অবৈধ স্টোন ক্রাশার চলছেই

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩৩
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ০০

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই চলছে ২৩৮টি পাথর ভাঙার যন্ত্র (স্টোন ক্রাশার)। নীতিমালা ও ছাড়পত্র ছাড়াই প্রভাবশালীরা এ যন্ত্র স্থাপন করছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এর ফলে পরিবেশসহ আশপাশে বসবাসরতরা মারাত্বক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।

বেলার দেওয়া তথ্যমতে, পাথর ভাঙার যন্ত্র স্থাপন সংশোধিত নীতিমালা ২০১৩-তে বলা আছে, এটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করতে হবে। এর জন্য আলাদা অঞ্চল তৈরি করতে হবে। কিন্তু কোনো নীতিমালা ও ছাড়পত্র ছাড়াই প্রভাবশালীরা এ যন্ত্র স্থাপন করছে। ফলে পাথর ভাঙা যন্ত্রের আশপাশে বসতবাড়ির লোকজন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এ ছাড়াও এসব ক্রাশারের বিকট শব্দে এলাকায় শব্দ দূষণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেলার কর্মকর্তারা।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাথর ভাঙা যন্ত্র অবৈধ ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক এক সভা হয়। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবু সুফিয়ান এতে সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরে। এ সময় ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে পাথর ভাঙা যন্ত্র গ্রামাঞ্চলে যত্রতত্রভাবে বসিয়ে পরিবেশের ওপর মারাত্বক প্রভাব ফেলছে, এমনটি তুলে ধরা হয়।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে ও ছাড়পত্র ছাড়া ২৩৮টি পাথর ভাঙা যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৬টি, ছাতকে ১০০, তাহিরপুরে ৮৮ ও জামালগঞ্জে ২৪টি।

তবে এই সংখ্যা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সেমিনারে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। জামালগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী সেমিনারে তাঁর বক্তেব্যে বলেন, জামালগঞ্জে ২৪টি পাথর ভাঙা যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে শতাধিক অবৈধ পাথর ভাঙা যন্ত্র রয়েছে। পাথর ভাঙা যন্ত্রের মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কথা বলতে পারে না ভয়ে।

গণমাধ্যমকর্মী পংকজ দে বলেন, এ যন্ত্রগুওলোকে নির্দিষ্ট স্থানের ভেতর আনা হলে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে কম। এগুলো একটি নীতিমালার আওতায় আনা দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেশিন চলার সময় বেশ শব্দ হয়। এমন শব্দের মধ্যেই আমাদের থাকতে হচ্ছে। এই বিকট শব্দের কারণে শিশু-বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

বেলার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার বলেন, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় বিপুল সংখ্যক এই যন্ত্র রয়েছে। বেশির ভাগ যন্ত্র সুরমা নদীর তীরসংলগ্ন ও বসতভিটা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বসানো হয়েছে। কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। সমাজের একটি শ্রেণি লাভবান হলেও জনস্বাস্থ্য ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

পাথর ভাঙা যন্ত্রের অবৈধ ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জে ২৩৮টি নয়, আরও বেশি এই যন্ত্র হবে। তবে আমরা প্রথমে মালিকদের সচেতন করব। চেষ্টা করব একটা স্থানের মধ্যে এগুলোকে আনার। প্রথমে সচেতন করার পরও যদি কথা অমান্য করে, তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত