Ajker Patrika

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‘আবেদন না’ করেই চাকরি

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ১৩: ২০
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে  ‘আবেদন না’ করেই চাকরি

কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বুরি) মেডিকেল অফিসার এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক নিরীক্ষার সময় এই অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। নিরীক্ষা দল মেডিকেল অফিসারের নথিতে তাঁর চাকরির আবেদনের কপি, আবেদনের বিপরীতে পরিশোধিত পে-অর্ডারের কপি খুঁজে পায়নি। এমনকি নথিতে সংরক্ষিত প্রবেশপত্রেও প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন কর্মকর্তার (মহাপরিচালক) স্বাক্ষরে গরমিল রয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ, বিজ্ঞান, তথ্য এবং প্রযুক্তি অডিট অধিদপ্তর বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক কার্যক্রম নিরীক্ষা (২০২২-২৩ অর্থবছর) করার সময় এই জালিয়াতি দেখতে পায়। গত বছরের ২ নভেম্বর অডিট অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলামের দেওয়া অডিট মেমোতে দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী আবেদন না করা সত্ত্বেও জালিয়াতির মাধ্যমে মেডিকেল অফিসার ফাতেমা রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফাতেমা ও প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের কাছে নিয়োগসংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে পাওয়া যায়নি। 

২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে একজন মেডিকেল অফিসার পদও ছিল। করোনার কারণে স্থগিত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২৭ ও ২৮ মে। 

নথি ঘেঁটে জানা গেছে, মেডিকেল অফিসার পদে ২৪ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই করে ২২ জনকে প্রবেশপত্র পাঠানো হয়। দুজনের আবেদনপত্র বাতিল করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র দুজন। তাঁদের একজন ফাতেমা (রোল নম্বর-৮০১) এবং অপরজন এ কিউ এম জিসানুর রহমান (রোল নম্বর-৮১৭)। পরীক্ষায় প্রথম হন ফাতেমা। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট তিনি যোগ দেন। 

শুরুতেই ফাতেমার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকার বাসিন্দা এ কিউ এম জিসানুর রহমান। ফাতেমার নিয়োগে ওঠা অনিয়মের বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এক বছর আগে তদন্ত শুরু করলেও মাঝপথে তা থেমে যায়। 

এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র ও নথি ঘেঁটে ফাতেমার দুটি আবেদনের কপি পাওয়া যায়। দুটি আবেদনে দুটি পে-অর্ডার নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। এই পে-অর্ডারগুলোও দুজন চাকরিপ্রার্থীর করা। একটি আবেদন ফরমে পে-অর্ডার নম্বর (ডিডিএ ৯৬২১৮৩১) সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, কলেজ গেট শাখা, ঢাকা এবং অপরটি একই ব্যাংকের ঢাকার বাজমে কাদেরিয়া শাখা থেকে করা হয়েছে (পে-অর্ডার নম্বর-৮০২৪৮৪৯)। এই দুই পে-অর্ডার করা চাকরিপ্রার্থীরা হলেন পাবনার ওয়াহেদুজ্জামান এবং টাঙ্গাইলের শামীম আহমেদ। অবশ্য শামীম বাদ পড়া দুজনের একজন।

ফাতেমার প্রবেশপত্রে রোল নম্বর ৮০১। কিন্তু একই রোল নম্বরে ২০২০ সালের ১১ মার্চ চিকিৎসক মো. ওয়াহেদুজ্জামানের কাছেও প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষা স্থগিত হয়। এর মধ্যেই ওয়াহেদুজ্জামান ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে কুমিল্লার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ফলে তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও তিন বছর পর পরীক্ষার ফলাফলে নিজের রোল নম্বর দেখে বিস্মিত তিনি।

নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ওয়াহেদুজ্জামানের অন্যত্র চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কৌশলে ৮০১ রোল নম্বরটি ওই নারী চিকিৎসককে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ পাওয়া মেডিকেল অফিসার ফাতেমা রহমান জালিয়াতির অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাকে বলার কী আছে।’
ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রনি আব্বাস হাওলাদার আবেদন ফরম যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আবেদন যাচাই-বাছাই করার সময় আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম।’ আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু শরীফ মো. মাহবুবই কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘মূলত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে আবেদনকারীদের কাগজপত্র আমি যাচাই-বাছাই করেছি।’

নিরীক্ষা দল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগেও অসংগতি পায়। গত ১৮ এপ্রিল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ফিজিক্যাল ও স্পেস ওশানোগ্রাফি বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপক লোধ, সুলতান আল নাহিয়ান ও মোহাম্মদ শাহীনুর রহমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নেই। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও ৬ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার অসংগতি ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালে তাঁরা নিয়োগ পান।

ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত