রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছেই

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২২, ০৫: ৫৭
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১০: ৩০

খুলনায় নির্মাণসামগ্রী রড-সিমেন্টের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রডের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। আর সিমেন্টের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ২০ টাকা। এ দাম বৃদ্ধির কারণে নির্মাণকাজ করছেন এমন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন।

রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় থমকে আছে খুলনা নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলছেন ঠিকাদারেরা।

নগরীর কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেডভিত্তিতে প্রতি কেজি রড ৮৯ থেকে ৯১ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল প্রতি কেজি ৮৫ টাকা। বহির্বিশ্বে রড তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রডের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ডাকবাংলো ফেরিঘাট মোড়ের আলী স্টিল করপোরেশনের ম্যানেজার মো. শহীদ বলেন, গত দেড় মাস রডের দাম ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং অফিসারেরা এসে দাম বৃদ্ধির কথা শোনান। গত সপ্তাহে যে রড তিনি ৮৪ টাকায় বিক্রি করেছেন আজ তা ৮৯ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ বলতে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করেছেন।

টুটপাড়া কবরখানা এলাকার আতিক স্টিল করপোরেশনের মালিক রফিক জানান, এ মাসের শুরুতে রড ও সিমেন্টের দাম স্থিতিশীল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ দুটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বকালের সর্বোচ্চ দাম চলছে বর্তমানে।

রড ও সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন বহির্বিশ্বে এ শিল্পের কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিবহনের জন্য জাহাজ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। আরও বাড়বে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএস খুলনার মার্কেটিং ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, দেড় মাস ধরে রডের দাম বাড়ছে। রড নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে স্ক্র্যাপ। এটি মূলত ইউরোপ থেকে আসে। বহির্বিশ্বে এ উপকরণটির দাম প্রচুর বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন তাদের তিন হাজার মেট্রিক টন রডের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে কতটা উৎপাদন হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। অস্থির হয়ে আছে রডের বাজার। তবে বেশি দিন এ বাজার স্থায়ী থাকবে না। গত দু’দিন তাদের ডিলার অর্ডার বন্ধ রেখেছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

খুলনা সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার মিজানুর রহমান টিংকু বলেন, তিনি নগরীর বয়রা বাজার এলাকার একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ করছিলেন। গত কয়েক দিন সেখানে কাজও করেছেন। রড ও সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির কারণে সেখানকার কাজ তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। এত উচ্চমূল্যে রড ও সিমেন্ট কিনে কাজ করতে গেলে তাঁর অনেক লস হবে। ব্যবসায়ীরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে রড ও সিমেন্টের দাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ হলো। এর আগের উৎপাদিত রডগুলো কোথায় গেল। তিনি আরও বলেন, রড-সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর কাজে লোকসান হবে।

এদিকে নগরীর বয়রা এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করছিলেন মো. ইউসুফ সরদার। রড-সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক সপ্তাহ তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের টাকায় তিন তলা বাড়ি নির্মাণ শুরু করছিলেন। কিন্তু রড সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ অনেক বেশি হবে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত