সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে, দায় নেবে কে

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২২, ০৬: ৪১
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ০৮: ৪২

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এবার নির্ধারিত সময়ের জন্য আন্তজেলা মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এতে খুব একটা সুফল তো মেলেইনি, উল্টো ঈদের পরে ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঈদের আগে-পরে মাত্র ১২ দিনে দেশের বিভিন্ন একলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিন শতাধিক মানুষের।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ সড়ক ও মহাসড়কের নির্মাণকৌশল সঠিক নয়। যানবাহন চলাচলেও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সড়ক-মহাসড়কগুলো দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সরকার দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় সন্তানসম্ভবা এক নারীর মৃত্যু হয়। এ সময় তাঁর স্বামী ও এক সন্তানও নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় ওই নারীর পেট ফেটে তাঁর গর্ভের সন্তানটিও বের হয়ে যায়। বিস্ময়করভাবে সেই শিশু সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছে। এই ঘটনার পর সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এসব দুর্ঘটনার দায় কার, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিন উল্লাহ নুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন বলেন, ‘জনগণকে সচেতন হতে হবে। আপনাকে, আমাকে বোঝাতে হবে তাদের। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ঈদে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এতে প্রমাণ হয়, সড়কে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। দুর্ঘটনায় যেসব মানুষ মারা যাচ্ছে, এর জন্য সড়কসংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। বিশেষ করে বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ, সর্বোপরি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের দায় এড়াতে পারে না।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদের আগে-পরে ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ১২ দিনে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭৪টি। এতে ৩১১ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৫৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৫৮টি। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে ১২৩ জনের। গত ঈদে সড়কে প্রাণ গেছে ২৩৫ জনের।

নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা না কমার কারণ প্রসঙ্গে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও গণপরিবহন—কোনো কিছুতেই শৃঙ্খলা নেই। আইনকানুন, নীতি কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না সড়কে। সারা দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ছড়াছড়ি। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা। এই বিষয়ে বিআরটিএর কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি না।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানের মতে, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার ভারসাম্য না থাকার কারণে বিভিন্ন সংকট তৈরি হচ্ছে; যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হচ্ছে আনফিট গাড়ি। আবার হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে অনেক চালক বাস চালাচ্ছেন। এসব বিষয়ে বিআরটিএর কোনো চিন্তা নেই। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সড়ক ব্যবস্থাপনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সচিব আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘সবগুলো দুর্ঘটনার কেস স্টাডি করছি। কী কারণে দুর্ঘটনাগুলো হলো, সেগুলো আপনাদের সামনে প্রকাশ করা হবে। আমরা দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কাজ করছি। মন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন থেকে সারা বছর, সারা সপ্তাহ, সারা দিন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করব। আমরা গার্মেন্টসের মালিকদের বলেছিলাম ছুটিগুলো ভাগ করে দিতে। সেটি করা হয়নি। ঈদের সময় এত মানুষ ঢাকা থেকে বের হওয়ার ট্রান্সপোর্টও আমাদের নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় না করার অনুরোধ মহাপরিচালকের, ক্ষোভ জানালেন মামুনুর রশীদ

আদালতের নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী চান বিচারকেরা

ইস্টার্ন রিফাইনারি: ১৮ কোটি টাকার কুলিং টাওয়ারের সবই নকল

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত