চাষে ফিরছে গরু-কাঠের লাঙল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৩৭
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৪: ০০

ধান উৎপাদনে অন্যতম জেলা সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। অব্যাহতভাবে সার ও তেলের দাম বাড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এ দুই জেলার চাষিদের কপালে। বিশেষ করে ইউরিয়া সারের পর এবার ডিজেল ও কেরোসিনের মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়ায় ধান উৎপাদনে খরচ দ্বিগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। এ অবস্থায় কলের লাঙলের বদলে কৃষকেরা আবার গরু ও কাঠের লাঙল দিয়ে চাষাবাদ শুরু করার চিন্তা করছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সুনামগঞ্জ : ‘একসময় আমরা গরু দিয়া চাষ করছি। তবে যুগ বদলাইছে। মেশিন দিয়াই সব জমিন চাষ করা শুরু করছিলাম। কিন্তু আজকা যে তেলের দাম এত বাড়ছে, এই দামে তেল কিন্না চাষ করলে আমরার কুনু লাভ ওইতো না। এই অবস্থায় আমরার পক্ষে গৃহস্থি (চাষাবাদ) করা সম্ভব ওই না। এখন আবারও গরু দিয়াই চাষাবাদ শুরু করণ লাগব।’

গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের কৃষক কফিল উদ্দিন।

অপর এক কৃষক আব্বাস আলী বলেন, ‘তেলের যে দাম বাড়ছে, এই দামে আমরার মতো ছোটখাটো কৃষকেরা মেশিন দিয়া চাষাবাদ করা সম্ভব না। ওখন আমরা গরু দিয়াই চাষাবাদ করমু।’

শুধু কফিল উদ্দিন কিংবা আব্বাস আলীই নন, জ্বালানি তেলের দামের রেকর্ড বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদে এখন গরুর ওপরই ভরসার কথা জানিয়েছেন অনেক কৃষক।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর দক্ষিণপাড়ার কৃষক ছাদিক মিয়া বলেন, ‘২০০৮ সালের পর থাইকা আমরা শান্তিতেই কৃষিকাজ করছিলাম। কিন্তু ২০২২ সালে একটার পর একটা বিপর্যয়ে আমরা কৃষকেরা দিশেহারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার বন্যায় ঘরের সব ধান ভাসাইয়া নিয়া গেছে। এরপর শুরু করছিলাম আমন চাষ। আজকা শুনি তেলের দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় আমরা বাঁচমু কেমনে। সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু ধানের আমরা ন্যায্য দাম পাই না।’

উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, ‘এই দামে তেল কিন্না চাষাবাদ করলে আমরা কৃষকেরা আর চলতাম পারতাম না। এখন সরকার কৃষকদের কথা চিন্তা কইরা ডিজেলের দাম কমাইলে আমরা কৃষক বাঁচতাম পারমু।’

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাব কৃষকদের কথা চিন্তা করে অন্তত ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।’

হবিগঞ্জ: জেলার চাষিরা বলছেন, গেল কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে সার ও কীটনাশকের দাম। সবশেষ ১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এর ফলে কৃষককে প্রতি কেজি সার ১৬ টাকার পরিবর্তে কিনতে হচ্ছে ২২ টাকায়। শতকরা হিসেবে এই বৃদ্ধি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

সারের দাম বাড়ায় সপ্তাহের মধ্যেই কৃষিতে বড় ধাক্কা এল জ্বালানিতে। ৫ আগস্ট কৃষি কাজের সবচেয়ে বেশি দরকারি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ফলে ৬ আগস্ট রাত ১২টা থেকে লিটার প্রতি ৮০ টাকার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়। শতকরা হিসেবে এই বৃদ্ধি ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বানিয়াচং উপজেলার কৃষক আফতাব হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই ধান চাষ করে আমরা আর লাভবান হতে পারি না। তার ওপর সারের ও ডিজেল-কেরোসিনের দাম প্রায় ডবল করা হয়েছে। এভাবে হলে আমরা বাঁচব কীভাবে। সার এবং ডিজেল-কেরোসিনের দাম না কমলে আগামী বছর ধানের দাম হতে হবে দুই হাজার টাকা মণ। তা না হলে আমাদের কৃষি কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।’

চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী গ্রামের চাষি মধু মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর সেচের জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এ বছর দিনের পর দিন বিদ্যুৎ পাওয়া যাইতেছে না। যে কারণে ডিজেল দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক দিনের খড়ায় জমিতে সেচও বেশি লাগতেছে। এখন যেভাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হইছে-খেত করতাম না পতিত রাইখা দিতাম চিন্তা করতেছি। খেত কইরাত লস ছাড়া লাভ হইত না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২২০ হেক্টর। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে দেড় হাজার হেক্টর।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত