শতবর্ষী মরা গাছ কাটতে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৩: ০৩

দুর্ঘটনা রোধে ঐতিহাসিক যশোর রোডের মারা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ গাছ জরুরি ভিত্তিতে কেটে ফেলার অনুরোধ জানিয়ে জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা প্রশাসন। তবে হাইকোর্টে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব গাছ কাটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে। ফলে ওই রিট আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাছগুলো এখনই কাটা হচ্ছে না বলে যশোর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এর আগে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শতবর্ষী এসব গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে আটকে যায়। সবশেষ ২০১৮ সালে এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন জমা পড়ে। তারপর বিষয়টি নিয়ে আর সামনে এগোয়নি যশোর জেলা পরিষদ।

জানা গেছে, রিট আবেদনের চার বছর পর গত ৩০ মে শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল এবং ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুল হক গাছ অপসারণ করার অনুরোধ জানিয়ে যশোর জেলা পরিষদের প্রশাসককে দুটি চিঠি পাঠান।

জেলা প্রশাসকের কাছে লেখা উপজেলা প্রশাসন দুটির পত্রে বলা হয়েছে, ‘যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুপাশে বেশ কিছু স্থানে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী মরা রেইনট্রি গাছ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এশিয়ান হাইওয়ে নামের এ মহাসড়ক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে।’

‘আম্ফানসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি গাছ মহাসড়কের পাশে পড়ে আছে। বিগত বছরগুলোতে উপড়ে পড়া এসব গাছ আজও অপসারণ করা হয়নি। এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাজিরালির মোড়, বেনেয়ালির বাজার, গদখালী বাজার, নবীনগর, চারাতলা, কলাগাছি, নাভারন পুরাতন বাজার ও শার্শা উপজেলার নাভারন সাতক্ষীরা মোড়, নাভারন নিউমার্কেট এলাকা, শার্শা বাজারের মতো জনসমাগম হয় এমন এলাকায় মরা গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনসহ এলাকার মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। জরুরি ভিত্তিতে গাছগুলো অপসারণ করা না হলে যেকোনো সময় বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমে ও ঝড়ের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

পরিবেশবাদীদের দাবি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যশোর রোড ঐতিহাসিক স্থান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনা থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত এ সড়ক ধরেই একাত্তরে লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। তাঁদের দুর্দশা দেখে যুক্তরাষ্ট্রের কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ রচনা করেন, যা সে সময় বিশ্ব মোড়লদের বিবেককে নাড়া দেয়। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এ সড়ক দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে শত্রুমুক্ত যশোরে পৌঁছান। এসব কারণে সড়কটি প্রশস্ত করার সময়েও শতবর্ষী গাছগুলো সংরক্ষণ করার দাবি জানায় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুপাশে ২ হাজার ৩১৩টি শতবর্ষী গাছ রয়েছে।

শার্শার ইউএনও নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ মরা গাছগুলো কিংবা ডাল অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময় ফোন কল আসে। সড়কটি সরকারের হাইওয়ে যশোর বিভাগের এবং গাছগুলো জেলা পরিষদের। তাই উপজেলা প্রশাসনের এখানে করণীয় কিছু থাকে না। তবু, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে জেলা পরিষদের কাছে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক মরা গাছগুলো ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল অপসারণের জন্য আবেদন করেছি।’

ঝিকরগাছার ইউএনও মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে মরা গাছগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় গাছের ডাল ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় মানুষসহ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকেরা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো জরুরি ভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করেছি।’

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেবা’-এর সভাপতি আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে মরে শুকিয়ে যাওয়া গাছের নিচে যাত্রীরা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। এসব গাছের ডাল পোকায় খেয়ে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব ডাল ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।’

যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ-জামান বলেন, ‘মারা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার জন্য শার্শা ও ঝিকরগাছা ইউএনওর চিঠি পেয়েছি। গাছগুলো না কাটার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত