রোগীদের দায়সারা সেবা দিয়ে পাঠানো হয় ক্লিনিকে

সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ৫৭

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের দায়সারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শহরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া রোগীদের হয়রানি এবং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার জনসাধারণ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসা ৫০ শয্যার সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ কারণে প্রতিদিন অস্ত্রোপচার, ডায়রিয়া, দুর্ঘটনায় হতাহতসহ গরিব ও অসহায় রোগীরা আসে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না করে বেশির ভাগ রোগীকে দায়সারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় শ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের জ্বর মাপা, প্রেশার মাপা, চোখের রং এবং জিহ্বা—কোনোটাই না দেখে সব রোগীকেই প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, অ্যান্টাসিড আর ভিটামিন লিখে বিদায় করে দেন ডাক্তাররা। আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সঠিক চিকিৎসার পরিবর্তে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

অতিরিক্ত কাশি আর বুকের ব্যথা নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা যোগীপাড়া গ্রামের আমেলা বেওয়া (৬৫) বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার ফারজানা আক্তার চিকিৎসাসেবা না দিয়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন।’ এ সময় বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বারেক মিয়া, দুলু মিয়া, সামাদসহ আরও অনেকে ডাক্তারদের দুর্ব্যবহারের কথা জানান।

চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ওষুধ-সংকট, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতি মানুষ আস্থা কমে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। তবু বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। অনেকেই আবার নিরুপায় হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। কেউ আবার চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছেন।

এদিকে চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে গত শনিবার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় পবনতাইড় গ্রামের মতিয়ার রহমান নিলু (৬৫) মারা যান বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ সময় রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলাই যায় না। তাঁদের আচরণে মনে হয়, তাঁরা যেন চিকিৎসক নন। কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য বেশি চাপ দিলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তদারকি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় আজ এই অবস্থা।’

চিকিৎসাসেবার নাজুক অবস্থার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি এর সদুত্তর না দিয়ে বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো করার চেষ্টা করব।’

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ হেল মাফির সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত