রোকেয়া রহমান
গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আনাদোলু সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার এরদোয়ানের পক্ষে তাঁদের ভোট দিয়েছেন, যিনি কিনা দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির নেতৃত্বে রয়েছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। এর আগে ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ আর কিলিচদারোলু পেয়েছিলেন ৪৫ দশমিক শূন্য শতাংশ ভোট। কোনো পক্ষই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। আড়াই কোটির বেশি মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তারপরও এরদোয়ান জিতেছেন।
তুরস্কে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বেশ অন্যায্য পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে বিরোধী দল সহজে পরাজিত হয়েছে। সর্বোচ্চ নির্বাচনী কাউন্সিলের সদস্যদের অপমান করার জন্য ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে সম্প্রতি সরকারি পদে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিরোধীরা তাদের সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারেনি। এ ছাড়া পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া কভারেজ, বিরোধী প্রার্থী কিলিচদারোলুর বিরুদ্ধে নিরলস প্রচারণা, হুমকি, কারসাজি এবং সুশীল সমাজের ওপর দমন-পীড়ন, যেমন দিয়ারবাকিরে এপ্রিলের শেষে ১২৬ জন কুর্দি আইনজীবী, কর্মী ও রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার—সব মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ছিল না।
দেশটিতে সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে ছিল যেখানে বিচার বিভাগ এখন প্রেসিডেন্টের নির্দেশিত রাবার-স্ট্যাম্প নীতির চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে না। অধিকার রক্ষাকারীদের এরদোয়ানের অধীনে আরও পাঁচ বছর থাকাটা তাদের জন্য যে মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না তা বলাই বাহুল্য। নারী, এলজিবিটি (নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী) সম্প্রদায় ও অধিকার গোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে নিজেদের ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করবে। রোববার রাতে ইস্তাম্বুলে প্রথম বিজয়ী বক্তৃতার সময় এরদোয়ান আবারও এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় ও অধিকার রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলোকে টার্গেট করে বলেন, ‘এই এলজিবিটি সম্প্রদায় কি কখনো একে পার্টিতে তাদের পথ খুঁজে পেতে পারে? না, কখনোই নয়, কারণ পরিবার আমাদের কাছে পবিত্র।’
নির্বাচনের আগে তুরস্কের অন্যতম নারী অধিকার গোষ্ঠী লেফট ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট সতর্ক করেছে যে এরদোয়ান এবং কিলিচদারোলুর মধ্যে নির্বাচন ‘অন্ধকার’ এবং ‘আলো’র মধ্যে একটি। বেশ কিছু সুপরিচিত নারী সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, লেখক এবং অধিকার রক্ষাকারীদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়: ‘আমরা হয় অন্ধকারকে ছিন্ন করে ভোরের আলো দেখাতে সফল হব, আর নয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।’
অনেকেই বলছেন, তুরস্কে এখনকার মতো অতিরক্ষণশীল এবং নারীবিদ্বেষী পার্লামেন্ট কখনোই ছিল না। এরদোয়ানের পক্ষে দুটি উগ্র ইসলামপন্থী দল জাতীয় পরিষদে যোগ দিয়েছে। তাঁর দল একেপি শুধু নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টিকে (ওয়াইআরপি) জোটে নিয়ে আসেনি, সংসদীয় প্রার্থী তালিকার অধীনে কুর্দিশ ফ্রি কজ পার্টির (হুদা-পার) চারজন সিনিয়র সদস্যকে মনোনীতও করেছে। চারজনই ১৪ মে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফ্রি কজ পার্টি কুর্দিশ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুন্নি এই জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্ম তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে এবং ১৯৯০-এর দশকে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। সে সময় এর সদস্যরা তাদের মতাদর্শের বিরোধিতা করায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শত শত সদস্য ও সমর্থককে নির্যাতন এবং হত্যা করে। তবে পরে গোষ্ঠীটি আনুষ্ঠানিকভাবে সহিংসতা পরিত্যাগ করে। ফ্রি কজ স্কুলগুলোতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে পাঠদান করার আহ্বান জানিয়েছে। দলটি এ-ও বলেছে যে নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় পরিষেবাগুলো, যেমন স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষাদান, শুধু নারী কর্মীদেরই দেওয়া উচিত।
এদিকে নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টির ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, নারী ‘রোল মডেলদের’ মাধ্যমে নারীদের মধ্যে ‘নৈতিকতা, সতীত্ব, ক্ষমা, ভক্তি এবং উৎপাদনশীলতা’ জোরদার করা উচিত। উভয় পক্ষই আক্রমণাত্মকভাবে এলজিবিটিকিউ এবং অধিকার রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে লবিং করেছে। তারা ২০১২ সালে একেপি সরকার প্রণীত ‘আইন ৬২৪৮’ বাতিল করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা। নারী অধিকারকর্মীরা তালেবান স্টাইল শাসনের জন্য তাদের অভিযুক্ত করেছেন।
প্রায় অপ্রতিরোধ্য প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এরদোয়ানের পার্লামেন্টে আইনি পরিবর্তনের জন্য এই দলগুলোর সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে। তাঁদের উপস্থিতি রাজনীতির অভ্যন্তরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই নারী এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, যা ইতিমধ্যে শাসক ব্লকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কে নারী এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের বিপদ আরও বেড়েছে। সেখানে নারী হত্যা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এরদোয়ান ২০১২ সালে গর্ভপাতকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যদিও তিনি এমন একটি আইন প্রবর্তন করতে ব্যর্থ হন, যা গর্ভাবস্থার ছয় সপ্তাহ পরে গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ করবে। তুরস্কজুড়ে নারীরা এখনো নিরাপদ আবাসন পেতে লড়াই করছেন। নারী দিবসের মিছিলগুলো পুলিশি বাধার মুখে পড়ছে। ২০১৫ সালের পর ইস্তাম্বুলে প্রাইড প্যারেড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীবাদী এবং নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলোকে ক্রমশ একপাশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর থেকে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
২০২১ সালে এরদোয়ান একতরফাভাবে তুরস্ককে ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে প্রত্যাহার করে নেন, যা নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, কনভেনশন থেকে প্রত্যাহারের উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা করতে অস্বীকার করেছে।
গত বছর ‘উই উইল স্টপ ফেমিসাইড’ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ‘নীতিবিরোধী কাজ করার’ ভুয়া অভিযোগ আনা হয়। সংগঠনটি একটি নারীবাদী প্ল্যাটফর্ম, যা নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং খুন হওয়া নারীদের মাসিক হিসাব রাখে। দোষী প্রমাণিত হলে সংগঠনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর।
রোববার রাতে এরদোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণার পর অধিকারকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন, নির্বাচনের ফলাফল জনগণকে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াই করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। উই উইল স্টপ ফেমিসাইড প্ল্যাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক ফিদান আতাসেলিম টুইট করেছেন, ‘আমাদের আশাহত হওয়া উচিত নয়, তবে আমাদের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের সংগঠিত হওয়া, কণ্ঠ তোলা এবং একসঙ্গে থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
কন্সটানজে লেচ,গার্ডিয়ানের সাবেক তুর্কি সংবাদদাতা
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আনাদোলু সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার এরদোয়ানের পক্ষে তাঁদের ভোট দিয়েছেন, যিনি কিনা দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির নেতৃত্বে রয়েছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। এর আগে ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ আর কিলিচদারোলু পেয়েছিলেন ৪৫ দশমিক শূন্য শতাংশ ভোট। কোনো পক্ষই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। আড়াই কোটির বেশি মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তারপরও এরদোয়ান জিতেছেন।
তুরস্কে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বেশ অন্যায্য পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে বিরোধী দল সহজে পরাজিত হয়েছে। সর্বোচ্চ নির্বাচনী কাউন্সিলের সদস্যদের অপমান করার জন্য ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে সম্প্রতি সরকারি পদে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিরোধীরা তাদের সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারেনি। এ ছাড়া পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া কভারেজ, বিরোধী প্রার্থী কিলিচদারোলুর বিরুদ্ধে নিরলস প্রচারণা, হুমকি, কারসাজি এবং সুশীল সমাজের ওপর দমন-পীড়ন, যেমন দিয়ারবাকিরে এপ্রিলের শেষে ১২৬ জন কুর্দি আইনজীবী, কর্মী ও রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার—সব মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ছিল না।
দেশটিতে সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে ছিল যেখানে বিচার বিভাগ এখন প্রেসিডেন্টের নির্দেশিত রাবার-স্ট্যাম্প নীতির চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে না। অধিকার রক্ষাকারীদের এরদোয়ানের অধীনে আরও পাঁচ বছর থাকাটা তাদের জন্য যে মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না তা বলাই বাহুল্য। নারী, এলজিবিটি (নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী) সম্প্রদায় ও অধিকার গোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে নিজেদের ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করবে। রোববার রাতে ইস্তাম্বুলে প্রথম বিজয়ী বক্তৃতার সময় এরদোয়ান আবারও এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় ও অধিকার রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলোকে টার্গেট করে বলেন, ‘এই এলজিবিটি সম্প্রদায় কি কখনো একে পার্টিতে তাদের পথ খুঁজে পেতে পারে? না, কখনোই নয়, কারণ পরিবার আমাদের কাছে পবিত্র।’
নির্বাচনের আগে তুরস্কের অন্যতম নারী অধিকার গোষ্ঠী লেফট ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট সতর্ক করেছে যে এরদোয়ান এবং কিলিচদারোলুর মধ্যে নির্বাচন ‘অন্ধকার’ এবং ‘আলো’র মধ্যে একটি। বেশ কিছু সুপরিচিত নারী সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, লেখক এবং অধিকার রক্ষাকারীদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়: ‘আমরা হয় অন্ধকারকে ছিন্ন করে ভোরের আলো দেখাতে সফল হব, আর নয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।’
অনেকেই বলছেন, তুরস্কে এখনকার মতো অতিরক্ষণশীল এবং নারীবিদ্বেষী পার্লামেন্ট কখনোই ছিল না। এরদোয়ানের পক্ষে দুটি উগ্র ইসলামপন্থী দল জাতীয় পরিষদে যোগ দিয়েছে। তাঁর দল একেপি শুধু নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টিকে (ওয়াইআরপি) জোটে নিয়ে আসেনি, সংসদীয় প্রার্থী তালিকার অধীনে কুর্দিশ ফ্রি কজ পার্টির (হুদা-পার) চারজন সিনিয়র সদস্যকে মনোনীতও করেছে। চারজনই ১৪ মে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফ্রি কজ পার্টি কুর্দিশ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুন্নি এই জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্ম তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে এবং ১৯৯০-এর দশকে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। সে সময় এর সদস্যরা তাদের মতাদর্শের বিরোধিতা করায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শত শত সদস্য ও সমর্থককে নির্যাতন এবং হত্যা করে। তবে পরে গোষ্ঠীটি আনুষ্ঠানিকভাবে সহিংসতা পরিত্যাগ করে। ফ্রি কজ স্কুলগুলোতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে পাঠদান করার আহ্বান জানিয়েছে। দলটি এ-ও বলেছে যে নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় পরিষেবাগুলো, যেমন স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষাদান, শুধু নারী কর্মীদেরই দেওয়া উচিত।
এদিকে নিউ ওয়েলফেয়ার পার্টির ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, নারী ‘রোল মডেলদের’ মাধ্যমে নারীদের মধ্যে ‘নৈতিকতা, সতীত্ব, ক্ষমা, ভক্তি এবং উৎপাদনশীলতা’ জোরদার করা উচিত। উভয় পক্ষই আক্রমণাত্মকভাবে এলজিবিটিকিউ এবং অধিকার রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে লবিং করেছে। তারা ২০১২ সালে একেপি সরকার প্রণীত ‘আইন ৬২৪৮’ বাতিল করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা। নারী অধিকারকর্মীরা তালেবান স্টাইল শাসনের জন্য তাদের অভিযুক্ত করেছেন।
প্রায় অপ্রতিরোধ্য প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এরদোয়ানের পার্লামেন্টে আইনি পরিবর্তনের জন্য এই দলগুলোর সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে। তাঁদের উপস্থিতি রাজনীতির অভ্যন্তরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই নারী এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, যা ইতিমধ্যে শাসক ব্লকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কে নারী এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের বিপদ আরও বেড়েছে। সেখানে নারী হত্যা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এরদোয়ান ২০১২ সালে গর্ভপাতকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যদিও তিনি এমন একটি আইন প্রবর্তন করতে ব্যর্থ হন, যা গর্ভাবস্থার ছয় সপ্তাহ পরে গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ করবে। তুরস্কজুড়ে নারীরা এখনো নিরাপদ আবাসন পেতে লড়াই করছেন। নারী দিবসের মিছিলগুলো পুলিশি বাধার মুখে পড়ছে। ২০১৫ সালের পর ইস্তাম্বুলে প্রাইড প্যারেড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীবাদী এবং নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলোকে ক্রমশ একপাশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর থেকে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
২০২১ সালে এরদোয়ান একতরফাভাবে তুরস্ককে ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে প্রত্যাহার করে নেন, যা নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, কনভেনশন থেকে প্রত্যাহারের উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা করতে অস্বীকার করেছে।
গত বছর ‘উই উইল স্টপ ফেমিসাইড’ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ‘নীতিবিরোধী কাজ করার’ ভুয়া অভিযোগ আনা হয়। সংগঠনটি একটি নারীবাদী প্ল্যাটফর্ম, যা নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং খুন হওয়া নারীদের মাসিক হিসাব রাখে। দোষী প্রমাণিত হলে সংগঠনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর।
রোববার রাতে এরদোয়ানকে বিজয়ী ঘোষণার পর অধিকারকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন, নির্বাচনের ফলাফল জনগণকে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াই করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। উই উইল স্টপ ফেমিসাইড প্ল্যাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক ফিদান আতাসেলিম টুইট করেছেন, ‘আমাদের আশাহত হওয়া উচিত নয়, তবে আমাদের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের সংগঠিত হওয়া, কণ্ঠ তোলা এবং একসঙ্গে থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
কন্সটানজে লেচ,গার্ডিয়ানের সাবেক তুর্কি সংবাদদাতা
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে