Ajker Patrika

মাঝিরঘাটে এখৃন দীর্ঘশ্বাস!

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
মাঝিরঘাটে এখৃন দীর্ঘশ্বাস!

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে অনেকটাই জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট ও ফেরিঘাট এলাকা। ফলে ঘাটের ব্যবসায়ী, স্পিডবোট, লঞ্চচালক, মালিক ও ঘাটের শ্রমিকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। সেতু উদ্বোধনের এক মাসের বেশি সময় ঘাটের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই মন্থর। বন্ধের পথে মাঝিরঘাটের হাজারো মানুষের আয়-রোজগারের পথ।

গতকাল শুক্রবার মাঝিরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে জমজমাট থাকা ঘাট এখন জনশূন্য। অনেক খাবার হোটেলের মালিক দোকানঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকেই আবার রেস্টুরেন্ট অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। অধিকাংশ ফল, ও ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধ। লঞ্চ, স্পিডবোট আর ফেরির পরিচিত শব্দ এখন আর পাওয়া যায় না।

বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় দুশ্চিন্তায় ঘাট ব্যবসায়ী, স্পিডবোট ও লঞ্চমালিক-শ্রমিকেরা। বেকার হয়ে পড়া এসব মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করে পুনর্বাসনের দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।

ঘাট ইজারাদার ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝির ঘাটে ১৭টি খাবারের হোটেল, ১২টি ফলের দোকান ও ২৯টি চায়ের দোকানসহ ১৮৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। মাঝিরঘাট-শিমুলিয়া নৌপথে ২০টি লঞ্চ ও ৮৪টি স্পিডবোট চলাচল করত। এ ছাড়া নিয়মিত ৮টি ফেরিতে পারাপার হতো যানবাহন। এসব লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিঘাটে এক হাজারেরও অধিক মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। লঞ্চে টোল আদায়, ফেরিওয়ালা, মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজে সম্পৃক্ত ছিল আরও দুই শতাধিক মানুষ। পদ্মা সেতু চালুর ফলে এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে ঘাটনির্ভর এই মানুষগুলো।

মাঝিরঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ঘাটে হোটেল ব্যবসা করি। আমার দোকানে কর্মচারী ছিল ১৭ জন। দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। কর্মচারী ও সব খরচ বাদে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ থাকত। এখন ঘাটে লঞ্চ, বোট কিছুই নেই। মানুষ আসে না, বিক্রি বন্ধ। আজ সারা দিনে ১ হাজার টাকা বিক্রি হইছে। কর্মচারী ১৫ জন বিদায় দিছি। এখন দেখছি ব্যবসাই বন্ধ হইয়া যাইব। কী কাজ কইরা খামু ভাবতে পারছি না।’

ফল ব্যবসায়ী শাহজালাল বলেন, ‘ঘাটে বিক্রি ভালো ছিল। আমি নিজেই ৩০-৩৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতাম। এক মাস ধরে ঘাটে মানুষ নেই। কয়েকজন ফলের দোকান বন্ধ কইরা অন্য কামে চইলা গেছে। আমি কী করুম ভাবতাছি। সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা কইরা দিলে বাঁচতে পারতাম।’

নাওডোবার আলামিন ১২ বছর ধরে যাত্রীদের মালামাল লঞ্চ থেকে ওঠানো-নামানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। অন্য সবার মতোই সেতু উদ্বোধনে খুশি তিনি। তবে নিজের ও পরিবারের একমাত্র রোজগারের পথ নিয়ে চিন্তিত আলামিন বলেন, কুলিগিরি কইরা সংসার চালাই। কামাই করার মতোন আর কেউ নাই। লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে কী করমু কইতে পারি না।’

লঞ্চমালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, যৌথ মালিকানায় আমার ৭টি লঞ্চ রয়েছে। এসব লঞ্চে ৪৯ জন শ্রমিক কাজ করে। একেকটি লঞ্চে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার টাকা করে আয় হয়। প্রতিটি লঞ্চের সর্বনিম্ন মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সংসার চলবে কী করে। শুধু লঞ্চমালিকেরাই নন, বিপদে পড়েছেন লঞ্চের কেরানি, সুকানিসহ অন্যান্য কর্মচারীও। 
মাঝিরঘাটের ইজারাদার মোখলেছ মাদবর বলেন, লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার মানুষ পারাপার হয়। লঞ্চঘাটকে কেন্দ্র করে মাঝিরঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় 
অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঘাটটিতে চলাচল করা লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সবাই বেকার হওয়ার পথে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত