সংস্কারের অভাবে সড়ক বেহাল, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০১

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো বড় শহরে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক। ৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ ব্যস্ততম সড়কে তিন বছর ধরে কোনো সংস্কারকাজ করা হচ্ছে না। ফলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া এ রাস্তায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

জেলার বিভিন্ন থানার মামলা থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে এই আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৬৪টি দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরেও অনেক দুর্ঘটনা থানাকে জানানো হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ ঢালাই দেবে এবং ফুলে নালার মতো হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে স্থানে স্থানে ভাঙা আর খানাখন্দে ভরা। এতে করে রাস্তাটি চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই সবাইকে চলাচল করতে হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। বেহাল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নিয়মিত চলাচল করা যাত্রীরা। খানাখন্দের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে যানবাহনেও দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কিশোরগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের বড়পুল থেকে কটিয়াদী উপজেলা অংশের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাঁক রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে পুলেরঘাট বাজার থেকে কটিয়াদী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে বাঁকের সংখ্যা ২৫টি, যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অন্তত সাতটি। গত তিন বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ ঘটেছে সড়কের বেহাল দশা ও অতিরিক্ত বাঁকের কারণে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাসড়কের সর্বশেষ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। ব্যয় হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এরপর কয়েক বছর শর্ত অনুযায়ী মেরামত কাজ চালিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন আর এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম বলেন, সড়কের যে অংশে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কে যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, উল্টো পথে যান চলাচল এবং তিন-চাকার নিষিদ্ধ যান অটোরিকশা ও ইজিবাইক অবাধে চলাচল করছে। আছে ফিটনেসবিহীন যান। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো, অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরবাইক চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে ওভারটেকিং ও রাস্তার ওপর গাড়ি পার্ক করে রাখার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

এ নিয়ে কথা হলে কিশোরগঞ্জ বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতনতা বাড়াতে তাঁরা নিয়মিত সেমিনার করেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘দুর্ঘটনা রোধকল্পে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ড্রাইভারদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য বিষয়ে আইন প্রয়োগে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কগুলো সংস্কার, রোড সাইন স্থাপন, দুর্ঘটনার স্থান চিহ্নিত করে বিভাজক তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত