কচুরিপানাও ফেলনা নয়

আবুল কাশেম, সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ০৮: ২৬

‘থাকিলে ডোবাখানা, হবে কচুরিপানা, 
বাঘে হরিণে খানা একসাথে 
খাবে না...’

বাঘে আর হরিণে একসঙ্গে খানা খাওয়া অসম্ভব হলেও কচুরিপানা এখন আর ফেলনা নয়। এটি দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। আপাতদৃষ্টে কৃষকের গলার কাঁটা এই জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য। সেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রাম। সেই গ্রামের রফিকুল-জয়তুন দম্পতি তাঁদের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন কচুরিপানা দিয়ে তৈরি পণ্যের একটি কুটিরশিল্প প্রকল্প। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বিলে অযত্নে জন্মানো কচুরিপানা কিনে রোদে শুকিয়ে সেগুলো তাঁরা পাঠাচ্ছেন জয়পুরহাটের একটি কারখানায়। প্রতি মণ শুকনা কচুরিপানা বিক্রি করেন তাঁরা ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সেই কারখানায় এসব শুকনা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টব, ফুলদানি, বালতি, পাটি, ট্রে, ফুলঝুড়ি, ডিম রাখার পাত্র, পাপোশ, মোড়া, টুপি, আয়নার ফ্রেম, টেবিল ম্যাটসহ প্রায় ২০ ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রফিকুলের বাড়িতেও তৈরি হচ্ছে কিছু পণ্য।

সম্প্রতি এক সকালে রসুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ কচুরিপানা সংগ্রহে ব্যস্ত। আবদুল লতিফ ও তাঁর স্ত্রী কাজ করছিলেন সেখানে। কাজ করতে করতে কথা বলছিলেন আবদুল লতিফ। তিনি জানালেন, শুধু রসুলপুর নয়, সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া, ঘুঘুদহ, গৌরী গ্রাম, দোপমাজগ্রাম, ধাতালপুর, মিয়াপুর, বহলবাড়িয়া, বানিয়াবছ, গাঙ্গোহাটি এবং পাশের বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর, হাটুরিয়া, নাকালিয়াসহ ১৫টি গ্রামের মানুষ কচুরিপানা সংগ্রহের পর বিক্রি করেন রফিকুলের কাছে।

কথা হলো এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়তুন খাতুনের সঙ্গে। কচুরিপানা দিয়ে পণ্য তৈরির পেছনের গল্প জানালেন তিনি। বেত দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রির পারিবারিক ব্যবসা ছিল তাঁর স্বামী রফিকুলের। ব্যবসার কাজে একবার স্বামী-স্ত্রী গিয়েছিলেন ঢাকায়। সেখানে বিডি ক্রিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে জানতে পারেন, কচুরিপানা দিয়েও বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। সেই তথ্যে তাঁদের মনে হয়, কাজটি তাঁরা নিজেরাও করতে পারেন।

বিডি ক্রিয়েশনকে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানান জয়তুন। এরপর সেখান থেকে তিনজন মাস্টার তাঁদের গ্রামে গিয়ে হাতেকলমে শিখিয়ে দেন, কচুরিপানা দিয়ে কীভাবে জিনিসপত্র তৈরি করতে হয়। সেই শুরু। ধীরে ধীরে জয়তুন গ্রামের নারীদের এ কাজে যুক্ত করেন। এখন ৩০-৪০ জন নারী কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ করছেন তাঁদের বাড়িতে। বর্তমানে ১০ রকমের পণ্য তৈরি করে বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে নগদ অর্থের অভাবে মাঝেমধ্যে কাজটি সচল রাখতে হিমশিম খেতে হয় জয়তুন ও রফিকুলকে।

কথা হয় বিডি ক্রিয়েশনের কর্ণধার আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের আটটি দেশে কচুরিপানায় তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতিবছর দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকার এসব পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত