বিভুরঞ্জন সরকার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। বিএনপির মতো একটি জনসমর্থন থাকা বড় দল নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে সেই নির্বাচন কীভাবে অংশগ্রহণমূলক হবে, সে প্রশ্নও আছে। আবার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিই বা কীভাবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে টিকে থাকবে, সেটাও অনেকের জিজ্ঞাসা।
বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে কেউ কেউ আশা করলেও তা আর হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিএনপি আন্দোলনে থাকার কৌশলে অনড় থাকছে। বিএনপিসহ অন্য যারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের স্বপ্নে মশগুল হয়ে দিন-তারিখও নির্ধারণ করেছিল, তাদের এখন ‘কূল নাই, কিনার নাই’ অবস্থা। ‘একতরফা’ নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট না কমিয়ে বাড়াবে বলে আশঙ্কা থাকলেও এখন বোধ হয় অন্য কোনো বিকল্প নেই। এখন শুধু এটাই বলা যায় যে ৭ জানুয়ারি দেশে একটি নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে নতুন রেকর্ড গড়বে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে আওয়ামী লীগ এবার কৌশল বদল করেছে। এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে হবে তার আলামত এখনই লক্ষ করা যাচ্ছে। এবার আর কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোনো হস্তক্ষেপ হবে না। ২৬ নভেম্বর গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে না আসতে পারে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এ জন্য কেউ যেন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কিংবা প্রচারকাজে বাধা না দেয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের কারণে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে কি না, সে প্রশ্নটিও এখনই সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ লড়াই হওয়ার আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। সে জন্য মনোনয়ন পেয়েও কোনো কোনো প্রার্থী উল্লসিত না হয়ে উল্টো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ইতিমধ্যে যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেই সব দলের নেতারাও চিন্তামুক্ত নেই। এটা অনেকের জানা যে ছোট দলের বড় নেতাদের বেশির ভাগেরই নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা নেই। কারও আবার এলাকা থাকলেও সেখানে হয়তো আরও এক বা একাধিক জনপ্রিয় নেতা আছেন। ফলে কোনো কোনো জাতীয় নেতা আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া নিজস্ব জনপ্রিয়তায় বিজয়ী হয়ে আসার আশা করেন বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ আসন ছাড় বা সমঝোতা নিশ্চয়ই করবে। কিন্তু কতটি আসনে এই ছাড় দেওয়া হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ৭০-৮০ আসনে ছাড় দিতে পারে।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁরা ভোটে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তা ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পেয়েই দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সংসদকে কার্যকর করতে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন; তাই এসব দলের শীর্ষ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন সহজে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার আশায় আছেন সবাই।
২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিল আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিকল্পধারাও ছিল। সেই নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করেই অংশ নেয় জোট শরিকেরা। ওই সব দলের নেতারা যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেসব আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা জোটের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন। বেশির ভাগ আসনে শরিকেরা বিজয়ী হন।
এবার শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সোমবার ২৮৯টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। আগের দিন রোববার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৮১টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। আর ৩০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ওয়ার্কার্স পার্টি। পৃথকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশন। এ ছাড়া বিকল্পধারাও আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কল্যাণ পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল।
নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে ১০টি রাজনৈতিক দল। এগুলো হলো: জাতীয় পার্টির একটি অংশ (রওশন এরশাদ), জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশের সাম্যবাদী
দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও তরীকত ফেডারেশন।
জোট ও মহাজোটের শীর্ষ নেতাদের যাঁরা এমপি আছেন, তাঁদের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানকে। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে মোহিত উর রহমান শান্তকে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসন কিশোরগঞ্জ-৩। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে নাসিরুল ইসলাম খানকে। কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সানজিদা খানম।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী করা হয়েছে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে একসময়ের তুখোড় আমলা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের মাহি বি চৌধুরীর মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জোটের অন্যান্য নেতা যাঁরা বর্তমানে এমপি, তাঁদের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
অবশ্য সমঝোতা হলে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ! দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা প্রতিবারই জোটবদ্ধ নির্বাচন করি। ২০০৮ সালেও করেছি। তখনো ৩০০ আসনে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল; পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০১৮ সালেও প্রায় সব আসনে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল, পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এবার কোন জায়গায় কীভাবে হবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি। সে জন্য আমরা ২৯৮টি আসনে নমিনেশন দিয়েছি। পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আমরা ১৪-দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচন করব। এ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে যদি সমন্বয় করতে হয়, সেটিও করা হবে। অতীতেও করা হয়েছিল।’
১৪-দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমের কাছে আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার কথাই বলেছেন। শিগগির ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল, বিএনপি থেকে প্রভাবশালী কেউ কেউ এই নতুন দল দুটিতে যোগ দেবেন। চমকের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চমক দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ তৃণমূল বিএনপির কোনো নেতার জন্য আসন ছাড়বে কি না, তা জানা যায়নি। তবে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তৃণমূল বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। সরকারকে মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করব।’ তিনি নিজে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী নৌকার প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব।
নির্বাচনের আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারাতে চেয়েছে বিএনপি। কিন্তু এ পর্যন্ত যে অবস্থা, তাতে এটা স্পষ্ট যে বিএনপিই হেরেছে। এখন যাঁরা মনে করছেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় গেলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে তা, সামাল দেওয়া সহজ কাজ হবে না, তাঁরা শেখ হাসিনার দক্ষতার অবমূল্যায়ন করেন। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সময়কালে রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অতীতে কখনো ফলতে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখার অদ্ভুত এক দক্ষতা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। দেখা যাক, এবার কী হয়!
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। বিএনপির মতো একটি জনসমর্থন থাকা বড় দল নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে সেই নির্বাচন কীভাবে অংশগ্রহণমূলক হবে, সে প্রশ্নও আছে। আবার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিই বা কীভাবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে টিকে থাকবে, সেটাও অনেকের জিজ্ঞাসা।
বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে কেউ কেউ আশা করলেও তা আর হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিএনপি আন্দোলনে থাকার কৌশলে অনড় থাকছে। বিএনপিসহ অন্য যারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের স্বপ্নে মশগুল হয়ে দিন-তারিখও নির্ধারণ করেছিল, তাদের এখন ‘কূল নাই, কিনার নাই’ অবস্থা। ‘একতরফা’ নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট না কমিয়ে বাড়াবে বলে আশঙ্কা থাকলেও এখন বোধ হয় অন্য কোনো বিকল্প নেই। এখন শুধু এটাই বলা যায় যে ৭ জানুয়ারি দেশে একটি নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে নতুন রেকর্ড গড়বে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে আওয়ামী লীগ এবার কৌশল বদল করেছে। এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে হবে তার আলামত এখনই লক্ষ করা যাচ্ছে। এবার আর কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোনো হস্তক্ষেপ হবে না। ২৬ নভেম্বর গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে না আসতে পারে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এ জন্য কেউ যেন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কিংবা প্রচারকাজে বাধা না দেয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের কারণে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে কি না, সে প্রশ্নটিও এখনই সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ লড়াই হওয়ার আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। সে জন্য মনোনয়ন পেয়েও কোনো কোনো প্রার্থী উল্লসিত না হয়ে উল্টো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ইতিমধ্যে যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেই সব দলের নেতারাও চিন্তামুক্ত নেই। এটা অনেকের জানা যে ছোট দলের বড় নেতাদের বেশির ভাগেরই নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা নেই। কারও আবার এলাকা থাকলেও সেখানে হয়তো আরও এক বা একাধিক জনপ্রিয় নেতা আছেন। ফলে কোনো কোনো জাতীয় নেতা আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া নিজস্ব জনপ্রিয়তায় বিজয়ী হয়ে আসার আশা করেন বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ আসন ছাড় বা সমঝোতা নিশ্চয়ই করবে। কিন্তু কতটি আসনে এই ছাড় দেওয়া হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ৭০-৮০ আসনে ছাড় দিতে পারে।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁরা ভোটে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তা ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পেয়েই দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সংসদকে কার্যকর করতে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন; তাই এসব দলের শীর্ষ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন সহজে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার আশায় আছেন সবাই।
২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিল আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিকল্পধারাও ছিল। সেই নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করেই অংশ নেয় জোট শরিকেরা। ওই সব দলের নেতারা যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেসব আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা জোটের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন। বেশির ভাগ আসনে শরিকেরা বিজয়ী হন।
এবার শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সোমবার ২৮৯টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। আগের দিন রোববার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৮১টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। আর ৩০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ওয়ার্কার্স পার্টি। পৃথকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশন। এ ছাড়া বিকল্পধারাও আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কল্যাণ পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল।
নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে ১০টি রাজনৈতিক দল। এগুলো হলো: জাতীয় পার্টির একটি অংশ (রওশন এরশাদ), জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশের সাম্যবাদী
দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও তরীকত ফেডারেশন।
জোট ও মহাজোটের শীর্ষ নেতাদের যাঁরা এমপি আছেন, তাঁদের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানকে। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে মোহিত উর রহমান শান্তকে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসন কিশোরগঞ্জ-৩। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে নাসিরুল ইসলাম খানকে। কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সানজিদা খানম।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী করা হয়েছে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে একসময়ের তুখোড় আমলা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের মাহি বি চৌধুরীর মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জোটের অন্যান্য নেতা যাঁরা বর্তমানে এমপি, তাঁদের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
অবশ্য সমঝোতা হলে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ! দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা প্রতিবারই জোটবদ্ধ নির্বাচন করি। ২০০৮ সালেও করেছি। তখনো ৩০০ আসনে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল; পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০১৮ সালেও প্রায় সব আসনে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল, পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এবার কোন জায়গায় কীভাবে হবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি। সে জন্য আমরা ২৯৮টি আসনে নমিনেশন দিয়েছি। পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আমরা ১৪-দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচন করব। এ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে যদি সমন্বয় করতে হয়, সেটিও করা হবে। অতীতেও করা হয়েছিল।’
১৪-দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমের কাছে আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার কথাই বলেছেন। শিগগির ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল, বিএনপি থেকে প্রভাবশালী কেউ কেউ এই নতুন দল দুটিতে যোগ দেবেন। চমকের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চমক দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ তৃণমূল বিএনপির কোনো নেতার জন্য আসন ছাড়বে কি না, তা জানা যায়নি। তবে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তৃণমূল বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। সরকারকে মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করব।’ তিনি নিজে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী নৌকার প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব।
নির্বাচনের আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারাতে চেয়েছে বিএনপি। কিন্তু এ পর্যন্ত যে অবস্থা, তাতে এটা স্পষ্ট যে বিএনপিই হেরেছে। এখন যাঁরা মনে করছেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় গেলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে তা, সামাল দেওয়া সহজ কাজ হবে না, তাঁরা শেখ হাসিনার দক্ষতার অবমূল্যায়ন করেন। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সময়কালে রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অতীতে কখনো ফলতে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখার অদ্ভুত এক দক্ষতা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। দেখা যাক, এবার কী হয়!
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১০ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে