মহিউদ্দিন খান মোহন
১৯৭৩ সালে প্রখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান নির্মাণ করেছিলেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রটি। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সামাজিক পরিস্থিতি হয়তো তাঁকে উদ্বিগ্ন করে থাকবে। তাঁর কাছে হয়তো এটা মনে হয়েছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের আক্ষরিক অর্থেই মানুষ হয়ে উঠতে হবে।
আর সে জন্যই তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে সেই আহ্বান জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ দশক পরেও আমাদের সমাজের কতিপয় মানুষের কিছু কর্মকাণ্ডে যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো, আমরা কি মানুষ হয়েছি? কিংবা কবে আমরা মানুষ হব?
মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরের বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিপদগ্রস্ত মানুষের অসহায়ত্ব বা সময়-সুযোগের অপব্যবহার করে অনৈতিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হওয়া মানুষের কর্ম নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা আমাদের গোচরে আসে, তখন মনে হয় আমরা মানুষ পদবাচ্যের অযোগ্য হয়ে পড়েছি। ৪ এপ্রিল স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের সাতটি মার্কেট ও বিপণিবিতান। সেই অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের অন্তরাত্মা কেঁপে না উঠে পারেনি। আগুনের লেলিহান শিখা প্রায় ছয় হাজার ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বেকার হলো পাঁচ হাজার দোকানের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী।
সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের মজুত গড়ে তুলেছিলেন সর্বস্ব বিনিয়োগ করে। কর্মচারীরাও আশায় ছিলেন ঈদে বোনাস পাবেন। কিন্তু এক দিনেই সব শেষ। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি যখন ঘটছিল, ফায়ার সার্ভিস যখন আগুন নেভাতে গলদঘর্ম হচ্ছিল, সামরিক-বেসামরিক সব বাহিনী যখন আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছিল, ঠিক তখন একদল লোককে দেখা গেল ভিন্ন কাজে। আগুনের গ্রাস থেকে যেসব মালামাল দোকানি ও কর্মচারীরা বাইরে রাখছিলেন, একদল লোক সেগুলো লুটে নিয়ে যাচ্ছিল। এ দৃশ্য যাঁরা টিভির পর্দায় দেখেছেন, বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের বিপদের সময় মানুষ এমন বিবেকহীনের ভূমিকায় নামতে পারে, তা ভাবনারও অতীত। কিন্তু আমরা যেটা ভাবতে পারি না, কল্পনা করতে পারি না, আমাদের মতোই দেখতে কিছু মানুষ তা অবলীলায় করে ফেলতে পারে। নাট্যব্যক্তিত্ব ও কলাম লেখক মামুনুর রশীদ ‘রুচির দুর্ভিক্ষের’ কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। আসলে দুর্ভিক্ষ আজ সর্বত্র। বিবেকের দুর্ভিক্ষ আজ আমাদের ভীষণভাবে পীড়িত করছে। এই দুর্ভিক্ষ কবে দূর হবে, কিংবা আদৌ দূর হবে কি না, আমরা জানি না। শুধু এটা জানি, যত দিন আমাদের বিবেক জাগ্রত না হবে, তত দিন এই সমাজ, এই রাষ্ট্র নিরুপদ্রব হবে না।
টিভির পর্দায় অগ্নিকাণ্ডের সরাসরি প্রচার দেখছিলাম। আকাশছোঁয়া আগুনের সর্বগ্রাসী শিখা সব ছাই করে দিচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল কয়েকটি পরিচিত মুখের কথা। আমার গ্রামের তোফায়েল আহমদ তপন, আবদুস সাত্তার, আবদুল হক, আনোয়ার, আমার ছেলের বন্ধু রাহাত, তাদের সবার দোকান ছিল ওই মার্কেটে।
সবাইকে ফোন করলাম। কারও ফোনে রিং হলো, ধরল না। কারও ফোন বন্ধ। অনেক চেষ্টার পর তপনকে পেলাম। সে বলল, ‘দাদা, আমার সব শেষ।’ মার্কেটটির দোতলায় বেশ বড় একটি শাড়ির দোকান ছিল ওর। কমপক্ষে ৬০-৭০ লাখ টাকার মালামাল ছিল ওর দোকানে। এমন ক্ষতিগ্রস্ত সবাই। সকাল ছয়টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেই লেগেছে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা। শুধু বঙ্গবাজার নয়, এর পাশের অ্যানেক্সকো টাওয়ার, ঢাকা মহানগর মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, মহানগর কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেটও রেহাই পায়নি আগুনের রাক্ষুসে থাবা থেকে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দোকানি-কর্মচারীদের সব স্বপ্ন। অনেক কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ এক লহমায় পরিণত হলো ভস্মে। যদিও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
খুব সকালে আগুনের সূত্রপাত হওয়ায়, মার্কেটে সে সময় কেউ ছিল না। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটারসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যে কমিটি ইতিমধ্যেই কারণ অনুসন্ধানে নেমে পড়েছে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে এ ঘটনাকে নাশকতা বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবাজার থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র এটি। তাঁরা আর কখনো হয়তো এখানকার দোকানে ফিরতে পারবেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ ঠিক নয়। তারপরও তদন্ত করে দেখা হবে এটা নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা।
(আজকের পত্রিকা, ৫ এপ্রিল, ২০২৩)বঙ্গবাজারের এ মার্কেটটির জন্ম ফুলবাড়িয়ার কেন্দ্রস্থলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই। তখন মার্কেটটির অবস্থান ছিল বর্তমানে বিআরটিসির নগর টার্মিনালসংলগ্ন সুন্দরবন সুপার মার্কেটের উত্তরে। আশির দশকে সেখানে পাকা মার্কেট তৈরি করে সিটি করপোরেশন। সে সময় সেখানকার ব্যবসায়ীদের মার্কেট নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে বর্তমান স্থানে তা স্থানান্তর করা হয়। পূর্বতন বঙ্গবাজার এখন বহুতলবিশিষ্ট মার্কেট। সেখানে আগের দোকানিরা দোকানও পেয়েছেন। কিন্তু নতুন বঙ্গবাজার তাঁরা আর ছেড়ে যাননি। ফলে দেখা যায়, যাঁরা আগের পাকা মার্কেটে দোকান পেয়েছেন, তাঁরা পুড়ে যাওয়া মার্কেটেও এক বা একাধিক দোকানের মালিক। তবে তাঁদের পাশাপাশি অনেক নতুন ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেখানে দোকান তুলে নিয়েছিলেন।
মার্কেটটি ছিল টিন ও কাঠের তৈরি। কাঁচা অবকাঠামোর ওপরে তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করেছিলেন কেউ কেউ। মার্কেটটি ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরু গলির মধ্যে ছোট ছোট খুপরি দোকান সারি সারি। গরমের সময় নিশ্বাস নেওয়াই কষ্টদায়ক। যাঁরা ওই মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে মার্কেটের কর্মকর্তাদের অন্তত ১০ বার সতর্ক করা হয়েছে অগ্নিঝুঁকি সম্পর্কে। কিন্তু তাঁরা তা আমলে নেননি। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, ভস্মীভূত মার্কেটের জায়গায় বহুতল পাকা মার্কেট নির্মাণ করবে সিটি করপোরেশন; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মার্কেট নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কী করবেন? তাঁরা কোথায় যাবেন? বিষয়টি নগর কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা উচিত।
আরেকটি বিষয় সবারই নজরে এসেছে। সেটা হলো আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত পানির অভাব। ঢাকা মহানগরীতে এমন কোনো জলাধার নেই যেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করা যায়। সেদিন বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টারযোগে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে ওপর থেকে আগুনের মধ্যে ফেলাকে হাস্যকর মনে হচ্ছিল। আমাদের নগর-পরিকল্পনাবিদেরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নগরপিতারাও বলেন নানা কথা। কিন্তু নগরীর বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষার বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আপৎকালীন পানির পাম্প স্থাপন করা থাকে। মাটির নিচে থাকে পানির বিশাল জলাধার; যা পুরো নগরীতে সংযুক্ত থাকে। আমরা তো এখন পাতালরেল বানাতে ব্যস্ত। তার আগে নগরীর রাস্তাগুলোর তলদেশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদকে সংযুক্ত করে প্রবহমান পানির একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় কি না, ভেবে দেখা উচিত। বিষয়টি রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার তাদের বিবেচনার ওপরই নির্ভর করে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
১৯৭৩ সালে প্রখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান নির্মাণ করেছিলেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রটি। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সামাজিক পরিস্থিতি হয়তো তাঁকে উদ্বিগ্ন করে থাকবে। তাঁর কাছে হয়তো এটা মনে হয়েছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের আক্ষরিক অর্থেই মানুষ হয়ে উঠতে হবে।
আর সে জন্যই তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে সেই আহ্বান জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ দশক পরেও আমাদের সমাজের কতিপয় মানুষের কিছু কর্মকাণ্ডে যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো, আমরা কি মানুষ হয়েছি? কিংবা কবে আমরা মানুষ হব?
মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরের বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিপদগ্রস্ত মানুষের অসহায়ত্ব বা সময়-সুযোগের অপব্যবহার করে অনৈতিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হওয়া মানুষের কর্ম নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা আমাদের গোচরে আসে, তখন মনে হয় আমরা মানুষ পদবাচ্যের অযোগ্য হয়ে পড়েছি। ৪ এপ্রিল স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের সাতটি মার্কেট ও বিপণিবিতান। সেই অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের অন্তরাত্মা কেঁপে না উঠে পারেনি। আগুনের লেলিহান শিখা প্রায় ছয় হাজার ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বেকার হলো পাঁচ হাজার দোকানের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী।
সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের মজুত গড়ে তুলেছিলেন সর্বস্ব বিনিয়োগ করে। কর্মচারীরাও আশায় ছিলেন ঈদে বোনাস পাবেন। কিন্তু এক দিনেই সব শেষ। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি যখন ঘটছিল, ফায়ার সার্ভিস যখন আগুন নেভাতে গলদঘর্ম হচ্ছিল, সামরিক-বেসামরিক সব বাহিনী যখন আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছিল, ঠিক তখন একদল লোককে দেখা গেল ভিন্ন কাজে। আগুনের গ্রাস থেকে যেসব মালামাল দোকানি ও কর্মচারীরা বাইরে রাখছিলেন, একদল লোক সেগুলো লুটে নিয়ে যাচ্ছিল। এ দৃশ্য যাঁরা টিভির পর্দায় দেখেছেন, বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের বিপদের সময় মানুষ এমন বিবেকহীনের ভূমিকায় নামতে পারে, তা ভাবনারও অতীত। কিন্তু আমরা যেটা ভাবতে পারি না, কল্পনা করতে পারি না, আমাদের মতোই দেখতে কিছু মানুষ তা অবলীলায় করে ফেলতে পারে। নাট্যব্যক্তিত্ব ও কলাম লেখক মামুনুর রশীদ ‘রুচির দুর্ভিক্ষের’ কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। আসলে দুর্ভিক্ষ আজ সর্বত্র। বিবেকের দুর্ভিক্ষ আজ আমাদের ভীষণভাবে পীড়িত করছে। এই দুর্ভিক্ষ কবে দূর হবে, কিংবা আদৌ দূর হবে কি না, আমরা জানি না। শুধু এটা জানি, যত দিন আমাদের বিবেক জাগ্রত না হবে, তত দিন এই সমাজ, এই রাষ্ট্র নিরুপদ্রব হবে না।
টিভির পর্দায় অগ্নিকাণ্ডের সরাসরি প্রচার দেখছিলাম। আকাশছোঁয়া আগুনের সর্বগ্রাসী শিখা সব ছাই করে দিচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল কয়েকটি পরিচিত মুখের কথা। আমার গ্রামের তোফায়েল আহমদ তপন, আবদুস সাত্তার, আবদুল হক, আনোয়ার, আমার ছেলের বন্ধু রাহাত, তাদের সবার দোকান ছিল ওই মার্কেটে।
সবাইকে ফোন করলাম। কারও ফোনে রিং হলো, ধরল না। কারও ফোন বন্ধ। অনেক চেষ্টার পর তপনকে পেলাম। সে বলল, ‘দাদা, আমার সব শেষ।’ মার্কেটটির দোতলায় বেশ বড় একটি শাড়ির দোকান ছিল ওর। কমপক্ষে ৬০-৭০ লাখ টাকার মালামাল ছিল ওর দোকানে। এমন ক্ষতিগ্রস্ত সবাই। সকাল ছয়টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেই লেগেছে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা। শুধু বঙ্গবাজার নয়, এর পাশের অ্যানেক্সকো টাওয়ার, ঢাকা মহানগর মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, মহানগর কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেটও রেহাই পায়নি আগুনের রাক্ষুসে থাবা থেকে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দোকানি-কর্মচারীদের সব স্বপ্ন। অনেক কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ এক লহমায় পরিণত হলো ভস্মে। যদিও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
খুব সকালে আগুনের সূত্রপাত হওয়ায়, মার্কেটে সে সময় কেউ ছিল না। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটারসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যে কমিটি ইতিমধ্যেই কারণ অনুসন্ধানে নেমে পড়েছে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে এ ঘটনাকে নাশকতা বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবাজার থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র এটি। তাঁরা আর কখনো হয়তো এখানকার দোকানে ফিরতে পারবেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ ঠিক নয়। তারপরও তদন্ত করে দেখা হবে এটা নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা।
(আজকের পত্রিকা, ৫ এপ্রিল, ২০২৩)বঙ্গবাজারের এ মার্কেটটির জন্ম ফুলবাড়িয়ার কেন্দ্রস্থলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই। তখন মার্কেটটির অবস্থান ছিল বর্তমানে বিআরটিসির নগর টার্মিনালসংলগ্ন সুন্দরবন সুপার মার্কেটের উত্তরে। আশির দশকে সেখানে পাকা মার্কেট তৈরি করে সিটি করপোরেশন। সে সময় সেখানকার ব্যবসায়ীদের মার্কেট নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে বর্তমান স্থানে তা স্থানান্তর করা হয়। পূর্বতন বঙ্গবাজার এখন বহুতলবিশিষ্ট মার্কেট। সেখানে আগের দোকানিরা দোকানও পেয়েছেন। কিন্তু নতুন বঙ্গবাজার তাঁরা আর ছেড়ে যাননি। ফলে দেখা যায়, যাঁরা আগের পাকা মার্কেটে দোকান পেয়েছেন, তাঁরা পুড়ে যাওয়া মার্কেটেও এক বা একাধিক দোকানের মালিক। তবে তাঁদের পাশাপাশি অনেক নতুন ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেখানে দোকান তুলে নিয়েছিলেন।
মার্কেটটি ছিল টিন ও কাঠের তৈরি। কাঁচা অবকাঠামোর ওপরে তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করেছিলেন কেউ কেউ। মার্কেটটি ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরু গলির মধ্যে ছোট ছোট খুপরি দোকান সারি সারি। গরমের সময় নিশ্বাস নেওয়াই কষ্টদায়ক। যাঁরা ওই মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে মার্কেটের কর্মকর্তাদের অন্তত ১০ বার সতর্ক করা হয়েছে অগ্নিঝুঁকি সম্পর্কে। কিন্তু তাঁরা তা আমলে নেননি। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, ভস্মীভূত মার্কেটের জায়গায় বহুতল পাকা মার্কেট নির্মাণ করবে সিটি করপোরেশন; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মার্কেট নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কী করবেন? তাঁরা কোথায় যাবেন? বিষয়টি নগর কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা উচিত।
আরেকটি বিষয় সবারই নজরে এসেছে। সেটা হলো আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত পানির অভাব। ঢাকা মহানগরীতে এমন কোনো জলাধার নেই যেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করা যায়। সেদিন বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টারযোগে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে ওপর থেকে আগুনের মধ্যে ফেলাকে হাস্যকর মনে হচ্ছিল। আমাদের নগর-পরিকল্পনাবিদেরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নগরপিতারাও বলেন নানা কথা। কিন্তু নগরীর বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষার বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আপৎকালীন পানির পাম্প স্থাপন করা থাকে। মাটির নিচে থাকে পানির বিশাল জলাধার; যা পুরো নগরীতে সংযুক্ত থাকে। আমরা তো এখন পাতালরেল বানাতে ব্যস্ত। তার আগে নগরীর রাস্তাগুলোর তলদেশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদকে সংযুক্ত করে প্রবহমান পানির একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় কি না, ভেবে দেখা উচিত। বিষয়টি রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার তাদের বিবেচনার ওপরই নির্ভর করে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে