কাঠের আগুনে শুঁটকি তৈরি, দুর্গন্ধে হাঁটা দায়

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২২, ০৬: ৫৬
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৪

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় কাঠ পুড়িয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানোয় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। দুর্গন্ধে ওই এলাকা দিয়ে হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া তৈরি করা শুঁটকি মাছ মানসম্মত না হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় তিন বছর ধরে লোকালয়ে রাস্তার ধারে এসব কাজ চললেও প্রশাসন নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া ও মাহেন্দ্রসিল গ্রামে সাতটি জায়গায় কাঠ জ্বালিয়ে চিংড়ি পোড়ানো হচ্ছে। সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী ও খাল থেকে ধরা ছোট–বড় চিংড়ি চাটাইয়ের ওপর রেখে নিচ থেকে কাঠে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন টন মাছ পোড়ানো হচ্ছে। পরে এসব মাছ শুঁটকি হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

উপজেলার আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের রাসেল সরদার বলেন, রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে কাঠ জ্বালিয়ে মাছ পোড়ানো হচ্ছে। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না।

মাহেন্দ্রসিল গ্রামের শরাফত হোসেন বলেন, ‘ইটভাটা করতে গেলেও তো ন্যূনতম অনুমতি লাগে। আর অবৈধভাবে এসব অপকর্ম চলছে এখানে। এলাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। অথচ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে।’

আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি অভিযুক্তদের এলাকা থেকে এসব সরাতে বলেছেন। তাঁরা তাঁর কথা শোনে না। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মাছ শুকানো পয়েন্টের মালিক অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তার পাশে হলেও খানিকটা ফাঁকা জায়গায় পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। আর এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় শুকানোর উপায় নেই। এলাকার লোকজনের চাপ রয়েছে। ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে এখান থেকে খুঁটি সরাব।’

জেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-ইলাহী বলেন, শুঁটকি আগে তৈরি হতো সাগর পাড়ে। এখন সেটা লোকালয়ে এসেছে। এসব মাছ প্রাকৃতিকভাবে শুকানো দরকার। তাহলে সেটা স্বাস্থ্যসম্মত হয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক হয় না। অথচ তা না করে কাঠ জ্বালিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কাঠ জ্বালিয়ে মাছ শুকানো ইটের ভাটায় যেমন ঝুঁকি তৈরি হয়, তার থেকেও বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ শুঁটকি তো মানুষ খাচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়েত বলেন, কাঠ ও মাছের সম্মিলিত ধোয়ায় স্থানীয়দের শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে। আর যে প্রক্রিয়ায় চিংড়ির শুঁটকি বানানো হচ্ছে, তাতে লিভারসহ পরিপাকতন্ত্রের ভয়াবহ ক্ষতি হবে।

জেলা প্রশাসক হুমায়ুন করিব বলেন, তাঁরা কোনোভাবেই কাঠ পোড়ানো সমর্থন করেন না। কাঠ পোড়ালে বনভূমি কমে যাবে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। কাঠ পুড়িয়ে মাছ শুকানো হচ্ছে, বিষয়টি গুরুতর। তাঁরা এসব উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত