, ‘দলীয় কোন্দল থাকলেও নির্বাচনের সময় আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, জয় নিশ্চিত করতে হেভিওয়েট প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাজেদুর রহমান সুজা বলেন, ‘মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে রাজনীতি করছি। আগে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা বিজয়ী হব।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১১৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৮ জন। কালিয়া পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার কলোড়া, বিচালি, ভদ্রবিলা, সিংগা শোলপুর ও শেখ হাটি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত