Ajker Patrika

বাড়ছে শব্দদূষণ, নেই পদক্ষেপ

মামুনুর রহমান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১৬: ৪১
বাড়ছে শব্দদূষণ, নেই পদক্ষেপ

টাঙ্গাইলে শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনো কোনো জায়গায় দূষণের মাত্রা ছেড়েছে দেড় গুণের বেশি। শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা গড়ে ৬০ ডেসিবেল হলেও শহরের অনেক জায়গায় ১০৩, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যণ। তবে দূষণ কমাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোনো মহলের। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে শ্রবণশক্তি কমার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রাসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।

টাঙ্গাইল শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদয় চন্দ্র ও নাজিয়া নওশিন নামের দুই শিক্ষার্থী ও গবেষক। তাঁদের পরিমাপে ৭০ থেকে ১০৩ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ পাওয়া গেছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের বেশি হলেই তা দূষণ।

এ বিষয়ে এই দুই গবেষক বলেন, বেবিস্ট্যান্ড, নিরালা মোড় ও নতুন বাসটার্মিনাল এলাকায় গড়ে পাওয়া গেছে ৭৫ ডেসিবেল। আর কোনো কোনো জায়গায় সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে ১০৩ ডেসিবেল।

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের মো. মবিনুর রহমান, সায়মন সাদিক ও আশফাকুজ্জামান নামের তিন শিক্ষার্থী বলেন, রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গাড়ির উচ্চ শব্দ ও হর্নের কারণে তাঁদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় শিক্ষক কী বলেন তা শোনা যায় না।

নতুন বাসটার্মিনাল এলাকা, বেবিস্ট্যান্ড এলাকা ও নিরালা মোড় এলাকার বেশ কয়েকজন পথচারী বলেন, অনেক সময় অকারণেই গাড়ির হর্ন বাজান পরিবহনচালকেরা। যানজটে বসে থাকলেও একশ্রেণির চালক হর্ন বাজান। এ ছাড়া অনেকে মোটরসাইকেলেও বিকট শব্দের হর্ন ব্যবহার করেন। তাঁদের কারণে মাথাব্যথা, কানে কম শোনাসহ নানা জটিলতায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তাঁরা।

Captureশব্দদূষণ প্রসঙ্গে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে আমাদের মনোজাগতিক পরিবর্তন হয়। মেজাজটা খিটমিটে হয়ে যায়। এতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সব যানবাহনেই এখন উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ এস সি পণ্ডিত বলেন, শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি অনেক কমে যাচ্ছে। যে সমস্যাটা ৬০-৭০ বছরে হওয়ার কথা, তা এখন ৩৫ বছরেই হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী শব্দের মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেক জায়গাতেই শব্দের মাত্রা এর চেয়ে অনেক বেশি। আমরা শব্দদূষণ কমাতে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’ সবাই সচেতন হলেই দূষণ কমবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসিক সমন্বয় সভা ও মাসিক আরডিসি সভায় আলোচনা করা হয়েছে। জেলায় শব্দদূষণ কমানোর জন্য বিআরটিএ, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শব্দদূষণ কমানো সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত